দুই মাঠে চলছে ১৮ ক্লাবের অনুশীলন

মালে সাফে খেলছে পাঁচ দেশ। সেই পাঁচ দলের অনুশীলনের জন্য তিনটি মাঠ। এর মধ্যে দু’টি আবার টার্ফের। হ্যানভেরু মাঠটি শুধু ঘাসের। টার্ফের মাঠে অনুশীলন করে মালে জাতীয় স্টেডিয়ামে ঘাসের মাঠে খেলা একটু কঠিনই। মালদ্বীপের ক্লাবগুলো সেই কঠিন কাজই করে আসছে বছরের পর বছর ধরে। 

খুব ছোট্ট শহর মালে। চার দিকেই ভারত মহাসাগর বেষ্টিত। স্থল জায়গার স্বল্পতা ব্যাপক; ফলে মাঠের সংকটও তীব্র। ফুটবল ক্লাবগুলোর অনুশীলনের জন্য রয়েছে দুইটি আর্টিফিশিয়াল টার্ফ। এই দুই টার্ফেই অনুশীলন করে মালদ্বীপের ক্লাবগুলো। দল আটটি, টার্ফ দুইটি। এজন্য ক্লাবগুলোকে ভাগাভাগি করে টার্ফের সময় বরাদ্দ করে মালদ্বীপ ফুটবল এসোসিয়েশন। অনুশীলনের জন্য ক্লাবগুলো পুরো টার্ফ বরাদ্দ পায় না। টার্ফের অর্ধেক আয়তনের মধ্যে অনুশীলন করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে দুই দল এক সঙ্গে অর্ধেক অর্ধেক টার্ফ ব্যবহার করে অনুশীলন করে। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল ১৫ বছর যাবৎ এভাবেই অনুশীলন করছেন তারা।

মালদ্বীপ জাতীয় দলের কোচ সুজেন আলী আগে ঘরোয়া লিগে কোচিং করিয়েছেন। মাঠের সঙ্কটকে মালদ্বীপের ফুটবলে বড় সমস্যা হিসেবে মনে করেন তিনি, ‘ফুটবল ও যে কোনো খেলায় অনুশীলনের বিকল্প নেই। সেই অনুশীলন যদি করতে হয় ছোট আকারে। এর প্রভাব তো কিছুটা পড়েই। তবে আমাদের ক্লাবগুলো এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে।’ অর্ধেক আয়তনের অনুশীলনের মতো আরেকটি সমস্যা রয়েছে। অনুশীলন হচ্ছে টার্ফে খেলতে হচ্ছে ঘাসের মাঠে। আগে এটি সমস্যা হলেও এখন এটি সয়ে গেছে মালদ্বীপের ফুটবলার এবং ক্লাবগুলোর, ‘দেশি ফুটবলাররা এখন অভ্যস্ত। বিদেশিরা প্রথমে একটু বিপাকে পড়েন। কিছু দিন পর তারাও মানিয়ে নেন।’ বলেন -টিসি স্পোর্টসের হেড কোচ মোহাম্মদ নিজাম।

বাংলাদেশে আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্সের যেমন বিশাল ক্লাব টেন্ট অনুশীলন মাঠ রয়েছে মালদ্বীপে এমন সুবিধা কোনো ক্লাবেরই নেই। মালদ্বীপের কোনো ক্লাবেরই নিজস্ব অনুশীলন মাঠ নেই। মালে জাতীয় স্টেডিয়াম সরকারের। মাঠ ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে মালদ্বীপ ফুটবল এসোসিয়েশনকে। এই মাঠে কোনো ক্লাব অনুশীলন করতে পারে না। মালদ্বীপ ফুটবল এসোসিয়েশনের দুটো টার্ফের মাঠই ক্লাবগুলোর ভরসা।

মালদ্বীপের ফুটবল কাঠামো তিন স্তরের। সর্বোচ্চ লিগে খেলে আট দল। দ্বিতীয় বিভাগ লিগে ১০ টি ক্লাব। তৃতীয় বিভাগ লিগে উন্মুক্ত অনেকটা বাংলাদেশের পাইওনিয়ার লিগের মতো। সর্বোচ্চ লিগের আট ক্লাবই মালেতে। দ্বিতীয় বিভাগের অধিকাংশ ক্লাবও মালেতে। ফলে প্রিমিয়ার লিগের মতো দ্বিতীয় বিভাগের দলগুলোও এই টার্ফে অনুশীলন করে। তৃতীয় বিভাগে অবশ্য বিভিন্ন দ্বীপের ক্লাব অংশ নেয়। কিছু দ্বীপে অবশ্য খোলা মাঠ রয়েছে সেখানে অনুশীলন করে তৃণমূলের ক্লাবগুলো।

এএফসি কাপের সময় অবশ্য ক্লাবগুলো পুরো টার্ফ জুড়ে অনুশীলনের সুযোগ পায়। জাতীয় দল অথবা ক্লাবের আন্তর্জাতিক ম্যাচের সময় হ্যানভিরু অনুশীলন মাঠ বিশেষভাবে বরাদ্দ নেয় ফেডারেশন। হ্যানভিরুর অনুশীলন মাঠটি ঘাসের, মালে স্টেডিয়ামও ঘাসের। সফরকারী দলগুলো যাতে অভিযোগ না করতে পারে এজন্য এই মাঠটি নেয়া হয়। মালদ্বীপ অবশ্য টার্ফের মাঠেই অনুশীলন করে।

মালদ্বীপের ফুটবল এখনো অনেকটা মালে নির্ভর। মালদ্বীপ সরকার ও ফেডারেশন যৌথভাবে ফুটবল বিকেন্দ্রীকরণ এবং ফুটবল মাঠের সংকট সমাধানে কাজ করছে। মালের ফুটবলসংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা দুই বছরের মধ্যে সঙ্কট দূর করে নতুন রুপে শুরু হবে মালদ্বীপের ফুটবল। মাঠ সঙ্কটের মধ্যেই মালদ্বীপ ফুটবলে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে অধিকাংশ ক্লাবের বিশাল জায়গা ও অনুশীলন মাঠ থাকা সত্ত্বেও দেশের ফুটবলে সেই অর্থে উন্নতি হচ্ছে না।

এজেড/এটি