নতুন বছর আসতে চলেছে। গত ১২ মাসে ফুটবলে ঘটে গেছে নানা ঘটনা, হয়েছে অনেক রেকর্ড। চমকও দেখিয়েছে বেশ কিছু দল ও তারকারা। ফিফা ২০২৫ সালের তেমন কিছু ঘটনা ও কীর্তি নিয়ে পরিসংখ্যানে তুলে ধরেছে-

১৮৫,৪৮৭ (ছোট দেশের বড় স্বপ্ন)

১ লাখ ৮৫ হাজার ৪৮৭ জনসংখ্যার দেশ কুরাসাও ফিফা বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। জনসংখ্যার বিচারে ক্ষুদ্রতম দেশ হিসেবে ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ইতিহাস গড়েছে দেশটি।

২০১৮ বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়া আইসল্যান্ডকে পেছনে ফেলেছে কুরাসাও। ৩ লাখ ৯৮ হাজার ২৬৬ জনসংখ্যার দেশ আইসল্যান্ড এত দিন ক্ষুদ্রতম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে খেলার রেকর্ড ধরে রেখেছিল। কুরাসাও ছাড়াও কেপ ভার্দে, জর্ডান ও উজবেকিস্তান প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক আসরে নাম লিখিয়েছে। 

৫২ (বহু অপেক্ষার পর প্রত্যাবর্তন)  

কোস্টারিকা ও হন্ডুরাসকে পেছনে ফেলে বাছাইপর্বে চমক দেখানো হাইতি ৫২ বছর পর বিশ্বকাপে খেলবে। তাদের চেয়ে বেশি সময় বিরতি দিয়ে ফেরার রেকর্ড আছে কেবল নরওয়ে (১৯৩৮-১৯৯৪, ৫৬ বছর), মিশর (১৯৩৪-১৯৯০, ৫৬ বছর) এবং ওয়েলসের (১৯৫৮-২০২২, ৬৪ বছর)। এছাড়া অস্ট্রিয়া, নরওয়ে ও স্কটল্যান্ড দীর্ঘ ২৮ বছর পর ফুটবলের এই বিশ্ব আসরে ফিরছে।

৮৬ (ম্যালবির রূপকথা) 

নিজেদের ৮৬তম বছরে এসে ‘ম্যালবি’ সুইডেনের শীর্ষ লিগের শিরোপা জিতে ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা রূপকথার গল্প লিখেছে। আন্দ্রেস টরস্টেনসনের এই দলটির বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই এসেছেন হ্যালভিক নামের একটি মাছ ধরার গ্রাম থেকে, যার জনসংখ্যা মাত্র ১,৫০০। নোয়েল টর্নকভিস্ট, হারমান জোহানসন এবং তাদের সতীর্থরা ৭৫ পয়েন্ট নিয়ে মৌসুম শেষ করেছেন, যা মালমো এবং এআইকে-র করা ৬৭ পয়েন্টের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।

৫৯ (এমবাপের গোল উৎসব) 

কিলিয়ান এমবাপে তার ২৭তম জন্মদিনে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে সেভিয়ার বিপক্ষে গোল করে ২০২৫ সাল শেষ করেছেন ৫৮ ম্যাচে ৫৯ গোল নিয়ে। ২০১৩ সালে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর গড়া এক পঞ্জিকা বর্ষে ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ছুঁলেন। এমবাপে ২০২৫ সালে ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে বছর শেষ করছেন, তার পেছনে ৫১ গোল নিয়ে আছেন বায়ার্ন মিউনিখের হ্যারি কেন। এমবাপে এক বছরে চ্যাম্পিয়নস লিগে তিনটি হ্যাটট্রিক করা প্রথম খেলোয়াড় হয়েছেন। তার সর্বশেষ হ্যাটট্রিকটি ছিল মাত্র ৬ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে, যা টুর্নামেন্টের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম।

৪৮ (মেসি জাদু)

লিওনেল মেসি ২০২৫ সালের এমএলএস মৌসুমে মাত্র ২৮ ম্যাচে অবিশ্বাস্যভাবে ৪৮টি গোলে অবদান রেখে একাধিক মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। তিনি প্রতিযোগিতার ৩০ বছরের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা পাঁচ ম্যাচে একাধিক গোল করার এবং এক মৌসুমে ১০ বার এই কীর্তির রেকর্ড গড়েছেন। ২৯ গোল এবং ১৯ অ্যাসিস্ট নিয়ে সেবাস্টিয়ান জিওভিনকোর (২০১৫) পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে তিনি গোল এবং অ্যাসিস্ট উভয় তালিকায় শীর্ষে ছিলেন। ৩৮ বছর বয়সী এই তারকা ইন্টার মায়ামিকে তাদের প্রথম এমএলএস কাপ জেতাতে অবদান রাখেন এবং প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা দুইবার এমএলএস মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।

৪৬ (হালান্ডের গোলের ফিফটি)

আর্লিং হালান্ড গত অক্টোবরে ৪৬ ম্যাচে নরওয়ের হয়ে ৫০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। ২৫ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় ইতিহাসের মাত্র ষষ্ঠ ফুটবলার এবং গত ৫৩ বছরের মধ্যে প্রথম- যিনি ৫০টিরও কম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে গোলের হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন। হালান্ড পোল নিলসেন (৩৬ ম্যাচ), গার্ড মুলার (৪১), পুসকাস (৪১), ককসিস (৪২) এবং পেলের (৪৯) মতো কিংবদন্তিদের কাতারে নাম লিখলেন। ১৭ গোল নিয়ে হালান্ড ২০২৫ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে বছর শেষ করবেন।

৩৭ (অপরাজিত লিঁও) 

লিঁও নারী ফুটবল দল টানা ৩৭টি লিগ ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে। এই অজেয় যাত্রা তাদের গত ১৯ মৌসুমের মধ্যে ১৮তম শিরোপা এনে দিয়েছে। চেলসিও ২০২৪-২৫ মৌসুমে ঘরোয়া লিগে অপরাজিত থেকে টানা ষষ্ঠ উইমেন্স সুপার লিগ জিতেছে। তবে চেলসির টানা ৩৪ ম্যাচের অপরাজিত থাকার রেকর্ডটি চলতি মাসের শুরুতে এভারটনের কাছে এক হার দিয়ে শেষ হয়।

৮ (ওসিমহেনের রেকর্ড)

ভিক্টর ওসিমহেন গ্যালাতাসারের হয়ে টানা আটটি ইউরোপীয় ম্যাচে গোল করেছেন, যা ইংল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি বা স্পেনের বাইরের কোনো খেলোয়াড়ের জন্য রেকর্ড। ওসিমহেন ২০২৪-২৫ মৌসুমে গ্যালাতাসারের হয়ে ৩৫ গোল করেছেন, যা তুরস্কে কোনো বিদেশি খেলোয়াড়ের এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের ২৪ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।

৫ (সেরা কোচ উইগম্যান) 

সারিনা উইগম্যান পঞ্চমবারের মতো ফিফা বর্ষসেরা নারী কোচের পুরস্কার জিতেছেন। অবিশ্বাস্য এই স্বীকৃতি তিনি পেয়েছেন জুলাই মাসে টানা তৃতীয় উয়েফা উইমেন্স ইউরো জয়ের কারণে। এদিকে আইতানা বোনমাতি টানা তৃতীয়বারের মতো ফিফা বর্ষসেরা নারী খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন।

২ (দানিলোর ইতিহাস) 

ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং কনমেবল কোপা লিবার্তাদোরেস- উভয়টিই দুইবার করে জেতার রেকর্ড গড়েছেন দানিলো। ৩৪ বছর বয়সী এই রাইট-ব্যাক গত নভেম্বরে ফ্ল্যামেঙ্গোর হয়ে ফাইনালে জয়সূচক গোল করে ১৪ বছর পর লিবার্তাদোরেসে গোলের দেখা পান। ব্রাজিলের ক্লাবগুলো এখন টানা সাতটি লিবার্তাদোরেস শিরোপা জয়ের রেকর্ড ধরে রেখেছে। ফ্ল্যামেঙ্গোর কোচ ফিলিপ লুইস গত ১৪ মাসে সাতটি শিরোপা জিতেছেন।

১.২৯ (দলবদলে রেকর্ড) 

অরল্যান্ডো প্রাইড ১.২৯ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে টাইগ্রেস থেকে লিজবেথ ওভলেকে দলে ভিড়িয়ে নারী ফুটবলের ইতিহাসের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে। ২০২৫ সালে নারী ফুটবলে সাতটি সবচেয়ে দামী দলবদল হয়েছে। অন্যদিকে আলেকজান্ডার আইসাক ১৪৪.৫ মিলিয়ন ইউরোতে নিউক্যাসেল ইউনাইটেড থেকে লিভারপুলে যোগ দিয়ে ইতিহাসের তৃতীয় ব্যয়বহুল ট্রান্সফারে নাম লিখিয়েছেন। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন নেইমার (২২২ মিলিয়ন) এবং এমবাপে (১৮০ মিলিয়ন)।

এফএইচএম/