বার্সেলোনা এবং লিওনেল মেসি, নাম দুটো কখনো আলাদা হবে কেউ ভাবেনি। কিন্তু প্রচন্ড আর্থিক সঙ্কট ক্লাবকে একরকম বাধ্য করেছে এলএমটেনকে ছেড়ে দিতে। মেসির অভাব অপূরণীয় হলেও তার বিদায়ের পর নাকি অবশেষে নিজেদের আর্থিক অবস্থায় কিছুটা ভারসাম্য আনতে পেরেছে বার্সেলোনা।

এর আগেও অপরিকল্পিত ট্রান্সফার ও অগোছালো বেতন কাঠামোর কারণে লুইস সুয়ারেজ, ইভান রাকিটিচ, আর্তুরো ভিদালদের মতো তারকাদের বিদায় বলতে হয়েছে। সম্প্রতি খেলোয়াড়দের বেতন বাবদ ব্যয় কমাতে অঁতোয়ান গ্রিজম্যানকেও ধারে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে ফেরত পাঠিয়েছে কাতালান ক্লাবটি।

মেসি ও গ্রিজম্যান ছিলেন ক্লাবের সর্বাধিক বেতনপ্রাপ্ত খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম। তাদের বিদায়ে নিজেদের বেতন বাবদ ব্যয় কিছুটা কমিয়ে আনতে পেরেছে বার্সেলোনা। বর্তমানে এক বিলিয়ন ইউরোর বেশি ঋণে থাকা ক্লাবটি এখন আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দলের কিছু খেলোয়াড়কে ভালো দামে বিক্রির চিন্তা করছে। এছাড়াও সম্ভাবনাময় তরুণ ফুটবলারদের কম দামে কিনে নিয়ে বেশি দামে বিক্রির ব্যবসায়ও নেমেছে তারা। 

৯ মিলিয়ন ইউরোর ট্রান্সফার ফিতে চলতি বছরের ২ জুন সাড়া জাগানো ব্রাজিলিয়ান রাইট ব্যাক এমারসনকে রিয়াল বেটিস থেকে দলে টানলেও এর ঠিক দুই মাস পরেই ৩১ আগস্ট তাকে ২৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ইংলিশ ক্লাব টটেনহ্যামের কাছে বিক্রি করে দেয় কাতালান ক্লাবটি। বার্সেলোনার হয়ে খেলাটা এমারসনের স্বপ্ন হলেও বার্সা সভাপতি হুয়ান লাপোর্তার লেনদেনের বলি হয়ে স্বপ্ন ভাঙে এই উঠতি ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের। 

স্প্যানিশ পত্রিকা মার্কাকে এমারসন বলেন, ‘বার্সেলোনার হয়ে মাঠে নামার অনুভূতি উপভোগ করতে চেয়েছিলাম। এটা আমার স্বপ্ন ছিল। আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি এতে। তারা অন্যভাবেও বিষয়টার নিস্পত্তি করতে পারত। আমি ভেবেছিলাম তারা আমাকে বিক্রি করবে না, কিন্তু যা ঘটল এতে আমি এখন নিশ্চিত তারা আমাকে বিক্রির উদ্দেশ্যেই দলে নিয়েছিল।’

আপাতদৃষ্টিতে নিষ্ঠুর মনে হলেও ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া লাপোর্তার সামনে খুব বেশি পথও খোলা নেই। এছাড়াও কোচ কোম্যানের পরিকল্পনায় নেই কিন্তু বড় অংকের বেতন নিয়ে থাকেন এমন খেলোয়াড়দেরও ধারে অন্য দলে পাঠাচ্ছে কাতালানরা। নিজেদের রিজার্ভ ফুটবলারদেরও বিক্রি বা ধারে পাঠানোর চেষ্টা করছে তারা। ডিফেন্ডার স্যামুয়েল উমতিতি ও গোলরক্ষক নেতো এই তালিকার নতুন সংযোজন। 

এর আগে বার্সেলোনা দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা তিন সিনিয়র ফুটবলার জর্ডি আলবা, জেরার্ড পিকে এবং সার্জিও বুস্কেটসকে বেতন কমানোর জন্য রাজি করিয়েছে লাপোর্তার বোর্ড। স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, পূর্বে বেতন বাবদ ব্যয় ক্লাবের মোট আয়ের ১১০ শতাংশ হলেও বর্তমানে তা কমে ৮৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

উল্লেখ্য, ২০২১-২২ মৌসুম শুরুর পূর্বেই দলের অনেক খেলোয়াড় বিক্রি করে ফেলা বার্সেলোনা খেলোয়াড় সংকট এড়াতে ফ্রি ট্রান্সফারের দিকে ঝুকে। সার্জিও আগুয়েরো, এমফাসিস ডিপাইদের সংযোজন এই ফ্রি ট্রান্সফারেই। 

এতকিছুর পরেও যদিও পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পায় বার্সেলোনা, সেটি হবে লাপোর্তা আমলের সবচেয়ে বড় সাফল্য। এমন শোচনীয় অবস্থা থেকে ক্লাবকে পুনরুদ্ধার করতে পারলে বার্সেলোনার ইতিহাসে নিশ্চয়ই সোনালি অক্ষরে লেখা থাকবে লাপোর্তার নাম।

এআইএ/এটি/টিআইএস