ফুটবলের হেভিওয়েট কোচ পেপ গার্দিওলা। ম্যানচেস্টার সিটির স্প্যানিশ এই মাস্টারমাইন্ড ১০০০তম মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে। এমন ম্যাচে তার দল লিভারপুলের বিপক্ষে আজ (রোববার) ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলবে। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অলরেডরা এবার সেভাবে সুবিধা করতে পারছে না। শিরোপাহীন মৌসুম কাটানো সিটি অবশ্য এবার ঘুরে দাঁড়ানোর পথে আছে। দুই দলের সামনেই আজ পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে ওঠার সুযোগ আছে।

আন্তর্জাতিক বিরতিতে যাওয়ার আগে এটি দুই দলের শেষ ম্যাচ। ঘরের মাঠ ইতিহাদে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টায় আর্নে স্লটের লিভারপুলকে আতিথ্য দেবে সিটি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে দুই দল এখন পর্যন্ত ১৯৯ বার মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে অলরেডরা ৯৫ এবং সিটি জিতেছে ৫২ ম্যাচে। প্রিমিয়ার লিগেও দাপটটা লিভারপুলের, ৫৬ ম্যাচে তাদের জয় ২৩ এবং ড্র ২১। বাকি ১২ ম্যাচে জয় সিটির। অবশ্য সর্বশেষ ১২ ম্যাচের মাঝে গার্দিওলার দল আধিপত্য দেখিয়ে ১০ বার জিতেছে। বাকি দুই ম্যাচে একটি করে ড্র ও হার।

গার্দিওলা এদিন সিটির ডাগআউটে দাঁড়িয়ে ব্যক্তিগত এক মাইলফলক পূর্ণ করবেন। এর আগে স্প্যানিশ এই কিংবদন্তি কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন ২০০৭ সালে বার্সেলোনা ‘বি’ দলের দায়িত্ব নিয়ে। পুরো এই যাত্রায় ম্যানসিটির হয়ে ৫৪৯, বার্সেলোনায় ২৪৭, বায়ার্ন মিউনিখে ১৬১ এবং বার্সা ‘বি’ দলের হয়ে ৪২টি ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। ৯৯৯ ম্যাচের মধ্যে গার্দিওলার জয়ের হার–ই বেশি, ৭১৫ জয়ের বিপরীতে হার মাত্র ১২৮ ম্যাচে। একই সময়ে ৫৪ বছর বয়সী এই কোচ ৩টি চ্যাম্পিয়নস লিগসহ ৩৯টি শিরোপা জিতেছেন।

অবিশ্বাস্য এই যাত্রাপথ নিয়ে গার্দিওলা বলছেন, ‘আমি কত ম্যাচ জিতেছি তা ভাবছি না, কিন্তু যখন মাইলফলক হচ্ছে, তখন বুঝতে হবে আপনি কী করেছেন। কত জয়, কত গড়– সেসব শুধু প্রিমিয়ার লিগে নয়, চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও। বার্সেলোনায় দুর্দান্ত সময় কাটিয়েছি, একইভাবে বায়ার্ন মিউনিখ এবং এখানেও। অবশ্য এই অবস্থানে আসা সহজ নয়, যদি আবারও একইভাবে শুরু করি আমি পারব না, অনেক বেশি ম্যাচ। ১০০০ ম্যাচের তুলনায় অনেক কম হার, আশা করি রোববারও আমরা জয়ের ধারা ধরে রাখব।’

আর্নে স্লটের অলরেড শিবির এবার কিছুটা ব্যাকফুটে থাকলেও, ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সবশেষ ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাস সঞ্চার করেছে। তবে সিটির মাঠে যে কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে তাও জানেন লিভারপুল কোচ স্লট, ‘মৌসুমের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে সিটির মাঠে খেলা, অবশ্য প্রতিটি অ্যাওয়ে ম্যাচই কঠিন। বোধহয় সিটিও সেটা জানে, তারাও দুটি অ্যাওয়ে ম্যাচে হেরেছে। আসন্ন ম্যাচটি মজার হবে। তাদের বিপক্ষে ১০ বার খেলতে ১০টিই গ্রেট ম্যাচ হয়ে থাকে, যেখানে সময় কিংবা সুযোগ হারানোর মানে নেই।’

এদিকে, লিভারপুলকে সামলাতে হবে উড়ন্ত ফর্মে থাকা সিটির নরওয়েজীয় তারকা আর্লিং হালান্ডকে। ক্লাব এবং জাতীয় দলের হয়ে তিনি চলতি মৌসুমের এখন পর্যন্ত ১৭ ম্যাচে ২৭ গোল করে ফেলেছেন। প্রিমিয়ার লিগের ১০৭ ম্যাচে তার গোলসংখ্যা ৯৮টি। দুই বা তার বেশি গোল করলেই হালান্ড লিগটির ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম গোলের সেঞ্চুরি করে ফেলবেন। যে কীর্তি গড়তে অ্যালান শিয়েরারের লেগেছে ১২৪ ম্যাচ। তবে লিভারপুল বরাবরই হালান্ডের জন্য শক্ত প্রতিপক্ষ। তাদের বিপক্ষে ৮ ম্যাচে তার গোল মাত্র ৩টি। অন্তত আটবার মুখোমুখি হয়েছেন এমন দলের বিপক্ষে যা হালান্ডের সর্বনিম্ন।

লিভারপুলের পক্ষে নজরে থাকবেন মোহামেদ সালাহ, সিটির বিপক্ষে দলটির হয়ে সর্বোচ্চ (১৫) গোল-অ্যাসিস্টের রেকর্ডটি যে তার। সিটির জালে ৯ গোল ও ৬টি অ্যাসিস্ট করেছেন সালাহ। যদিও চলতি মৌসুমে লিভারপুল ফল পাচ্ছে সম্মিলিত পারফরম্যান্সে। ভার্জিল ফন ডাইক, অ্যালেক্সিস ম্যাক-অ্যালিস্টার, হুগো একিতিকে, ডমিনিক সোবোজলাই, ফ্লোরিয়ান ভির্টজরা ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন। স্বাগতিক সিটি এবার অনেকটাই হালান্ড-নির্ভর। এ ছাড়াও ফিল ফোডেন, টিজনি রেইন্ডার্স, স্যাভিনিও, জেরেমি ডোকুরা চ্যালেঞ্জ জানাবেন।

এই মুহূর্তে ১০ ম্যাচে ৬ জয়, ১ ড্র ও ৩ হারে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে প্রিমিয়ার লিগের টেবিলে তিনে অবস্থান ম্যান সিটির। সমান ম্যাচে লিভারপুল ৬ জয় ও ৪ হারে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে ছয় নম্বরে অবস্থান করছে। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা আর্সেনালের চেয়ে অন্যদের ব্যবধান কিছুটা বেশি। ১১ ম্যাচে তাদের ২৬ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে চেলসি। জয় পেলে তাদের টপকে দুইয়ে ওঠার সুযোগ আছে লিভারপুল ও সিটির সামনে।

এএইচএস