দেশজুড়েই আলোচনায় জাতীয় নির্বাচন। বর্তমান যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলও ব্যস্ত নির্বাচনী কার্যক্রমে। গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন দুই মেয়াদে। এখন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। জাহিদ আহসান রাসেলের সঙ্গে ঢাকা পোস্টের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার আরাফাত জোবায়ের আলাপ করেছেন তার মেয়াদের নানা বিষয় নিয়ে।

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে প্রায় পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে, আপনার এই সময়কাল কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন।

জাহিদ আহসান রাসেল : আসলে সব কিছুতেই পাওয়া না পাওয়া থাকেই। মানুষ তার স্বপ্ন বা আশা শতভাগ পূরণ করতে পারে না। তারপরও আমি চেষ্টা করেছি গত পাঁচ বছর ক্রীড়াঙ্গনকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার। আপনারা জানেন প্রথম বছরটি আমি শুধু নির্বিঘ্নে কাটাতে পেরেছিলাম। এরপর বৈশ্বিক মহামারি করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা। তারপরও আমি চেষ্টা করেছি ক্রীড়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। 

এই মেয়াদের মধ্যে আমাদের বিশেষ কিছু অর্জন রয়েছে ক্রিকেটে যুব বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন, দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে সর্বোচ্চ পদক জয়, আরচ্যারিও অনেক ভালো ফলাফল করেছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল খেলাধুলায় প্রশিক্ষণ খাতে বাজেট বাড়ানো। করোনার জন্য অনেক কিছুতে হ্রাস করতে হয়েছে। বিদেশ সফর যখন নিয়ন্ত্রিত ছিল তখনও আমরা ক্রীড়াবিদদের বিদেশে পাঠিয়েছি। 

অবকাঠামো যেন সুন্দরভাবে হয় সেই চেষ্টা করেছি। শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের কাজ চলমান রয়েছে। হয়েছে ভলিবল, কাবাডিসহ অনেক ইনডোর স্টেডিয়াম। আমরা নতুন কিছু বিষয়ও চালু করেছি। বঙ্গবন্ধু ক্রীড়া শিক্ষা বৃত্তি চালু করেছি। বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় গেম, বঙ্গবন্ধু অ-১৭ টুর্নামেন্টও হয়েছে। গত পাঁচ বছর খেলোয়াড়দের ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছি। বঙ্গবন্ধু ক্রীড়া কল্যাণসেবীর ফান্ড আগে ছিল ১৭ কোটি টাকা। এখন সেটা ৬৭ কোটি। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় এটি সম্ভব হয়েছে।

সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ সংস্থার দুর্বলতা-সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত ছিলেন। নিজে দায়িত্ব নিয়ে সেই বিষয়গুলো দূর করতে পেরেছেন?

জাহিদ আহসান রাসেল : সংসদীয় কমিটির ১০ বছরে আমি অনেক কিছুই জেনেছিলাম। স্পোর্টসের কোন বিষয়ে কাজ করা উচিৎ। কোথায় লেকিংস ( দুর্বলতা) রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা সমন্বয় করে গত পাঁচ বছরে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছি। একই কথা আবার বলতে হয় মহামারি দুর্যোগে চার বছর বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এত বড় বিপর্যয়, আমাদের প্রজন্মের মানুষ কখনও দেখেনি। পাঁচ বছরে আমার অনেক ইচ্ছে ছিল, সব কিছু পূরণ করতে পারিনি। আমার আগ্রহ আছে, ছিল ও থাকবে। ভবিষ্যতে আবার কখনও সুযোগ পেলে সেই অপূর্ণ ইচ্ছেগুলো পূরণ করব।

আন্তর্জাতিক বড় মাপের ক্রীড়া আসর আয়োজন ও ক্রীড়ার মানন্নোয়নে অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। 

জাহিদ আহসান রাসেল : অলিম্পিক ভিলেজের জন্য সব কিছু রেডি করেছিলাম। নতুন প্রকল্পে অর্থ ছাড়ের ব্যাপারে কিছুটা অনাগ্রহী ছিল সরকার। এতে আমরা অর্থ পাইনি। আমাদের কিছু বাস্তবতাও অনুসরণ করতে হবে। খাদ্য কেনার জন্য বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে; দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, বিদ্যুৎসহ জরুরি কিছু খাত ছিল। 
নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও ১৬০০ কোটি টাকার প্রজেক্ট শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম। এটি কয়েকটি ধাপে নির্মিত হচ্ছে।

দেশের ক্রীড়াঙ্গনে অন্যতম প্রধান ভেন্যু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। আড়াই বছরের পরও স্টেডিয়াম নির্মাণাধীন। আপনার মেয়াদের মধ্যে শেষ না হওয়ায় কোনো অতৃপ্তি আছে?

জাহিদ আহসান রাসেল : এটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হতে পারত। দুযোর্গের কারণে হয়নি। নির্মিতব্য মালামাল বিদেশি। পণ্য আমদানিও বন্ধ ছিল অনেকদিন। ফলে কাজ করা সম্ভব হয়নি। ফ্লাডলাইট ও আনুষঙ্গিক কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিছুদিন পর দরপত্র আহবান করা হবে। আগামী বছরের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।

আপনার সময়ে অবকাঠামোগত খাতে অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন, তবে বেশ কিছু ফেডারেশনের অবকাঠামো সমস্যাও রয়েছে। ভারত্তোলন, জিমন্যাস্টিক্স, বাস্কেটবল, কুস্তিসহ অনেক ফেডারেশনেরই নিজস্ব ভেন্যু নেই। সাতারে নেই ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ড।

জাহিদ আহসান রাসেল : আমরা চেষ্টা করেছি সবার সমস্যা নিয়েই কাজ করার। কিছু হয়তো পেরেছি, কিছু পারিনি। আমাদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এখন অনেক ফেডারেশন সমস্যায় থাকলেও আশা করি কয়েক বছরের মধ্যেই সমাধান হবে। পূর্বাচলে অনেক ফেডারেশন তাদের স্থায়ী ঠিকানা পাবে। বিসিবি নিজস্ব উদ্যোগে স্টেডিয়াম করলেও তারা আমাদের বিবেচনা আমলে নিয়ে অন্যদেরও জায়গা দিচ্ছে। 

পাঁচ বছর পর নির্দিষ্ট সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ক্রীড়াঙ্গনের সকল ফেডারেশনই চার বছর মেয়াদের। এখনও অনেক ফেডারেশনে অ্যাডহক কমিটি, আবার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি। ক্রীড়াঙ্গনে নির্বাচন অনিয়মিত কেন?

জাহিদ আহসান রাসেল : পাঁচ বছর আগের তুলনায় এখন অনির্বাচিত ও মেয়াদোত্তীর্ণ সংখ্যাটা অবশ্যই কমেছে। টেনিসে দীর্ঘদিন নির্বাচিত কমিটি ছিল না। সেই ফেডারেশনে নির্বাচন হয়েছে। গত দুই তিন মাসের মধ্যে অনেকগুলো ফেডারেশনের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। 

গত পাঁচ বছরে আপনি আপনার কাজকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন। নিজেকে দশের মধ্যে মার্কিং করতে বলা হলে কত দেবেন?

জাহিদ আহসান রাসেল : নিজেকে দিয়ে আমি বিচার করতে পারি না। আমি কাজ করেছি, কাজের মানুষ। করোনাকালীন সময় আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ মানুষের পাশে ছিলাম। ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে ক্রীড়াঙ্গনেও ছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তখন সাড়ে নয় কোটি টাকার অনুদান দিয়েছিলেন খেলোয়াড়দের জন্য। ওই সময় আমি একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সহায়তা করেছি। এটা আমার শান্তির জায়গা, গত পাঁচ বছরে আমি নিবিড়ভাবে খেলোয়াড়দের পাশে ছিলাম এবং সহায়তা করতে পেরেছি। খেলোয়াড়রা বা ক্রীড়াঙ্গনের কেউ বিপদে পড়লে সহযোগিতা পেতে পারে— আগে এমন ধারণা ছিল না। গত পাঁচ বছরে যে দরখাস্ত করেছে, যাচাই-বাছাই করে সবাইকে দিয়েছি। আমি চেষ্টা করেছিলাম, শতভাগ শেষ করতে পারেনি; আমার চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। 

এজেড/এএইচএস