কয়েক দিন আগে দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাবের নবনির্বাচিত কমিটি কাজী সালাউদ্দিনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন/ঢাকাপোস্ট

দেশের ফুটবলের অন্যতম জীবন্ত কিংবদন্তী কাজী মোঃ সালাউদ্দিন ও আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু। সালাউদ্দিন ও চুন্নু উভয়েরই পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব থেকে। সালাউদ্দিনের স্বাধীনতার আগে ১৯৬৮ ও চুন্নুর ১৯৭৩ সালে । সালাউদ্দিন ১৯৬৮ সালে ১৪ গোল করে দিলকুশাকে দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে উঠালেও পরের বছর নিজে ওয়ারীতে যান । চুন্নু ১৯৭৩ সালে দিলকুশার হয়েই প্রথম বিভাগে খেলা শুরু করেন। 

চুন্নু ও সালাহউদ্দিন উভয়ের ক্যারিয়ারের স্বর্ণালী সময় ও সিংহভাগ আবাহনীতে কাটলেও দুই জনই তাদের ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠার পেছনে দিলকুশাকে বড় অবদান দিয়েছেন, ‘ফুটবল ক্যারিয়ারে প্রথম বছরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দিলকুশায় প্রথম বছরটি দারুণ কেটেছিল। এর পর পথ চলতে অসুবিধা হয়নি।’

সালাউদ্দিন ও চুন্নুর সেই দিলকুশা এখন আগের সেই অবস্থানে নেই। প্রিমিয়ার থেকে অবনমিত হয়েছে অনেক আগেই। ঘরোয়া ফুটবল কাঠামোতে দিলকুশার অবস্থান এখন তৃতীয় স্তরে। এখন সিনিয়র ডিভিশন লিগে আছে সালাহউদ্দিন-চুন্নুর সেই ক্লাব। 

সাংগঠনিক ব্যর্থতা ও অব্যবস্থাপনায় আগের ঐতিহ্যের এখন বড় দীর্ঘশ্বাস দিলকুশা। দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে উঠে ক্লাবটি যখন ‘মেরুদণ্ড’ সোজা করে দাড়াচ্ছিল তখনই ক্যাসিনো ঝড়ে আবারো গভীর সংকটে । ক্লাবের সভাপতি ( মমিনুল হক সাঈদ) পলাতক হওয়ায় অভিভাবকশুন্য ছিল ক্লাব।  সম্প্রতি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়েছে। তরুণ সংগঠক সৈয়দ রিয়াজুল করিম সভাপতি ও সালাহউদ্দিন রতন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত কমিটির বিরুদ্ধে অবশ্য একটি পক্ষ রয়েছে। তবে সেটা নিয়ে ভাবতে চান না নতুন সভাপতি সৈয়দ রিয়াজ, ‘আমরা সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে নির্বাচন কমিশনের অনুমোদনক্রমে নির্বাচিত। আমাদের একটাই লক্ষ এখন ক্লাবের ফুটবলের গৌরব ফিরিয়ে আনা।’ 

১৯৭৪ সালে প্রথম বিভাগ লিগে দিলকুশার নীলু সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। ওই বছরই স্বাধীনতার পর প্রথম ডাবল হ্যাটট্রিক করেছিলেন সালাউদ্দিন আবাহনীর হয়ে দিলকুশার বিরুদ্ধে। সালাউদ্দিন, চুন্নুর মতো কিংবদন্তি ছাড়াও অনেক জাতীয় তারকা ফুটবলারের জন্ম দিলকুশা থেকে। সেই হারানো জায়গা অতি সহজে ফিরে পাবে না দিলকুশা। তাই নতুন কমিটির প্রথম লক্ষ্য, ‘আমরা এখন সিনিয়র ডিভিশন রয়েছি । ভালো দল গড়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে চ্যাম্পিয়নশীপ লিগে খেলতে চাই।’ -বলেন সভাপতি। 

ক্লাবের নতুন সভাপতির ফুটবলাঙ্গনে আবির্ভাব গত বছর ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচনের আগে ফকিরেরপুল ইযংমেন্সের কর্মকর্তা হিসেবে। কাজী সালাউদ্দিনের প্যানেলে  ফুটবল ফেডারেশনে সদস্য নির্বাচনও করেছিলেন ফকিরেরপুল ক্লাবের কাউন্সিলর হিসেবে । এখন অবশ্য ফকিরেরপুল থেকে দুরে তিনি, ‘দল গঠনে যতটুকু প্রয়োজন সহায়তা করেছি। ক্লাবের বড় দায়িত্বে আরও অনেকে রয়েছেন তারা দেখবেন।’

ফেডারেশনগুলোর নির্বাচিত কমিটি চার বছর হলেও একেক ক্লাবের মেয়াদ একেক রকম। দিলকুশার নতুন কমিটির মেয়াদ ২০২৪ পর্যন্ত। চার বছর একেবারে কম সময় নয়। দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তর প্রিমিয়ার লিগ থেকে দুই ধাপ দুরে দিলকুশা আভ্যন্তরীণ সংকট উত্তরণ করে সালাহউদ্দিন-চুন্নুর আতুড়ঘরকে প্রিমিয়ারে ফেরাতে পারলেই হবে এই ক্লাব কমিটির আসল সফলতা। দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার সর্বোচ্চ পদে থেকে সালাউদ্দিন নিজের আমলে আতুড়ঘরকে আগের জায়গা দেখে যেতে পারেন কিনা সেটাও দেখার বিষয়। 

এজেড/এটি