থিয়েটার অফ ড্রিমস। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ভক্তরা আদর করে ডাকেন এ নামেই। তবে চলতি মৌসুমে ম্যানইউ’র ঘরের মাঠের এ আদুরে নাম যেন প্রতিপক্ষের জন্যই বেশি যুক্তিযুক্ত হয়ে উঠছে। লিভারপুলের পর এবার ম্যানচেস্টার সিটিও স্বপ্নের মতোই এক বিকেল কাটাল ‘থিয়েটার অফ ড্রিমসে’, ডার্বি ম্যাচে নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারালো ২-০ গোলে। মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোরা যে দুঃস্বপ্নের মতো সময় কাটিয়েছেন তা কি আর বলে দিতে হয়?

কোচ ওলে গুনার সোলশায়ারের পদটা নড়বড়ে ছিল আগে থেকেই। আরও একটা বড় ম্যাচে দল হেরেছে একেবারে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই। তাতে তার পদটা আরও নড়বড়ে হলো বৈকি!

আক্রমণভাগে আছেন রোনালদোর মতো প্রমাণিত গোলস্কোরার, কিন্তু সে পর্যন্ত বল গেলে তবেই না হবে গোল! সেজন্যে চাই পরিকল্পনা, কিন্তু ইউনাইটেডের খেলা দেখে সেসব বোঝা বড় মুশকিল। এমনকি দ্বিতীয়ার্ধে যখন সিটি কিছুটা ঢিমেতালে খেলছিল, তখনো দেখা যায়নি বোলার মতো কোনো আক্রমণ। যার ফলে প্রতিপক্ষ গোলমুখে থাকা সিটি গোলরক্ষক এডারসন রীতিমতো অলস সময়ই কাটিয়েছেন। 

প্রথমার্ধে যেমন খেলেছে সিটি আর ইউনাইটেড, তাতে স্কোরলাইনটা যে আরও বড় হয়নি সেটাই বিস্ময়। ভাগ্যিস গোলমুখে ডেভিড ডি গিয়া ছিলেন। নাহয় সেটাও হয়ে যেত বৈকি! দুটো গোলের একটায় অবশ্য তারও ভুল ছিল, দিন শেষে তিনিও তো মানুষ! 

ডি গিয়া ভুল করেছেন বটে, কিন্তু তিনিই ছিলেন একমাত্র ইউনাইটেড খেলোয়াড়, ম্যাচে যিনি পাবেন পাসনম্বর। অ্যারন ওয়ান বিসাকা, এরিক বাইয়ি, ফ্রেডরা যে তাও পাবেন না! 

দুই ক্লাবের লড়াইটা নেহায়েতই একটা লড়াই নয়, মর্যাদার লড়াইও বটে। এমন এক ম্যাচে সোলশায়ার যে বিষয়টাকে এড়াতে চাইতেন, তার দল তাকে ‘উপহার’ দিয়েছে সেটাই। গোল হজম করেছে ম্যাচের শুরুতেই। বাম পাশ থেকে জোয়াও ক্যানসেলোর ক্রস বিপদমুক্ত করতে গিয়ে বাইয়ি নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে বসেন।

ইউনাইটেডের ‘নেই’-এর দিনে সুযোগ একটা অবশ্য এসেছিল। ২৬ মিনিটে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সে শটটাও অবশ্য এডারসন সেভ দিয়েছেন সহজেই। এরপর উল্টোপাশে রীতিমতো ঝড়ই সহ্য করেছেন ডি গিয়া। আট মিনিটে শট ঠেকিয়েছেন পাঁচটি। নাহয় ম্যাচের স্কোরলাইন আরও বীভৎস দেখাতে পারতো তখনই।

বিরতির ঠিক আগে ব্যবধান দ্বিগুণ করে সিটি। ক্যানসেলোর ক্রসে দূরের পোস্ট লক্ষ্য করেচ বের্নার্দো সিলভা করেছিলেন ব্যাকহিল ফ্লিক, খুব জোর না থাকলেও ডি গিয়ার হাত ছুঁয়ে বলটা জড়ায় জালে। ২-০ গোলে এগিয়ে যায় সিটি।

ম্যাচের শুরুতে ৩-৫-২ ছকে দলকে খেলিয়েছিলেন কোচ সোলশায়ার। বিরতির পর বাইয়িকে তুলে জেডন সানচোকে এনে সেটা ৪-২-৩-১ ছকে বদলে দিয়েছিলেন। তবে লাভ হয়নি তাতে, ম্যাচের ফল বদলে দেওয়া তো দূরের কথা, গোলই যে পাননি রোনালদোরা! সিটি এ সময় গোলের চেয়ে বলের দখল ধরে রাখাতেই যেন মনোযোগী ছিল বেশি। সুযোগ তবুও এসেছে বেশ কিছু। ডি ব্রুইনা বেশ কিছু সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন, যার একটাতেই ফিল ফোডেনের শট প্রতিহত হয় ক্রসবারে। তাতে গোলের দেখা আর পায়নি সিটি। ব্যবধানটাও বাড়েনি আর। 

তবে তাতে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে উপস্থিত সিটি সমর্থকদের টীকাটিপ্পনী কমেনি আদৌ। ‘ওলে’স অ্যাট দ্য হুইল’ বলে উপহাস চলেছে শেষতক। ইউনাইটেডের হারের দুঃখটা তাতে গাঢ়ই হয়েছে কেবল!

এনইউ