ওয়ার্ল্ড আরচ্যারি এশিয়ার কংগ্রেস শেষ। নব নির্বাচিত সভাপতি বাংলাদেশ আরচ্যারি ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দিন আহমেদ চপল। এশিয়ার আরচ্যারির সর্বোচ্চ ব্যক্তিকে ক্রেস্ট, ফুল দিতে সবার ভিড়। অনেক দেশের ফেডারেশনের কর্মকর্তারা আবার ফ্রেমবন্দিও হয়েছেন। 

একটি খেলায় এশিয়া মহাদেশের সংস্থার সর্বোচ্চ পদে বাংলাদেশের কেউ। ব্যক্তি চপল ও আরচ্যারি ফেডারেশনের গন্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্যও বেশ বড় অর্জন। তাই সভাপতি হয়ে চপল কৃতজ্ঞতা ও দায়বদ্ধতা প্রকাশ করেছেন প্রথমে দেশের প্রতি, ‘দোয়া করেন, যাতে বাংলাদেশের মান-মর্যাদা রক্ষা করতে পারি। এই যে সুযোগটা আমাকে দিয়েছে, বাংলাদেশের মতো একটা দেশ, তারা (এশিয়ার অন্য দেশ) আমাদেরকে যে সম্মানটা দিয়েছে, এই সম্মানটা যাতে আমি ধরে রাখতে পারি।’

চপলের বিপক্ষে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার টমাস হান। যিনি এশিয়ান আরচ্যারির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এবং এবার সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। এশিয়ার আরচ্যারির সদস্য ৪০ দেশ। ঢাকায় সরাসরি এসেছেন ৩২ দেশের প্রতিনিধি। অনলাইনে আজ ভোটাভুটিতে হান পেয়েছেন মাত্র ৯ ভোট। সেখানে চপল ২৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত।

ঢাকায় চপলের কাছে হেরেও তেমন কোনো দুঃখ নেই এই কোরিয়ানের, ‘চপল যোগ্য সভাপতি। তার নেতৃত্বে এশিয়ার আরচ্যারি এগিয়ে যাবে। আমারও ধারণা ছিল চপলই সভাপতি হবে। তার প্রতি শুভকামনা।’

এশিয়ান আরচ্যারিতে দীর্ঘদিন রাজত্ব ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার। হুন্দাই গ্রুপের কর্ণধার চুং ছিলেন সভাপতি। তিনি সভাপতি হওয়ায় এশিয়ার আরচ্যারির কার্যালয় ও সাধারণ সম্পাদকও ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার। এবার চুং নিজে প্রার্থী হননি। তার অনুগত হান হয়েছিলেন। 

কোরিয়ার বলয় ভেঙে চপল বাংলাদেশকে ভিন্ন পরিচয়ে এশিয়ান আরচ্যারিতে প্রতিষ্ঠিত করলেন। এই পথ পরিক্রমা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে কনফিডেন্স তো অবশ্যই ছিল। ওভার কনফিডেন্স বলা যাবে না। কারণ গতকাল রাতে আমরা চারটি সার্ভে রিপোর্ট পেয়েছি যে আমি কত ভোট পেতে পারি। চারটি গ্রুপই আমাকে রেজাল্ট দিলো ২৯। তো পঞ্চম রিপোর্টেও ফাইনালে গিয়ে পেলাম ২৯। এটি একটি বিরল দৃষ্টান্ত, এই এশিয়ার আর্চারি ফেডেরাশনের ইতিহাসে। এত বড় ঘটনা কখনো ঘটেনি। এতো ডিফারেন্স কখনো হয়নি।’

এশিয়ার আরচ্যারির সভাপতি যিনি হন, সেই দেশেই এশিয়ার আরচ্যারির অফিস। সেই মোতাবেক এখন বাংলাদেশেই এশিয়ান আরচ্যারির কার্যালয় হওয়ার কথা। এ নিয়ে চপল বলেন, ‘৪০ বছরে একটা পর একটা পরিবর্তন এসেছে। আমরা কখনো ভাবিনি যে এটা কোনো পরিবর্তন হতে পারে। তো এবার যেহেতু হয়েছে, এটা নিয়ে একটা নতুন চিন্তা-ভাবনা চলছে, চলবে। সবার মতামত নিয়েই একটা সুবিধাজনক জায়গায় আমি এই হেডকোয়ার্টার স্থাপন করবো। আর আমাদের বাংলাদেশ সরকার আমাকে যদি সেই সুযোগটা দেয় যে, ঠিক আছে হেডকোয়ার্টার বাংলাদেশে করো, আমরা জায়গা দিচ্ছি। জায়গা দিলে আমি স্থাপনা করে নেব। একটা জায়গা বা একটা ফ্ল্যাট দিলে, হয়তো হেডকোয়ার্টারটা বাংলাদেশে নিয়ে আসতে পারব।’

বাংলাদেশে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার অফিস রয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনের মধ্যে শুধু ঢাকায় সাফের কার্যালয়। প্রথমে বাফুফে ভবনে সাফ সচিবালয় থাকলেও এখন সেটা বনানিতে আলাদা অফিস। এর ব্যয় অবশ্য পুরোটাই সাফই বহন করে। বাংলাদেশ সরকার কিংবা বাফুফের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

বাংলাদেশ আরচ্যারির মাধ্যমেই তার প্রকৃত সংগঠকের পথচলা শুরু। এরপর এশিয়ান আরচ্যারি ও বিশ্ব আরচ্যারির নানা কমিটিতে কাজ করেছেন। এশিয়ার আরচ্যারির প্রধান হয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আরো যোগসূত্র বাড়ানোর ব্যাপারে তার ভাবনা, ‘আমি যদি এশিয়ান ফেডারেশনের কিছু উন্নতি করতে চাই, অবশ্যই সেটা বাংলাদেশকে নিয়েই আমাকে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ আমার ফাউন্ডেশন তো আমি নষ্ট করতে পারি না। আমার যেখান থেকে আবার স্টার্ট শুরু হয়েছে, আমার শিকড়টাকে তো আমার ঠিক রাখতে হবে। এটা ঠিক থাকলে আমি এশিয়া কেন, আমি পুরো বিশ্বেই জয় করতে পারব।’

ওয়ার্ল্ড আরচ্যারি এশিয়া এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ও আরো কয়েকটি নিয়মিত আসর করে। চলমান প্রতিযোগিতার বাইরে আরো কিছু করার পরিকল্পনা নিয়ে নতুন সভাপতি বলেন, ‘আমার দরকার একটা ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট কমিশন। যেটা ইয়ুথদের উন্নতি, স্কুল লেভেলের উন্নতি হবে। তারপর মানে উইমেনস ডেভেলপমেন্ট কমিশন। কারণ আমরা দেখছি দিন দিন পুরো বিশ্বেই উইমেনসের পার্টিসিপেশনটা কমে যাচ্ছে। এটাকে বৃদ্ধি করতে হবে। একটা ইকুয়াল জেন্ডার আমরা যাতে রাখতে পারি, একটা উইমেনস কমিশন আমরা গঠন করতে যাচ্ছি। পাশাপাশি এশিয়ায় ছয়টি আরচ্যারি সেন্টার করতে চাই।’

আজকের কংগ্রেসে বাংলাদেশ আরচ্যারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ এশিয়ার প্যারা আরচ্যারি কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছেন। চপল এশিয়ান আরচ্যারির সভাপতি হওয়ায় সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ থেকেই মনোনীত হবে। সেটা তানভীরের হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। বিকেএসপির আরচ্যারি কোচ নূর আলম কোচেস ও টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য মনোনীত হয়েছেন।

এজেড/এফএইচএম/