বাংলাদেশের ফুটবলে আগের সেই জনপ্রিয়তা নেই। একটা সময় আবাহনী, মোহামেডানের ম্যাচ দেখতে কয়েক ঘন্টা আগে থেকে  ছিল দর্শকদের লাইন। ঘরোয়া ফুটবলে দর্শক না হলেও জাতীয় দলের ম্যাচে এখনো অনেক আকর্ষণ রয়েছে দেশের ফুটবলপ্রেমীদের। নানা কারণে সশরীরে মাঠে উপস্থিত না থাকতে পারলেও টিভির পর্দায় ও সামাজিক মাধ্যমে নজর রাখেন ফুটবলপ্রেমীরা।

সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব ও বসুন্ধরা কিংস ঘরোয়া ফুটবলের প্রিমিয়ারে আসার পর ঘরোয়া ফুটবলেও তরুণ শিক্ষিত প্রজন্ম ফুটবলের দিকে ঝুঁকেছেন কিছুটা। এরা মাঠে সেভাবে না এলেও সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে খুব সরব থাকেন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে তারা অধিকাংশ সময় তাদের মতামত ব্যক্ত করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাফুফের পেজে অধিকাংশ পোস্টে শুধু লাইক ও শেয়ার অপশন কোনো মন্তব্যের অপশন থাকে না।

বিশেষ করে বাফুফের যে সকল সিদ্ধান্ত বা কর্মকান্ড সমালোচনা বা মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকে সে পোস্টগুলোর মতামত বিভাগ বন্ধ করা থাকে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ও অন্যান্য প্রতিযোগিতামুলক খেলার পোস্টগুলোতে মন্তব্যের অপশন খোলা থাকে মাঝে মধ্যে। 

সারা বিশ্বে বড় বড় ফুটবলারদের ফেসবুক পেজ ভক্তদের মন্তব্যের জন্য উন্মুক্ত থাকে। বাফুফে যে কোনো বিষয়ে ফিফা-এএফসির দিকে বল ঠেলে দেয়। সেই ফিফা এএফসির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের জন্য উন্মুক্ত। ফুটবলপ্রেমীরা মন্তব্যের অপশনে কড়া সমালোচনা, ব্যাঙ্গাত্মক মন্তব্য করেন অনেক ক্ষেত্রে কিন্তু ফিফা-এএফসি ফুটবলপ্রেমীদের মতামত প্রকাশের অপশনে বাধা দেয়নি কখনো। সেখানে বাফুফে হাটছে বিকল্প পথে। 

বাংলাদেশেও বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থা, ক্রীড়া,রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেজ চালান। সেখানেও মন্তব্যের সুযোগ অবারিত। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সামাজিক পেজে ক্রিকেট প্রেমীরা পোস্টের বিপরীতে নানা মতামত, ধারণা, অনুমান ও সমালোচনা তুলে ধরছেন। বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার পেজেও অনেক ফুটবলপ্রেমী কড়া সমালোচনা করলেও তিনি মন্তব্য অপশন বন্ধ রাখেননি। বাফুফে সমালোচনা থেকে বাঁচতেই এ অভিনব কৌশল। যেটা অনেকভাবে শিক্ষিত তরুণ সমাজকে ফুটবল থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে ধীরে ধীরে। 

তরুণ প্রজন্মের অনেকেই বাংলাদেশের ফুটবল ভালোবেসে বিভিন্ন নামে ফুটবলের বিভিন্ন গ্রুপ খুলেছে। সেই গ্রুপগুলোতে মেডিকেল, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সচেতন শিক্ষার্থী বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাস, সম্ভাবনা সংকট, এশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনা করেন। বাফুফের অফিসিয়াল পেজে এই মন্তব্য হলে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের মানুষের ফুটবল নিয়ে ভালোবাসা প্রকাশ পেত। এখন বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা কোনো দেশের ফুটবল অনুসরণ করলে সেই দেশের ফেডারেশনের পেজ ফলো করেন। বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের সমালোচনার ভয়ে মন্তব্য বন্ধ রাখায় আন্তর্জাতিক অনেকেও মন্তব্য করতে পারছেন না। 

বাফুফের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ আগে তেমন সক্রিয় ছিল না, হালনাগাদও থাকতো না তেমন। গত এক বছরে অবশ্য পরিস্থিতিটা বদলেছে। নিয়মিত 'আপডেট' আসছে ফেসবুক পাতায়। অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও বাফুফের পেজে লাইক ও অনুসারীর সংখ্যা ৩ লাখ ছুঁয়েছে মাত্র। যেটা এত জনসংখ্যা বহুল ফুটবলপ্রেমী দেশে খুব কম। বাফুফে পেজ পরিচালিত হয় তৃতীয় একটি পক্ষের মাধ্যমে। বাফুফের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা তথ্য সরবারহ ও নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। বাফুফে নির্বাচিত কর্মকর্তাদের এ পেজে সক্রিয়তা ও সম্পৃক্ততা নেই। 

এজেড/এটি