বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের ১৪তম আসর শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার। পেশাদার ফুটবল লিগের ১৪তম আসর শুরু হওয়ার আগেও প্রতি পদে পদে অপেশাদারিত্বের ছড়াছড়ি। ক্লাবগুলোর অপেশাদারিত্ব দূর করার দায়িত্ব ফেডারেশনের, উল্টো ফেডারেশনের কর্মকাণ্ডে ফুটে উঠেছে অপেশাদারিত্ব।

১৬ জানুয়ারি লিগ কমিটির সভায় সাত ভেন্যুতে প্রিমিয়ার লিগ আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কোন ক্লাবের কোনটিকে হোম ভেন্যু হিসেবে বেছে নেবে, সেটাও নির্ধারিত ছিল। সেই অনুযায়ী অনেক ক্লাব নিজেদের ভেন্যুর পেছনে খরচও করেছিল। ২৯ জানুয়ারি লিগ কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয় এবার কোনো ক্লাবের হোম ভেন্যু থাকবে না, চারটি ভেন্যুতে খেলা হবে সেই ভেন্যুগুলো থাকবে ফেডারেশনের অধীনে। সাত থেকে চার ভেন্যুতে নেমে আসার কারণ ছিল করোনা ইস্যু। অথচ একই সময় তিন ভেন্যুতে হচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেট। এতে প্রশ্ন উঠেছে করোনা কি শুধু ফুটবলেই!

চার ভেন্যুর মধ্যে ছিল বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সও। ২৯ জানুয়ারির সভায় বাফুফের সেই প্রস্তাবে বসুন্ধরা কিংসের নিজেদের হোম হারানোর শঙ্কা থাকলেও তাদের প্রতিনিধি সভায় কোনো নোট অফ ডিসেন্ট দেননি। বাফুফে সচিবালয় থেকে বসুন্ধরা কমপ্লেক্সে অন্য দলগুলোর ম্যাচ আয়োজনের অনুমতি চাওয়া হলে বসুন্ধরা গ্রুপ সেই অনুমতি দেয়নি। 

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১ ফেব্রুয়ারির সভায় লিগ কমিটি বসুন্ধরার ভেন্যু বাদ দিতে বাধ্য হয়। বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতা অনেক ক্লাবে থাকলেও সভায় তাদের পক্ষে কোনো সমর্থন ছিল না। বসুন্ধরার নিজেদের হোম নিজেদেরই ব্যবহার করার যৌক্তিকতা রয়েছে। তবে ২৯ জানুয়ারির সভার সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার পর আর সেই যৌক্তিকতা তেমন টেকে না। ফেডারেশন কাপের ভুল থেকেও শিক্ষা নেয়নি বসুন্ধরা কিংস। ড্র অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে ড্র তুলে পরের দিন ভেন্যুর জন্য টুর্নামেন্ট থেকে প্রত্যাহার। 

দেশের ঐতিহ্যবাহী অনেক দল অর্ধশতাব্দীতে যা করতে পারেনি, চার বছরের মধ্যে বসুন্ধরা কিংস সেটি করে দেখিয়েছে। বাংলাদেশ তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়ায় একটি আলোচিত ঘটনা হতো। এখন উল্টো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের অপরিকল্পনার একটি নিদর্শন হয়ে রইল। 

বাফুফের লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সহ-সভাপতি যিনি ২৯ জানুয়ারি বসুন্ধরা কিংসের ভেন্যুকে খেলার উপযোগী ঘোষণা দিয়েছিলেন সেই তিনিই ১ ফেব্রুয়ারি রাতের সভায় বলেছিলেন যে বসুন্ধরার ভেন্যুও পুরোপুরি প্রস্তুত না। দেশের ফুটবলের দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তির বক্তব্য যেমন সাংঘর্ষিক তেমনি মাঠের ফুটবলে বসুন্ধরা কিংস যতটা দক্ষ ‘টেবিলের’ ফুটবলে তাদের অপরিপক্কতা গত দুই মাসে স্পষ্ট।

পেশাদার লিগ তো বটেই বাফুফের অপেশদারিত্ব চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে আজ বিকেলে আরচ্যারি ফেডারেশন। তাদের ভেন্যু ব্যবহার করবে ফুটবল ফেডারেশন অথচ সেই সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় তো নয়-ই ঠিক মতো চিঠিও দেয়নি বাফুফে। যেটি সংবাদ সম্মেলনে আরচ্যারি ফেডারেশনের সভাপতি বারবার তুলে ধরেছেন। 

ফুটবলাঙ্গনে অনেকেই প্রয়োজনীয় সময় বাফুফে সাধারণ সম্পাদককে মুঠোফোনে পান না। আরচ্যারি ফেডারেশনের সভাপতিও বাফুফের পেশাদার সাধারণ সম্পাদকের উপর সেই অভিযোগ এনেছেন। ঠুনকো বিষয়েও ফিফা-এএফসি’র গাইডলাইন দেখান বাফুফের অনেকেই, ফিফা-এএফসি নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকের পরিবর্তে বেতনভুক্ত সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল পেশাদারিত্বের জন্যই। এই সাধারণ সম্পাদকের অধীনে বাফুফে প্রশাসন প্রায় এক দশক পেরিয়ে গেলেও এখনো অনেক কিছুতেই অপেশাদারিত্বের ছাপ।

আরচ্যারির মতো অজনপ্রিয় একটি খেলাও বছর কয়েক আগে নিজেদের জন্য আলাদা স্টেডিয়াম বরাদ্দ নিয়েছে সরকারের কাছ থেকে। অথচ দেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ফুটবলের নেই আলাদা বিশেষ কোনো স্টেডিয়াম। বাফুফের নিজস্ব কোনো স্টেডিয়াম থাকলে আজ ভেন্যু নিয়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। এই ব্যাপারে মাঝেমধ্যে বাফুফের কিছুটা দৌঁড়ঝাপ দেখা গেলেও কার্যকরী কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি।

অনেক সমালোচনা ও অপেশাদারিত্বকে সঙ্গী করেই আগামীকাল টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্যাহ মাস্টার স্টেডিয়াম ও মুন্সিগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে দুটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল তিনটায় টঙ্গীতে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের মুখোমুখি হবে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ থেকে উঠে আসা নবাগত স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘ। একই সময়ে মুন্সিগঞ্জে গত আসরের রানার্স-আপ শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব খেলবে উত্তর বারিধারার বিপক্ষে। লিগ যত গড়াবে ক্লাব ও ফেডারেশন মিলে আরো কত অপেশাদার ঘটনার জন্ম দিবে সেটাই দেখার বিষয়। 

এবার লিগে অংশ নিচ্ছে বসুন্ধরা কিংস, ঢাকা আবাহনী লিমিটেড, স্বাধীনতা ক্রীড়াসংঘ, পুলিশ ফুটবল ক্লাব, চট্টগ্রাম আবাহনী, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র, রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি, সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব, শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব এবং উত্তর বারিধারা ক্লাব।

এজেড/এমএইচ