এতোকিছু থাকতেও ওয়ারী-ওয়ান্ডারার্স হওয়ার পথে ব্রাদার্স!
গত এক দশকের বেশি সময় ফুটবলাঙ্গনে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর সাবেক ফুটবলার ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের ম্যানেজার আমের খান। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী সদস্য হয়েও নিজ ক্লাব ও ক্লাবগুলোর স্বার্থ আদায়ে আগের মতোই সোচ্চার। বাফুফে সদস্য হয়ে ফেডারেশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এতটা প্রতিবাদী সাম্প্রতিক সময়ে অন্য কাউকে দেখা যায়নি। বাফুফের সিনিয়র-সহ সভাপতি ও লিগ কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী ৩০ এপ্রিল খেলা শুরুর বিষয় অনড় এবং ব্রাদার্সের দাবি বিবেচনার কথা বলে রাখেননি। আমের খান এর প্রতিবাদ করে গেলেও তার ক্লাব ব্রাদার্স ইউনিয়নও অনেকাংশে দায় এড়াতে পারে না।
ফুটবলার তৈরির সুতিকাগার ছিল ব্রাদার্স ইউনিয়ন। প্রিমিয়ার লিগের ক্যাম্প নিরবিচ্ছিন্নভাবে তো বটেই এর পাশাপাশি জুনিয়রদেরও বছরে কয়েক মাস অনুশীলনে রাখতো ব্রাদার্স। জাহিদ হাসান এমিলি, আতিকুর রহমান মিশু. জাহিদ হোসেনের মতো তারকা ফুটবলারদের হাতেখড়ি গোপীবাগের ক্লাব থেকেই। সেই ব্রাদার্স এখন প্রিমিয়ার লিগের ক্যাম্পই চালাতে হিমশিম খায়।
বিজ্ঞাপন
পেশাদার লিগ হলেও অপেশাদারিত্বের মতো প্রতি সিজনেই দুই-তিনটি ক্লাব লিগের মাঝ বিরতিতে ক্যাম্প বন্ধ করে দেয়। ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ব্রাদার্স ইউনিয়নও সেই দিকে হেটেছে। মধ্যবর্তী দলবদলের পর ৯ এপ্রিল থেকে খেলা শুরুর জন্য প্রস্তুতি নিলেও লকডাউনের সময় নিজেদের অসামর্থ্যতায় খেলোয়াড় ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় ক্লাবটি।
গত কয়েক বছর ধরেই ব্রাদার্সের রুগ্ন চিত্র তবে এই বছর তা অস্তিত্ব সংকটের কাছাকাছি পৌঁছায়। ১৫ ডিসেম্বর ছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দলবদলে খেলোয়াড় নিবন্ধনের শেষ দিন। বাফুফে ভবন থেকে ব্রাদার্স ক্লাবের দূরত্ব ১৫ মিনিট হাঁটা পথ। ব্রাদার্স তাদের খেলোয়াড়দের নাম জমা দিয়েছে নির্দিষ্ট সময়ের পর।
বিজ্ঞাপন
বিশেষ বিবেচনায় লিগ খেলার অনুমতি পেলেও প্রথম লেগ শেষে ১৩ দলের মধ্যে ব্রাদার্সের অবস্থান ছিল ১২ নম্বরে। ১৩ দলের মধ্যে দুই দল রেলিগেশনে যাবে। রেলিগেশন জোনে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি সংকটাপন্ন অবস্থার মধ্যেও অনুশীলন স্থগিত ছিল তিন সপ্তাহের বেশি সময়। এজন্যই দ্বিতীয় লেগ পেছানোর জোর দাবি করে আসছিল ক্লাবটি।
২০০৮ সাল থেকে সরাসরি ঢাকা আবাহনীর সঙ্গে সংযুক্ত বাফুফে কমিটিতে থাকা কর্মকর্তার সংখ্যা তিন। এবারের বাফুফে নির্বাচনে ব্রাদার্সেরও তিনজন কর্মকর্তা নির্বাচিত হয়েছেন। নিজেদের ক্লাবই যারা সঠিকভাবে পরিচালনায় ব্যর্থ তারা দেশের ফুটবল পরিচালনায় কতটুকু সফল হবেন প্রশ্ন উঠছে।
বাফুফে সহ-সভাপতি ও ব্রাদার্সের ডিরেক্টর ইনচার্জ মহিউদ্দিন আহমেদ মহী ক্লাবের এই সংকট সম্পর্কে বলেন, ‘গোপীবাগের মানুষের ভালোবাসায় এই ক্লাবের সৃষ্টি ও পরিচালনা। বাবলু ভাই, ওয়াসিম ভাই, সেলিম ভাইরা দেশের সেরা ফুটবলার ছিলেন। অর্থ ও খ্যাতির জন্য তারা আবাহনী-মোহামেডানে যাননি। মেধাবী ফুটবলারের পাশাপাশি এই এলাকায় সংগঠকও ছিলেন। এখন উভয় সংকটই। মেধাবী ফুটবলার যেমন নেই তেমনি ক্লাবকে সহায়তা করার লোকও খুব কম। অন্য ক্লাব থেকে অনেক দাম দিয়ে ফুটবলার আনার অবস্থা আমাদের এখন নেই। কয়েকজনের প্রচেষ্টায় ক্লাবটি চালিয়ে যাচ্ছি।’
কয়েক বছর আগে ক্লাব লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তিরত হলেও কর্মকান্ড গুটিকয়েক জনের মধ্যেই ‘লিমিটেড।’ রাজধানীর ইত্তেফাক মোড়ের মতো জায়গায় কয়েক বিঘার উপর ক্লাব টেন্ট। পাশেই বড় অনুশীলন মাঠ। যা পেশাদার লিগের অনেক ক্লাবেরই নেই। সেই মাঠে এখন অনুশীলন চলছে কোচ ছাড়াই। সর্বশেষ দুই ম্যাচে ট্যাকনিক্যাল এরিয়াতে দাঁড়িয়েছেন ক্লাবের পরিচালক ও ম্যানেজার আমের খান। যিনি আগে বাফুফে নির্বাহী সদস্যদের ডাগ আউটে থাকা না নিয়ে সোচ্চার ছিলেন আর এখন তিনিই ট্যাকনিক্যাল এরিয়াতে থাকছেন। নিজে বাধ্য হয়ে থাকলেও এই প্রক্রিয়া অবশ্য বন্ধ হওয়ারই পক্ষে আমের, ‘আমাদের কোচ লকডাউনের জন্য জার্মানি থেকে আসতে পারেননি। আমি ছাড়াও বাফুফের আরো অনেকেই (ঢাকা আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিত দাস রুপু, রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ) ক্লাবের হয়ে ডাগ আউটে থাকছেন। এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা হওয়া উচিত।’
১৪ ম্যাচে ব্রাদার্সের পয়েন্ট মাত্র পাঁচ। তাদের উপরে উত্তর বারিধারা ও মুক্তিযোদ্ধার পয়েন্ট ৯। এই দুই দলকে টপকানোর জন্য ব্রাদার্সের হাতে আর ম্যাচ রয়েছে দশটি। দশ ম্যাচে দ্বাদশ থেকে অবস্থার পরিবর্তন না হলে প্রিমিয়ার থেকে চ্যাম্পিয়নশীপ লিগে নেমে যেতে হবে ঐতিহ্যবাহী ব্রাদার্সকে। এক সময়ের দাপুটে ক্লাব ওয়ান্ডারার্স, ওয়ারীর সঙ্গী হবে তখন ১৯৮১ সালে আগাখান গোল্ডকাপ শিরোপা জয়ী দলটি। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে দেশের মাটিতে সেটিই ছিল কোনো ক্লাবের প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা জয়। ২০১৫ সালে ব্রাদার্সের সেই রেকর্ড ভেঙেছে চট্টগ্রাম আবাহনী।
এজেড/এটি