ছুটেছে ক্রিকেটও : জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার ভবিষ্যৎ কী
স্বাধীনতার পর থেকে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়াঙ্গন জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা দ্বারা পরিচালিত। ২০০৮ সালে বাফুফে নির্বাচনের আগে জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল এসোসিয়েশন তৈরি হয়েছিল। তখন থেকে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল থেকে আলাদা ৷ এখন দেশের আরেক জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেটও আলাদা হয়ে যাচ্ছে বিভাগীয় ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) এজিএমে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা অনুমোদিত হয়েছে। এই অনুমোদনের ফলে বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলো আর ক্রিকেট বোর্ডের অধীনস্থ থাকছে না।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাউন্সিলর এমবি সাইফ বাংলাদেশের ক্রীড়া প্রশাসনিক কাঠামোর এই বাককে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন, ‘আসলে দেশের তৃণমূলে খেলাধুলা পরিচালিত করে জেলা ক্রীড়া সংস্থা। বিভাগের কর্মকান্ডও জেলার উপর নির্ভরশীল। ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে ক্রিকেটটাই হয় নিয়মিত, ফুটবল তো আলাদাই।জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যে অনুদান দেয় সেটা অফিস পরিচালনাতেই শেষ হয়। বিভাগীয় ক্রিকেট আয়োজনে অনেক ব্যয় হয়। ফলে অন্য খেলা ইচ্ছে করলেও সেভাবে করা যায় না সব সময়। এখন ক্রিকেট বোর্ড আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা করায় ক্রিকেট আরো গতিশীল হবে এবং বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা অন্য খেলাগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে পারবে।’
বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা খেলাধুলা আয়োজন খানিকটা কম হলেও এর সাধারণ সম্পাদকরা অবশ্য ক্রীড়াঙ্গনে বেশ প্রভাবশালী।
বিজ্ঞাপন
ফুটবলের পর ক্রিকেট স্থানীয় ক্রীড়া কাঠামো থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে। দুটি বড় খেলা পৃথক হয়ে যাওয়ায় বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে খানিকটা শঙ্কিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দীন মোহাম্মদ আলমগীর। আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার সঙ্গে বিদ্যমান জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিষয়গুলো আলোচনা সাপেক্ষ বলে মনে করেন তিনি।
জেলা ও বিভাগীয় সংগঠক পরিষদের মহাসচিব আশিকুর রহমান মিকু। তিন দশকের বেশি সময় নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক। বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার মতো জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকেও ক্রিকেট পৃথক হয়ে যাচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে। এর আগে তিনি বিসিবির কাছে দাবি রেখেছেন, ‘জেলা ক্রিকেট সংস্থা অবকাঠামো তৈরি হওয়ার আগে জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে জেলা ক্রিকেট সংস্থা হিসেবে গণ্য করতে হবে৷ আলাদা অফিস, মাঠ এসব নিশ্চিত করে তারপর জেলা ক্রিকেট সংস্থা শুরু করতে হবে।’
গত ১৪ বছর জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে পৃথক ফুটবল। মাঠ জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনে থাকায় অনেক সময় জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন খেলা আয়োজন করতে পারেনি। জেলা ক্রীড়া সংস্থার ভবনেই দুই একটি কক্ষে জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতির দ্বন্দ্বে খেলা ব্যঘাত থেকেছে অনেক সময়। এই সব অভিজ্ঞতা থেকে মিকুর উপলব্ধি, ‘ফুটবল ফেডারেশন ডিএফএ জন্ম দিলেও সেটাকে সেভাবে সহায়তা করতে পারেনি। তাই ক্রিকেটকে অবকাঠামো আর্থিক বিষয়গুলো নিশ্চিত করেই পথ চলতে হবে।’
সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহিউদ্দিন আহমেদ সেলিম সিলেট জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনেরও সভাপতি। তিনি বাফুফের নির্বাহী সদস্য আবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও কাউন্সিলর। জেলা ক্রিকেট সংস্থার ফলে জেলা ক্রীড়া সংস্থার মর্যাদা কমার সম্ভাবনা দেখছেন, ‘বড় দুটি খেলা জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে আলাদা হয়ে গেলে ক্রীড়া সংস্থার গুরুত্ব ও মর্যাদা কমবে নিঃসন্দেহে। তখন আর জেলা ক্রীড়া সংস্থার জৌলুস সেভাবে থাকবে না।’ জেলা ক্রীড়া সংস্থার গুরুত্ব হারালেও ক্রিকেটের জন্য ভালো হবে বলে মনে করেন তিনি।
নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে ক্রিকেট আলাদা হলে অন্য খেলার সম্ভাবনা দেখছেন, ‘ক্রিকেট অনেক ব্যয়বহুল। একটি ক্রিকেট লিগ করতে গেলে অনেক জেলা ক্রীড়া সংস্থা অর্থ শূন্য হয়ে পড়ে৷ এখন ক্রিকেট আলাদা হলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অর্থ দিয়ে অন্য খেলাগুলো পরিচালিত হবে।’
দুই প্রধান খেলা ফুটবল ও ক্রিকেট জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রায় আওতামুক্ত। দেশের ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে বিসিবি ও বাফুফে আওতামুক্ত হলেও সেই এনএসসির স্থাপনাই তারা ব্যবহার করে। দেশের সব স্টেডিয়ামই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধীনে। জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন ও আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থাকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার উপরই নির্ভরশীল থাকতে হবে মাঠ ব্যবহারের জন্য। ক্রীড়া বিশ্লেষকদের মতে, খেলার উন্নয়নের পাশাপাশি নির্বাচনে ভোটের রাজনীতিতে পূর্ণ কর্তৃত্ব রাখতেই দেশের দুই বড় খেলার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই পথে।
ফুটবল ও ক্রিকেটই সকল জেলায় খেলা হয়। দুই খেলার বাইরে অনেক খেলা রয়েছে যেগুলো কিছু জেলা হয় আবার কিছু জেলা হয় না। অনেক জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশন রয়েছে ক্লাব ভিত্তিক; জেলা পর্যায়ে প্রসার হয়নি। ফুটবল আলাদা হওয়ার পর জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার রক্ষাকবচ ছিল ক্রিকেট। সেটিও এখন চলে যাচ্ছে। ফলে অনেক জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা অদূর ভবিষ্যতে নাম সর্বস্ব হয়ে গেলে অবাক হওয়ার থাকবে না।
এজেড/এটি