মেসিকে বিনা বেতনেও কি রাখতে পারত বার্সেলোনা?
লিওনেল মেসি/ফাইল ছবি
এইতো গেল মৌসুমেই, গুঞ্জন ছিল লিওনেল মেসিকে পেতে রীতিমতো সাত হাজার কোটি টাকার একটা ক্রীড়া প্রকল্পই বানিয়ে ফেলেছিল ম্যানচেস্টার সিটি! সেই মেসিই কিনা এবার বার্সেলোনার হয়ে খেলতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন বার্ষিক ২০০ কোটি টাকার চুক্তিতে, যেখানে আগের চুক্তিতে তিনি ফি মৌসুমে পেতেন প্রায় ৭০০ কোটি টাকার কাছাকাছি অর্থ! প্রাণের ক্লাব বার্সেলোনা দারুণ আর্থিক সঙ্কটে, সেই ক্লাবে থেকে যেতে চান বলেই নিজে থেকে চেয়েছিলেন এমন এক চুক্তি।
সেটাও সম্ভব হয়নি। ক্লাব সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা নিজেই জানিয়েছিলেন, ‘এ বিষয়ে ক্লাবের কিচ্ছুটি করার ছিল না। যদি আমাদের ২৫ মিলিয়ন ইউরোর চুক্তি প্রস্তাব করতে হতো, তাহলে ১০০ মিলিয়ন বেতন কমিয়ে ফেলতে হতো অন্যদের।’
বিজ্ঞাপন
এই বাধ্যবাধকতা এসেছে লা লিগার একটা নিয়ম থেকে, যেখানে বলা হয়েছে ক্লাবের আয় থেকে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে খেলোয়াড়দের বেতন বাবত। সেখানে বার্সেলোনা তাদের আয়ের ১১৫ শতাংশ ব্যয় করছে খেলোয়াড়দের বেতন দিতে।
মেসিকে রাখতে বার্সেলোনার চেষ্টার কমতিও ছিল না। গেল মাসে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে বড় বেতনে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি থাকা খেলোয়াড়দের সঙ্গে, কিন্তু রাজি হননি তাদের কেউই। চুক্তির কারণে তাদের কিছু বলতেও পারছে না বার্সা।
বিজ্ঞাপন
একটা সুযোগ ছিল, যদি সিভিসির চুক্তিতে রাজি হয়ে যেত কাতালানরা। কিন্তু সেখানে রাজি হলে ২৭০ মিলিয়ন ইউরো তাৎক্ষনিক পেলেও দীর্ঘমেয়াদে তাদের দিতে হতো ৮০০ মিলিয়ন ইউরো, কিংবা তার চেয়েও বেশি। ফলে সেখানেও রাজি হওয়া সমীচীন মনে করেননি সভাপতি লাপোর্তা।
আরও একটা সম্ভাবনার কথাও উঠে আসছিল শেষ কিছুদিনে, মেসির সংবাদ সম্মেলনের আগে। প্রশ্ন উঠছিল, মেসিকে চাইলে ফ্রিতে খেলার প্রস্তাব দিতে পারবেন? সে প্রশ্নের উত্তরই দিয়েছে ফুটবল এস্পানা। উত্তরটা এসেছে, ‘না’।
স্প্যানিশ আইন বলছে, যেকোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করলে নতুন চুক্তিতে বেতন হতে হবে অন্তত আগের আয়ের ৫০ শতাংশ। নাহয় সেটা স্প্যানিশ আইনসিদ্ধ হবে না আদৌ। জানা যাচ্ছে, অবৈধ অর্থ চালাচালি ঠেকাতেই এই আইন স্প্যানিশ নীতিনির্ধারকদের।
তবে এই আইন না থাকলেও মেসিকে দলে রাখতে পারত না বার্সেলোনা। কারণ ক্লাব সভাপতি জানিয়েছিলেন, মেসিকে নিয়ে ক্লাবের আয়ের ১১৫ শতাংশ যায় খেলোয়াড়দের বেতনের পেছনে, মেসিকে ছাড়া সেটা নেমে আসে ৯৫ শতাংশে। কিন্তু স্প্যানিশ লিগের বেধে দেওয়া ৭০ শতাংশে নামানোর আগে মেসিকে নিবন্ধন করাতে পারত না বার্সা।
বার্সেলোনায় সার্জিও আগুয়েরো, মেম্ফিস ডিপাই, এরিক গার্সিয়া আর এমারসন রয়্যালের ভবিষ্যতও ঝুলে আছে ঠিক একই কারণে। বেঞ্চে থাকা খেলোয়াড়দের বেচে দিতে না পারলে তা আর সম্ভবও নয়। ঠিক এ কারণেই গার্ডিয়ান প্রতিবেদক ও বিশিষ্ট ফুটবল বিশ্লেষক সিড লো জানাচ্ছেন, মেসির বিদায় বার্সেলোনায় দুর্দিনের শেষ নয়, কেবল মাত্র শুরু!
এনইউ/এটি