আগেরবার অনেকটা অভাবনীয় সাফল্যই পেয়েছিল পর্তুগাল। তবে এবারের ইউরোয় যখন শিরোপাধারী হয়ে মাঠে নামবেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোরা, তখন শিরোপা ধরে রাখার জোর দাবিদার হিসেবেই দেখা হবে তাদের। শুক্রবার ইউরোর জন্য ঘোষণা করা হয়েছে পর্তুগালের। সে দলে থাকা খেলোয়াড়দের মান আর স্কোয়াডের গভীরতা বিবেচনায় ইউরো শুরুর আগে অন্যতম ফেভারিট তকমাই দিয়ে দিচ্ছে রোনালদোদের।

রোনালদোর সাম্প্রতিক পারফর্ম্যান্স আশাজাগানিয়া নয়। তবে তার ক্যালিবার নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটা রীতিমতো অবান্তর। গেল বিশ্বকাপেই তো, স্পেনের বিপক্ষে হাইভোল্টেজ ম্যাচে করেছিলেন হ্যাটট্রিক, যে কীর্তি নেই তার প্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসিরও। কিন্তু এবার যখন তার সঙ্গে যোগ হবে ম্যানচেস্টার সিটির বের্নার্দো সিলভা কিংবা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ব্রুনো ফের্নান্দেজদের মতো বলের যোগানদাতারা, নিষ্কলুষ গোলস্কোরিং ক্ষমতাসম্পন্ন রোনালদোকে তখন আরও ভীতিজাগানিয়া ঠেকাটাই স্বাভাবিক।

দলটার সবচেয়ে বড় গুণ, আক্রমণভাগটা কেবলই রোনালদোনির্ভর নয়। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের তরুণ সেনসেশন জোয়াও ফেলিক্স আছেন, সঙ্গে আছেন লিভারপুলের তরুণ তুর্কি ডিয়োগো জোটা। আছেন আন্দ্রে সিলভা, বুন্ডেসলিগায় আইনট্র্যাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের হয়ে কাটিয়েছেন দারুণ এক মৌসুম, দলের সর্বোচ্চ গোলদাতাও ছিলেন তিনি। যার ফলে রোনালদোর খারাপ দিনে অন্তত গোলখরার দুশ্চিন্তা তাড়া করবে না কোচ ফের্নান্দো সান্তোসকে।

‘আক্রমণ আপনাকে ম্যাচ জেতায়, কিন্তু শিরোপা জেতায় রক্ষণ’-কথাটা যদি ফুটবলের ধ্রুব সত্য হয়, তাহলে এখানেও পর্তুগালকে রাখতে হবে হিসেবের খাতায় সবার ওপরেই। চলতি মৌসুমে রুবেন ডিয়াজের অন্তর্ভুক্তি ম্যানচেস্টার সিটিকে আবারও ফিরিয়ে দিয়েছে লিগ শিরোপা। পর্তুগাল রক্ষণে সবচেয়ে উজ্জ্বল নামটাও তাই থাকবে তারই। সঙ্গে আছেন তার সিটি সতীর্থ জোয়াও ক্যানসেলো, যিনি কাটাচ্ছেন ক্যারিয়ারেরই সেরা একটা মৌসুম। বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের খানিকটা আক্রমণমনস্ক ফুলব্যাক রাফায়েল গেরেরোও আছেন, সঙ্গে থাকবে পেপের অভিজ্ঞতা। সব মিলিয়ে তাদের রক্ষণও হতে যাচ্ছে বেশ আঁটসাঁট।

মাঝমাঠে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ব্রুনো তো থাকবেনই। সঙ্গে আছেন অভিজ্ঞ জোয়াও মুটিনিও, তার উলভারহ্যাম্পটন সতীর্থ রুবেন নেভেসও ডাক পেয়েছেন। সঙ্গে রেনাতো সানচেস ও উইলিয়াম কারভালইয়োর অন্তর্ভুক্তি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডেও পর্তুগালকে দিচ্ছে নির্ভরতার আশ্বাস।

তবে গ্রুপসঙ্গী হিসেবে যখন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স আর সাবেক বিশ্বজয়ী জার্মানি আছে, তখন এমন দল না গড়ে উপায় কী! শিরোপা রক্ষার মিশনটা আগামী ১৫ জুন শুরু হবে রোনালদোদের। হাঙ্গেরির বিপক্ষে গ্রুপ ‘এফ’-এর ম্যাচ দিয়ে ইউরো শুরুর পর আগামী ১৯ ও ২৫ জুন জার্মানি ও ফ্রান্সের বিপক্ষে বাকি দুই ম্যাচ খেলবে দলটি। এর আগে ইউরোর প্রস্তুতি হিসেবে স্পেন ও ইসরায়েলের বিপক্ষে আগামী ৪ ও ৯ জুন দুটো ম্যাচ খেলবে পর্তুগাল। 

ইউরোর জন্য পর্তুগালের ২৬ সদস্যের দল:
গোলরক্ষক: 
অ্যান্থনি লোপেজ (লিওঁ), রুই প্যাট্রিশিও (উলভস), রুই সিলভা (গ্রানাডা)।
ডিফেন্ডার: 
জোয়াও ক্যানসেলো (ম্যানচেস্টার সিটি), নেলসন সেমেডো (উলভস), জোসে ফন্তে (লিলে), পেপে (পোর্তো), রুবেন ডিয়াজ (ম্যানসিটি), নুনো মেন্দেজ (লিসবন), রাফায়েল গেরেরো (বরুসিয়া ডর্টমুন্ড)।
মিডফিল্ডার: 
দানিলো পেরেইরা (পিএসজি), জোয়াও পালহিনইয়া (লিসবন), রুবেন নেভেস (উলভস), ব্রুনো ফের্নান্দেজ (ম্যানইউ), জোয়াও মুটিনিও (উলভস), রেনাতো সানচেস (লিলে), সার্জিও অলিভিয়েরা (পোর্তো), উইলিয়াম কারভালইয়ো (রিয়াল বেটিস)। 
ফরোয়ার্ড: 
পেদ্রো গনকালভেস (লিসবন), আন্দ্রে সিলভা (আইনট্র্যাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট), বের্নার্দো সিলভা (ম্যানসিটি), ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (জুভেন্তাস), ডিয়োগো জোটা (লিভারপুল), গনকালো গেদেস (ভ্যালেন্সিয়া), জোয়াও ফেলিক্স (অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ), রাফা সিলভা (বেনফিকা)।

এনইউ