সত্তর-আশির দশকে জনপ্রিয় খেলাগুলোর একটি ছিল বাস্কেটবল। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ কামালের প্রিয় খেলাও ছিল এটি। শেখ কামাল ঢাকা স্পার্স, ওয়ান্ডারার্স এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে বাস্কেটবল খেলেছেন। অথচ সময়ের বিবর্তনে শেখ কামালের প্রিয় বাস্কেটবল এখন অস্তিত্বের সংকটে।

ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক একে সরকার দেশের বাস্কেটবলের একজন কিংবদন্তি। তিনি নিজেও ওয়ান্ডারার্সে শেখ কামালের সঙ্গে খেলেছেন। শেখ কামালের বাস্কেটবল প্রেম ও বর্তমান সংকট সম্পর্কে একে সরকার বলেন, ‘শেখ কামাল বাস্কেটবল খুবই ভালোবাসতো। ওয়ান্ডারার্সে আমরা একসঙ্গেই খেলেছি। সে নিজে বাস্কেটবল খেলেছে, আবার আবাহনী ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতাও শেখ কামাল। আবাহনীর শেখ কামালের কমপ্লেক্সের জন্য আমরা বাস্কেটবল কোর্ট ও ফেডারেশন ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু এখনো বিকল্প কিছু পাইনি।’

আবাহনী ক্লাবের প্রথম ফুটবল অধিনায়ক আব্দুস সাদেকও জানেন কামালের বাস্কেটবল প্রেমের গল্প, ‘কামাল ক্রিকেট খেলেছে, তবে ওর বেশি পছন্দ ছিল বাস্কেটবল-টা। টিমমেট হিসেবে কামাল ছিল দুর্দান্ত।’

আরও পড়ুন >> বাংলাদেশের ‘প্রথম’ সেঞ্চুরির ৪০ বছর

এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের বাস্কেটবলের অধিনায়কত্বও করেছেন কামাল। তাকে নিয়ে মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান ইউসুফ রহমান বাবু, ‘শেখ কামাল বাস্কেটবলের প্রতি খুবই উৎসাহী ছিলেন। প্রতিটি অনুশীলনে আসতেন সময়মতো এবং খেলার সময়গুলোতেও বেশ উৎসাহী ছিলেন। স্পার্সের হয়ে আমরা অনেক ম্যাচ খেলেছি।’

ক্রিকেটার হলেও বাস্কেটবল বাবুর প্রিয় খেলা। ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর বাস্কেটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন বাবু। সেই সময়ের জনপ্রিয় খেলা এখন অস্তিত্বের সংকট তাকে বেশ পীড়া দেয়। গত এক দশকের বেশি সময় ধরেই বাস্কেটবল কোর্ট সমস্যায় ভুগছিল। দুই বছর ধরে নেই বাস্কেটবলের নিজস্ব কোর্টও। মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে ফেন্সিং, জুডো, কারাতেসহ অন্য খেলার সঙ্গে সমন্বয় করে কোর্ট ব্যবহার করতে হয় বাস্কেটবলকে।

এজন্য টুর্নামেন্টের দৈর্ঘ্য অনেক কমে আসছে বলে দাবি সাবেক বাস্কেটবল খেলোয়াড় ও কোচ খালেদ মাহমুদ আকাশের, ‘আগে যে টুর্নামেন্ট ৭-১০ দিন ব্যাপী হতো, এখন কোর্ট ব্যবহারের স্বল্পতার জন্য ৩-৪ দিনে শেষ হয়। সকালে খেলেই আবার বিকেলে খেলা। এতে খেলোয়াড়দের ওপর চাপ বাড়ে এবং প্রভাব পড়ে পারফরম্যান্সেও।’

আরও পড়ুন >> বাস্কেটবলের বুলবুল আর নেই

ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক একে সরকার শত সমস্যার মধ্যে থেকেও নিরাশাবাদী নন, ‘স্বল্প অনুশীলনেও কিছুদিন আগে মালদ্বীপে আমরা রানার্স-আপ হয়েছি। ঢাকার মধ্যে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে কোর্ট দেওয়ার মতো জায়গা নেই। পূর্বাচলে আমাদের জায়গা পাওয়ার একটি আশ্বাস রয়েছে। ফেডারেশনের অফিসটি এখন বেশি প্রয়োজন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আমাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আশ্বাস দিয়েছে শিগগিরই আমাদের অফিসের জায়গা দেবে। আবাহনীর শেখ কামাল ক্রীড়া কমপ্লেক্সে বাস্কেটবল কোর্ট থাকবে, সেই কোর্ট ফেডারেশনকেও ব্যবহার করতে দেওয়ার কথা।’

অনেক ক্ষেত্রে মিরপুর ইনডোর না পেয়ে বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের ছুটে যেতে হয় জেলা শহরগুলোতে। অন্যদের কোর্ট ব্যবহার করে খেলা-অনুশীলন কোনোভাবে চললেও; নেই বাস্কেটবল ফেডারেশনের কোনো ঠিকানা। যার কারণে বাস্কেটবল এখন ‘উদ্বাস্তু’ ফেডারেশনের আখ্যা পেয়েছে ক্রীড়াঙ্গনে। 

আশির দশক পর্যন্ত বাস্কেটবল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ছিল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম কমপ্লেক্স এলাকায়। নব্বইয়ের পর থেকে বাস্কেটবল চলে যায় আবাহনী ক্লাবের পেছনে। সেখানেই বাস্কেটবল কোর্ট ও ফেডারেশন ছিল। ২০১১ সালের পর থেকে উডেনফ্লোর কোর্টে সমস্যা দেখা দেয়। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মাঝেমধ্যে সেই কোর্ট মেরামতও করেছে। পরবর্তীতে আর আগ্রহ দেখায়নি ফেডারেশন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। কারণ উডেন ফ্লোরটি নিয়েই আবাহনী শেখ কামাল ক্রীড়া কমপ্লেক্সের পরিকল্পনা ছিল।

বছর দুয়েক আগে কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ শুরু হলে বাস্কেটবল কোর্ট ও ফেডারেশন সেটি ছেড়ে দেয়। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এখন পর্যন্ত বিকল্প কোনো স্থায়ী কোর্ট এবং ফেডারেশনের অফিস কোনোটিই দিতে পারেনি। মিরপুর ইনডোরের একটি কক্ষে ফেডারেশনের কাগজপত্র, খেলার সরঞ্জামাদি সবকিছু একত্রে স্তুপ আকারে রাখা। কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জন্য নেই কোনো কক্ষও। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক একে সরকার বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ। ফলে বিওএ ভবনে তার কক্ষেই কোনোমতে ফেডারেশনের প্রশাসনিক কার্যক্রম সারছেন।

আবাহনী ক্লাবের প্রথম ফুটবল অধিনায়ক আব্দুস সাদেকও জানেন কামালের বাস্কেটবল প্রেমের গল্প, ‘কামাল ক্রিকেট খেলেছে, তবে ওর বেশি পছন্দ ছিল বাস্কেটবল-টা। টিমমেট হিসেবে কামাল ছিল দুর্দান্ত।’

আরও পড়ুন >> এশিয়ান বাস্কেটবলের কমিটিতে বাংলাদেশ

ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক একে সরকার শত সমস্যার মধ্যে থেকেও নিরাশাবাদী নন, ‘স্বল্প অনুশীলনেও কিছুদিন আগে মালদ্বীপে আমরা রানার্স-আপ হয়েছি। ঢাকার মধ্যে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে কোর্ট দেবার মতো জায়গা নেই। পূর্বাচলে আমাদের জায়গা পাওয়ার একটি আশ্বাস রয়েছে। ফেডারেশনের অফিসটি এখন বেশি প্রয়োজন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আমাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আশ্বাস দিয়েছে শিগগিরই আমাদের অফিসের জায়গা দেবে। আবাহনীর শেখ কামাল ক্রীড়া কমপ্লেক্সে বাস্কেটবল কোর্ট থাকবে, সেই কোর্ট ফেডারেশনকেও ব্যবহার করতে দেওয়ার কথা।’

দেশের ক্রিকেট এখন মিরপুরে গেলেও বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের দ্বিতীয় তলায় ক্রিকেট বোর্ডের অফিস রয়েছে ছোট্ট আকারে। যদিও তারা সেই অফিসটি ব্যবহার করে না। কয়েক মাস আগে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে চিঠির মাধ্যমে তাদের অফিস হস্তান্তর করেছিল ক্রিকেট বোর্ড। বাস্কেটবলের জন্য এই উদ্যোগ নিলেও অন্য ফেডারেশনগুলোর চোখও এখন ক্রিকেট বোর্ডের পুরাতন অফিসের ওপর। তাই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদও পড়েছে সংকটে। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের নীতি-নির্ধারকদের প্রায় সবাই শেখ কামালের বন্ধু ও ঘনিষ্ঠজন। এরপরও শেখ কামালের প্রিয় খেলার সামগ্রিক চিত্রটি বড়ই করুণ! 

এজেড/এএইচএস