পিএসজির মাঠে এসে রাজেন বলস্পোর্ট লাইপজিগ রীতিমতো চোখরাঙানিই দিচ্ছিল স্বাগতিকদের। এক গোলে পিছিয়ে পড়েও পরে দুই গোল করে তিন পয়েন্ট কেড়ে নেওয়ার জোর দাবিই জানাচ্ছিল। তখনই পিএসজির ত্রাতা হয়ে এলেন মেসি। জোড়া গোল করলেন, তাতেই জার্মান দলটিকে ৩-২ গোলে হারালো পিএসজি। 

ম্যাচটা না দেখে যদি এই প্রতিবেদন পড়েন, তাহলে আপনার কিছুটা খটকাই লাগতে পারে। মেসি সত্যিই আজ ছিলেন না ছন্দে। তবে পার্ক দেস প্রিন্সেসের কেউ তাতে মুখ গোমড়া করে থাকবে বলে মনে হয় না। জোড়া গোল করেছেন, পিএসজিকে হারের মুখ থেকে তিনটে পয়েন্ট এনে দিয়েছেন, এমন দিনে কে মন খারাপ করবে বলুন?

নেইমার ছিলেন না। শুরুর একাদশে তার জায়গায় নেমেছিলেন জুলিয়ান ড্র্যাক্সলার। নেইমারের অভাবটা হয়তো বোধ করেনি পিএসজি, তবে শুরুর এক ঘণ্টায় প্যারিসিয়ানদের মোটেও পরিকল্পিত কোনো দল বলেও মনে হয়নি। ম্যাচটাও শেষমেশ কৌশলগত মুন্সিয়ানায় জেতেনি, জিতেছে বিশ্বের সেরা দুই ফরোয়ার্ডের দারুণ তিনটে মুহূর্তের ঝলকে।

লাইপজিগ শুরু থেকেই প্রেস করেছে পিএসজিকে। বল পায়ে এলে বলটা সোজাসুজি আগে বাড়িয়েছে, দুই ফ্লাইং উইংব্যাককে জায়গা বানিয়ে বল পায়ে দেওয়ার চেষ্টায় থেকেছে।

অন্য দিকে পিএসজিও এর সুযোগটা নিতে চেয়েছে বেশ। হাইপ্রেস করতে গেলে রক্ষণকে অনেকটা ওপরে এসে মাঝমাঠের সঙ্গে যোগ দিতে হয় প্রেসিংয়ে। তাই পেছনে ফাঁকা পড়ে যায় অনেকটুকু জায়গা, লাইপজিগের ফেলে আসা সে জায়গাটাতেই চোখ ছিল মরিসিও পচেত্তিনোর দলের। প্রথম গোলটাও এলো সেই সুবাদেই।

সে গোলে অবশ্য একটা না হওয়া ফাউলের কালিমাও আছে। নিজেদের বক্সের কোণায় মেসি বল কেড়ে নিয়েছিলেন লাইপজিগ ফরোয়ার্ড আন্দ্রে সিলভার কাছ থেকে, সেটাতেই ফাউলের আবেদন তুলেছিল গোটা সফরকারীরা। রেফারি তা কানে তুললেন না, উল্টো বলটা ড্র্যাক্সলার হয়ে গেল এমবাপের কাছে। হাইপ্রেস করতে উঠে আসা লাইপজিগ রক্ষণ তার গতির সঙ্গে তালই পেল না একটু। দারুণ এক ফিনিশে দলকে নবম মিনিটেই প্রথম গোলটা এনে দেন ফরাসি তারকা।

তবে এরপরই লাইপজিগ ধীরে ধীরে ফিরতে থাকে নিজেদের চেনা ছন্দে। ফাঁকা জায়গা বানিয়ে, পিএসজির মাঝমাঠকে তাদের জায়গা থেকে নড়িয়ে বেশ কিছু সুযোগ সৃষ্টি করতে থাকে জার্মান দলটি। পিএসজি যে গোল হজম করছে, বিষয়টা মনে হতে থাকে তখনই। চলতি মৌসুমে ১৪ ম্যাচে ৪টা মাত্র ক্লিনশিট যে পিএসজির!

মনে হতে থাকা বিষয়টা নিশ্চিত হলো ম্যাচের ৩০ মিনিট পেরোনোর একটু আগে। অ্যাঞ্জেলিনোর স্বভাবসুলভ আগেভাগেই ক্রসটা দিয়েছিলেন সিলভাকে। দুরূহ কোণ থেকে পর্তুগীজ ফরোয়ার্ডও সেটা জালে জড়ান সুনিপুণভাবেই। তাতে ম্যাচেও ফেরে ১-১ গোলে সমতা।

পিএসজির দ্বিতীয়ার্ধে যে গোলটা হজম করল, তাতে রক্ষণভাগের দায় শতভাগ। অ্যাঞ্জেলিনোর ক্রসের সময় নর্দি মুকিয়েলে অফসাইডে ছিলেন কিনা, সেই সন্দেহেই এগিয়ে এলেন না কেউ। অনেকটা অরক্ষিত অবস্থায় গোলটা করে পিএসজিকে বেকায়দায় ফেলে দেন প্যারিসিয়ানদের পড়শি মুকিয়েলে।

নেইমার চোটের কারণে নেই, আনহেল ডি মারিয়াও ছিলেন নিষিদ্ধ। পিএসজির তারকাখচিত বেঞ্চ তাই এদিন ফাঁকাই পড়ে ছিল, যা সে সময় পচেত্তিনোর কপালেও হয়তো ফেলে দিয়েছিল চিন্তার ভাঁজ। 

কিন্তু যে দলে মেসি-এমবাপে আছেন, তাদের কি অতো ভাবনায় পড়তে হয়? হয়, হয়তো। কিন্তু এদিন হলো না। ৬৭ মিনিটে আরও একটা প্রতি আক্রমণে উঠে এলেন এমবাপে, সঙ্গে মেসিও। স্বার্থহীনভাবে এমবাপে বলটা বাড়িয়ে দেন মেসিকে, তার আলতো টোকা গোলরক্ষককে ফাঁকি দিলেও গিয়ে লাগে বারপোস্টে, পরে নিজেই আরেকটা টোকায় জালে জড়িয়ে গোলটা নিশ্চিত করেন, পিএসজি ফেরে সমতায়।

এর কিছু পরে প্রতিপক্ষ বিপদসীমায় অবৈধভাবে ফেলে দেওয়া হয় এমবাপেকে। পেনাল্টিটা এমবাপে তুলে দেন মেসির হাতে। আর্জেন্টাইন অধিনায়ক পানেনকা পেনাল্টি নিয়ে করেন দ্বিতীয় গোলটা, পিএসজি এগিয়ে যায় ৩-২ গোলে।

জয়টা তখনো নিশ্চিত ছিল না দলটির। শেষ বাঁশির আগ পর্যন্ত মুহুর্মুহু আক্রমণে উঠেছে লাইপজিগ। গোলের দেখা অবশ্য পায়নি। পিএসজিও উঠেছে আক্রমণে, তার শেষটা রুখতে গিয়েই জার্মান দলটি এমবাপেদের আরও একটা পেনাল্টি উপহার দিয়ে বসে। 

সেটাও এমবাপে এগিয়ে দিয়েছিলেন মেসিকে, কিন্তু আর্জেন্টাইন অধিনায়ক সেটা মুচকি হেসে তুলে দেন ফরাসি তারকাকে। এমবাপের সেই চেষ্টা গোলে রূপ পায়নি, পেনাল্টি থেকে দ্বিতীয় গোলটা পায়নি পিএসজি। তবে তাতে কী, ৩-২ গোলের জয় নিয়ে তো ঠিকই পরের পর্বের আরও একটু কাছে চলে গেছে দল!

এনইউ