ফিন্যান্স নিয়ে বাফুফেতে অস্বস্তি
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) গত কয়েক বছর নানা সময়ে নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হয়েছে। এর সিংহভাগ আর্থিক কারণে। ফিফা বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদকসহ আরও তিন স্টাফকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল অর্থ সম্পর্কিত বিষয়ের জন্যই। সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীও ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ফিফা ফান্ড নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যয়ের সঠিক তদারকি করতে না পারায় শাস্তির মুখোমুখি হয়েছিলেন। তাই বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়াল ফিন্যান্স নিয়ে একটু বাড়তি সতর্ক।
গত ২৬ অক্টোবর বাফুফে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরে বেশ কয়েকটি স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত হয় ৯ নভেম্বর প্রথম কার্যনিবাহী কমিটির সভায়। যেখানে ফেডারেশন সভাপতি তাবিথ আউয়াল জাতীয় দল কমিটির পাশাপাশি ফিন্যান্স কমিটির দায়িত্ব নিজের কাছেই রাখেন। চেয়ারম্যান হওয়ার সাড়ে তিন মাস পর গত পরশু (বুধবার) ফিন্যান্স কমিটির প্রথম সভা করেছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
প্রথম সভায় আর্থিক পরিকল্পনা ও দিক নির্দেশনামূলক কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। ফেডারেশনের আয়-ব্যয়ের বিষয়গুলো বাফুফের ফিন্যান্স কমিটি সুনির্দিষ্ট ও গভীরভাবে জানতে চাইলে সেভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি ফিন্যান্স স্টাফরা। কমিটির সভায় থাকা একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে বলেন, ‘উচ্চ বিলাসী বাজেট, সেখানে আয়ের খাত সুনির্দিষ্ট নেই অথচ ব্যয়ের পরিমাণ অত্যধিক দেখানো হয়েছে। আরও কিছু বিষয়ে অসঙ্গতি-অপূর্ণতা রয়েছে। যা পরবর্তী সভার আগে ফিন্যান্স বিভাগকে পরিপূর্ণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপর আমরা একটি আর্থিক রোডম্যাপ করতে পারব।’
কাজী সালাউদ্দিন ও তার বিগত কমিটি বাফুফের নতুন কমিটির ওপর বড় ঋণের বোঝা রেখে গেছেন। সেসব ঋণের তালিকার মধ্যে কোনটি জরুরি বা দ্রুত পরিশোধযোগ্য সেটি প্রস্তুত নেই ফিন্যান্স বিভাগের। কোন খাতে আয়ের কত শতাংশ ব্যয় এটা সুনির্দিষ্টভাবে ওই বিভাগকে উল্লেখ করতে বলেছে ফিন্যান্স কমিটি। সভায় ব্যয়ের খাত নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। প্রতি মাসের ইউটিলিটি বিল দেখানো হয়েছে ৯ লাখ টাকা। বিশেষ করে বিদ্যুৎ বিল নাকি মাসে পাঁচ লাখের বেশি। সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতিদের কক্ষ মাসের বেশিরভাগ দিনই বন্ধ থাকে। সাধারণ সম্পাদক ও স্টাফদের ৬-৭টি রুম, কনফারেন্স রুম এবং চারতলায় নারী দলের ক্যাম্পে এত বিদ্যুৎ বিল কেন এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বাফুফে ভবন ছাড়াও কয়েকজন স্টাফ রয়েছেন জাতীয় স্টেডিয়ামে মহানগর লিগ কমিটির অফিসে। প্রথম-তৃতীয় বিভাগ লিগ আয়োজনের সঙ্গে এরা সম্পৃক্ত। সেই অফিসের একজন সিনিয়র স্টাফ কাশেমকে গত বছর জুনে এজিএমে সম্মাননা জানায় বাফুফে। ৩১ ডিসেম্বর তিনি অবসরে যান। অবসরে গেলেও তার সঙ্গে লিগ কমিটির হিসাব-নিকাশের বিষয় অসম্পূর্ণ। ফেডারেশন এখনও তার কাছ থেকে হিসাব নিতে পারেনি। তিনি হিসাব দিতে ‘অপারগতা প্রকাশ করেছেন’ এমন পত্রে স্বাক্ষর করেন লিগ কমিটির আরেকজন স্টাফ। ফলে সেই স্টাফের বেতন তিন মাস আটকে রেখেছে ফেডারেশনের ফিন্যান্স বিভাগ। একজনের জন্য আরেকজনের বেতন আটকে রাখা এবং অবসর প্রদানের আগেই সমস্যা সমাধান না করা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।
বাফুফের সাবেক প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেন ফিফা থেকে নিষিদ্ধ হয়েছেন। তার স্থলাষিভিক্ত হয়েছেন সরফরাজ। বয়সে তরুণ হলেও বাফুফে থেকে মাসে তিন লাখ টাকার বেশি সম্মানী গ্রহণ করেন তিনি। অ্যাকাউন্টস নিয়ে তার কয়েকটি ডিগ্রি থাকলেও ফুটবলের সঙ্গে তিনি সঠিকভাবে মানিয়ে নিতে পারছেন না বলে মনে করছেন নির্বাহী কমিটির অনেকে। কাজী সালাউদ্দিনের সর্বশেষ নির্বাহী কমিটির সভায় এজিএমের জন্য বাজেট পাস হয়নি। কারণ ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান ইমরুল হাসানের কাছে আগে এটি পাঠাননি প্রধান অর্থ কর্মকর্তা। শেষ পর্যন্ত এজিএমে বাজেট উঠলেও সেটা কাউন্সিলররা পাশ করেননি। বর্তমান ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান তাবিথ আউয়াল এখন পর্যন্ত প্রধান অর্থ কর্মকর্তার কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট নন বলে জানা গেছে বিভিন্ন সূত্রে।
বাফুফের প্রশাসনিক প্রধান সাধারণ সম্পাদক। প্রধান অর্থ কর্মকর্তা তার অধীনস্থ হলেও ফুটবল ফেডারেশনের খবর– উল্টো সাধারণ সম্পাদক তার নতজানু হয়ে চলেন। এজন্য ফিন্যান্স কমিটির সভায় অর্থ কর্মকর্তার পাশাপাশি সাধারণ সম্পাদকও কঠিন জেরার মুখে পড়েছিলেন।
ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। ডেপুটি চেয়ারম্যান সিনিয়র সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান। তিন সহ-সভাপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, ফাহাদ করিম ও সাব্বির আরেফ কমিটির অন্য তিন সদস্য। আরেক সহ-সভাপতি ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরি হ্যাপি অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটির চেয়ারম্যান হওয়ায় তিনি ফিন্যান্স কমিটিতে নেই। প্রথম সভায় ইমরুল হাসান ছাড়া অন্য চারজন উপস্থিত ছিলেন। রমজানের মধ্যে তাদের ব্যবসায়িক ও অন্য ব্যস্ততা রেখে সভায় আসলেও কোনো ফলপ্রসূ কিছু না হওয়ায় স্টাফদের কাজের প্রতি অবহেলাকে দায়ী করছেন অনেকে।
এজেড/এএইচএস