বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছিলেন বেশ ক্রীড়ানুরাগী। বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারের জন্য আজীবন লড়াই করেছেন তিনি। দীর্ঘদিন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার মৃত্যুতে শোকাহত ক্রীড়াঙ্গনের সবাই।

জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ছাইদ হাসান কাননের সঙ্গে খালেদা জিয়ার অনেক স্মৃতি। সেসব স্মৃতিই ঢাকাপোস্টের সঙ্গে শেয়ার করলেন কানন। তিনি বলেন, ‘আমি যখন ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের ক্রীড়া সম্পাদক প্রার্থী ছিলাম। ম্যাডাম আমার কাছ থেকে প্রায়ই নির্বাচনের খোঁজ-খবর নিতেন। এক দিন রাতে ক্যাম্পাসে চিকা দিচ্ছিলাম। ম্যাডাম পেছন থেকে ডেকে বললেন, ‘তোমার ছবিগুলো সুন্দর হয়েছে।’’

দলীয় ও রাষ্ট্রীয় অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও খেলাধূলায় মনোযোগ ছিল খালেদা জিয়ার। এ নিয়ে কানন বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধুলাকে গুরুত্ব দেয়ার জন্য আমি শারীরিক শিক্ষা বিভাগে যোগ দিয়েছিলাম। ম্যাডাম তৎকালীন ভিসি এমাজউদ্দিন স্যারকে আমার কথা বলেছিলেন। রাজনৈতিক ও নানা কর্মকাণ্ডের মধ্যেও আমাকে দেখলে বলতেন ‘মোহামেডানের কানন’।’

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সাফল্য হাতেগোনা। সেই সাফল্যের বিপরীতে ক্রীড়াবিদরা খুব বেশি সম্মানিত হন না। ২০০৩ সালে ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর দলের সবাইকে সরকারি প্লট দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ২০০৩ সাফ ফাইনালে বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন হাসান আল মামুন। তিনি প্লট সম্পর্কে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের সবাই ৫ কাঠা করে প্লট পেয়েছিলাম। এ রকম সম্মান আর পাইনি।’

সরকারের কিস্তি পরিশোধ করেই ফুটবলাররা জমির মালিক হয়েছিলেন। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য প্রত্যেকে ৪ লাখ টাকা করে উপহার পেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে। ফলে বাকি চার লাখ টাকা কিস্তিতে পরিশোধে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি ফুটবলারদের।

বাংলাদেশের ফুটবলের দু’টি বিশেষ ঘটনার সময়ই খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রফি ১৯৯৫ সালে চার জাতির শিরোপা। মিয়ানমার থেকে দেশে ফেরার দিনই রাতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে ফুটবলারদের ডেকেছিলেন খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের প্রথম সাফ চ্যাম্পিয়নও তার প্রধানমন্ত্রীকালীন সময়ে।

বাংলাদেশের অন্যতম তারকা অ্যাথলেট ও কোচ শামীমা সাত্তার মিমো। তিনি খালেদা জিয়ার খালাতো বোন। পারিবারিকভাবে খুব কাছ থেকে দেখেছেন খালেদা জিয়াকে। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদ মিমো নিজেই এখন অসুস্থ। বোনের প্রয়াণে শোকাহত মিমো বলেন, ‘অ্যাথলেটিক্সে প্রতিনিয়ত স্বর্ণ জেতায় পত্রিকায় শিরোনাম হতো ‘স্বর্ণময় মিমো’। আপা এতে গর্ব করে বলতেন, ‘ আমাদের গর্ব স্বর্ণ মিমো’। খেলাধুলার উন্নয়নে সব সময় ছিলেন সচেষ্ট এবং সব সময় খোঁজ রাখতেন। দিনাজপুর বিকেএসপি তিনি উদ্বোধন করেছিলেন।’

বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের অ্যাথলেটদের মধ্যে মিমো অন্যতম। সত্তর দশক থেকে তিনি অ্যাথলেটিক্সের সঙ্গে যুক্ত। জাতীয় পর্যায়ে অসংখ্য রেকর্ড রয়েছে। খেলা ছাড়ার পর কোচিং শুরু করেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চাকরি শুরুর পর বিকেএসপিতে যোগ দেন। দিনাজপুর বিকেএসপির উপ-পরিচালক ছিলেন দশ বছর। খালেদা জিয়ার আত্মীয় হলেও মিমোকে ক্রীড়াঙ্গনে কেউ কখনও কোনো প্রভাব খাটাতে দেখেনি। ক্রীড়াঙ্গনের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার তিনি যখন পেয়েছেন, তখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল না। 

এজেড/এমএমএম