জামাল ভূঁইয়াকে দিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল দলে প্রবাসী ফুটবলার খেলানোর চল শুরু হয়েছিল লুডউইক ডি ক্রুইফের হাত ধরে। এখন জাতীয় দলে প্রবাসী ফুটবলার চারজন। নেদারল্যান্ডসে বসে ঢাকা পোস্টকে সাবেক কোচ জানালেন, জামালকে দেখে এখন গর্ব হয় তার। ডি ক্রুইফ বললেন বাংলাদেশের দায়িত্ব ছাড়া, খেলোয়াড়দের অতিরিক্ত অনুশীলন করিয়ে ইনজুরিতে ফেলা, খেলোয়াড় তুলে আনা নিয়ে। জানালেন বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নতির পথও...

ঢাকা পোস্ট : বাংলাদেশে প্রবাসী খেলোয়াড়দের আনার ব্যাপারটি আপনিই শুরু করেছিলেন, এখন জাতীয় দলে চারজন প্রবাসী ফুটবলার। দীর্ঘমেয়াদে সাফল্যে কি এটি ভূমিকা রাখবে নাকি স্রেফ সাময়িক সমাধান?

ডি ক্রুইফ : হ্যাঁ। আমার মত যা ছিল, আমি সেটা দায়িত্বরতদের বুঝিয়েছি। ভালো খেলোয়াড়দের সঙ্গে থাকলে অন্যান্য তরুণ ও স্বপ্নবাজ ফুটবলারদের উন্নতি হবে। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে উপরে ওঠার ক্ষেত্রে এটা জাতীয় দলের জন্য অনেক বড় একটা বুস্ট হবে। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের জনপ্রিয়তাও বাড়বে। বিপুল জনসংখ্যার বাংলাদেশ আসলে ঘুমন্ত দৈত্য (চীনের মতো)। প্রক্রিয়াটা নিয়ন্ত্রণ করতে শুধু যথাযথ জ্ঞান প্রয়োজন।

ঢাকা পোস্ট : আপনি জামাল ভূঁইয়াকে প্রথম জাতীয় দলে এনেছিলেন, এখন তিনি জাতীয় দলের অধিনায়ক, তার খোঁজ কি পরে রেখেছেন? কেমন লাগে?

ডি ক্রুইফ : জামাল দারুণ একজন ফুটবলার। এখনো সে উন্নতি করে যাচ্ছে। তরুণ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী ফুটবলারদের জন্য সে একজন আদর্শ। আমি তাকে অনুসরণ করি এবং তাকে দেখে অনেক গর্ব হয়। 

ঢাকা পোস্ট : প্রবাসীদের জাতীয় দলে যোগ দেওয়া কি মানসিকভাবেও স্থানীয় খেলোয়াড়দের জন্য ভালো ব্যাপার?

ডি ক্রুইফ : অবশ্যই মানসিকভাবে তাদের উন্নতি হবে। প্রবাসী ফুটবলারদের যে ধরনের অভিজ্ঞতা সেটা স্থানীয় ফুটবলারদের উন্নতিতে ভূমিকা রাখবে। তবে স্থানীয় ফুটবলাররাও তরুণদের সহযোগিতা করতে পারে। পরিস্থিতি, আবহাওয়া, খাদ্যভাসের সঙ্গে মানিয়ে নিতেও তারা ভূমিকা রাখতে পারবে।

ঢাকা পোস্ট : আপনার চোখে স্থানীয় ও প্রবাসী ফুটবলারদের মধ্যে পার্থক্যটা কী?

ডি ক্রুইফ : শারিরীকভাবে তাদের উচ্চতা, শক্তি ও গতি আলাদা। মানসিকভাবেও ভিন্নতা আছে। তারা সব পরিস্থিতিতেই জয়ের মানসিকতা রাখে। টেকনিক্যাল দিক চিন্তা করলে প্রবাসীরা অনেক নিয়মনিষ্ঠ, কোনো তথ্য দ্রুত নিতে পারে। বিশেষত যারা তরুণ, তারা আরও বেশি। আফ্রিকায় (নাইজেরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায়) আমার তিন বছরের অভিজ্ঞতা আছে।

ঢাকা পোস্ট : দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলেও বাংলাদেশ সাফল্য পাচ্ছে না অনেকদিন ধরেই, সমস্যাটা আসলে কোথায়?

ডি ক্রুইফ : সাফল্য পেতে হলে শিক্ষা, অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। ফিটনেসে জোর দিতে হবে। লিগের মান বাড়াতে হবে। সবদিকে উন্নতি করতে পারলে তাহলেই ফল আসবে, গৌরব ফিরবে। 

ঢাকা পোস্ট : বলা হয় স্থানীয় পর্যায়ে অনেক প্রতিভাবান ফুটবলার আছে বাংলাদেশে, তাদের তুলে আনার উপায়টা কী আসলে?

ডি ক্রুইফ : আমিও বিশ্বাস করি বাংলাদেশে অনেক প্রতিভাবান ফুটবলার আছে। ২০ কোটির বেশি মানুষের দেশে প্রতিভা আছে, এতে কোনো সন্দেহই নেই। কিন্তু এদের তুলে আনতে হবে। বিকেএসপির মাধ্যমে তুলে আনা ভালো পদ্ধতি কিন্তু এটা আসলে সবকিছু না। ৮-১০ বছর বয়সী বাচ্চাদের সঠিক ফুটবল জ্ঞান দেওয়ার সিস্টেম তৈরি করা খুব জরুরি। নেদারল্যান্ডসে আমরা এটাতে খুব ভালো, পৃথিবীর অন্যতম সেরা।  

ঢাকা পোস্ট : বাংলাদেশের খেলোয়াড় স্কাউটিং কি ঠিক পথেই আছে?

ডি ক্রুইফ : খেলোয়াড় স্কাউট করে তুলে আনার কাজ কখনো শেষ হয় না। স্কাউট করে খেলোয়াড় তুলে আনা কোচ অথবা পরিচালক হিসেবে সবসময় আপনার দায়িত্ব। 

 বিকেএসপির মাধ্যমে তুলে আনা ভালো পদ্ধতি কিন্তু এটা আসলে সবকিছু না। ৮-১০ বছর বয়সী বাচ্চাদের সঠিক ফুটবল জ্ঞান দেওয়ার সিস্টেম তৈরি করা খুব জরুরি। নেদারল্যান্ডসে আমরা এটাতে খুব ভালো, পৃথিবীর অন্যতম সেরা।  

ঢাকা পোস্ট : বাংলাদেশের ফুটবল কি আধুনিক ফুটবলের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে? 

ডি ক্রুইফ : উন্নতির জায়গা তো অবশ্যই আছে। কিন্তু নিজেদের লেভেলটা অবশ্যই আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে নিতে হবে। ৩০ বছর আগে জাপানে, ২০ বছর আগে চীনে এখন থাইল্যান্ড, ভারতে অনেক ইনভেস্ট হচ্ছে। এটা আসলে ধাপে ধাপে করতে হবে। ৫-১০ বছরের পরিকল্পনা লাগবে। যারা দায়িত্বে আছে, তাদের আতঙ্কিত হলে চলবে না। বসুন্ধরা কিংস এই জায়গায় দারুণ উদাহরণ।

ঢাকা পোস্ট :  আপনার বাংলাদেশের কোচের দায়িত্ব ছাড়া নিয়ে অনেক ধরনের কথা শোনা যায়, আসলে কী হয়েছিল?

ডি ক্রুইফ : আমার ওইসব গল্প সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। আমার চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছিল, তাই চলে এসেছি। যদিও আরও অনেক অনেক কাজ বাকি ছিল। ওই সময়ে আমি চিন্তা করেছিলাম আরও ৫-১০ বছর বাংলাদেশে কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যাবো। বাংলাদেশের ফুটবলের  উন্নতির জন্য এটা জরুরি ছিল। সবকিছু নিয়েই সালাউদ্দিন সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি।  

ঢাকা পোস্ট : ফুটবলের উন্নতির জন্য বাফুফে আসলে কতটা পেশাদার?

ডি ক্রুইফ : আমি নিশ্চিত বাফুফের উদ্দেশ্য আছে। সত্যিকারের উন্নতির জন্য ‘আউট অব দ্য বক্স’ কিছু অবশ্যই দরকার। সালাউদ্দিন সাহেব লম্বা দৌড়ের পরিকল্পনা নিতে খুব ভালোভাবে সক্ষম। ইমরুল সাহেব (বসুন্ধরা কিংস সভাপতি) খুব স্বপ্নবাজ ও সম্মানীয় ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব। নাবিল সাহেব, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টও অনেক ভালো মানুষ। তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। 

ব্যক্তিগতভাবে ও ফুটবলের জন্য বাংলাদেশে ফিরতে চাই। ফুটবলের কথা যদি বলেন, আমি আগেই বলেছি অনেক কাজ করার বাকি ছিল। আর ব্যক্তিগতভাবে এখনো অনেক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ আছে।

ঢাকা পোস্ট : আপনি নাকি খেলোয়াড়দের অতিরিক্ত অনুশীলন করাতেন, এই জন্য ফুটবলাররা বেশি ইনজুরিতে পড়তো..

ডি ক্রুইফ :  কোচ হিসেবে এটা আপনার দায়িত্ব খেলোয়াড়দের একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। কঠোর পরিশ্রম করা জরুরি বিষয়। মেডিকেল দলের সঙ্গে আমার কাজের সম্পর্ক ছিল দুর্দান্ত। এখনো তাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো সিরিয়াস ইনজুরি দেখিনি। 

ঢাকা পোস্ট : আবার কি বাংলাদেশে ফেরার ইচ্ছে আছে?
  
ডি ক্রুইফ :  ব্যক্তিগতভাবে ও ফুটবলের জন্য বাংলাদেশে ফিরতে চাই। ফুটবলের কথা যদি বলেন, আমি আগেই বলেছি অনেক কাজ করার বাকি ছিল। আর ব্যক্তিগতভাবে এখনো অনেক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ আছে। আমার দিক থেকে বাংলাদেশ আমার দ্বিতীয় বাড়ি। 

ঢাকা পোস্ট :  বাংলাদেশকে নিয়ে কিছু বলবেন?

ডি ক্রুইফ :  বাংলাদেশ অনেক সম্ভাবনাময় দেশ। সবার জন্য শুভ কামনা, নিরাপদ ও সুস্থ থাকবেন। 

এমএইচ/এটি