স্বপ্নের মেঘেরা ভেসে বেড়ায় আকাশে। ছোঁয়া যায় না, কেবল তাকিয়ে থাকা যায় শূন্য দৃষ্টিতে। সিদ্দিক আর গলফের মাঝে তফাৎটা কি এমন ছিল? সে উত্তর এখনো অজানা। তবে ব্যবধান যাই থাক, সিদ্দিক দূর করেছেন সবটুকু। স্বপ্নকে ছুঁয়ে হয়েছেন দেশের প্রথম পেশাদার গলফার, এই গল্পটা তার!

মুক্তিযুদ্ধের পর সিদ্দিকের বাবা চলে এসেছিলেন ঢাকায়, বেঁচে থাকার তাগিদে। উঠেছিলেন ঢাকার একটু বাইরে ধামরাইলের এক বস্তিতে। সন্ত্রাস, খুন আর ঝগড়া যেখানে নিত্যদিনের সঙ্গী। তবে জীবন সিদ্দিকুরের জন্য লিখে রেখেছিল ভিন্ন কিছু।

পাশের বাড়ির বন্ধুর সঙ্গে হুট করেই একদিন চলে আসেন কুর্মিটোলার গলফ ক্লাবে। কাজ শুরু করেন এখানে, বলবয় হিসেবে। সাহেবদের বল কুড়াতে কুড়াতে পেয়ে যান পদোন্নতি। হন ক্যাডি, তখন তার দায়িত্ব গলফ খেলতে আসা সাহেবদের সরঞ্জাম নিয়ে ঘুরে বেড়ানো। তখনই শুরু হয় তার গলফ চর্চা।

সিদ্দিকের ভাগ্য পুরোপুরি বদলে যায় ২০০০ সালে। বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশন উদ্যোগ নেয় বলবয় ও ক্যাডিদের ভেতরে থাকা প্রতিভাবানদের খুঁজে বের করার। শুরু হয় ক্যাম্প। সিদ্দিকের ধৈর্য্য ও জিততে চাওয়ার মানসিকতা ছাড়িয়ে যায় সবকিছু। শুরু হয় তার গলফার হিসেবে আনুষ্ঠানিক পথচলা।

অপেশাদার গলফার হিসেবে জিততে শুরু করেন একের পর এক ট্রফি, বারোটি। এরপর তার এই সাফল্য তাকে বানায় পেশাদার গলফার। ২০০৮ সালে পেশাদার গলফার হিসেবে আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু হয় তার। 

২০০৮ ও ২০০৯ সালে ভারত ও বাংলাদেশ সার্কিটের ৪টি পোশাদার শিরোপা জেতেন সিদ্দিক। তার সব সাফল্য ছাপিয়ে যায় ২০১০ সালে এসে। সিদ্দিকুর গড়েন অনন্য এক কীর্তি। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এশিয়ান ট্যুরে স্থান পাবার পর পরই ১ আগস্ট প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি জয় করেন এশিয়ান ট্যুর-এর শিরোপা। ২০১৩ সালের নভেম্বরে হিরো ইন্ডিয়া ওপেন গলফ টুর্নামেন্টেও তিনি চ্যাম্পিয়ন হন।

২০১৬ রিও গেমসে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পতাকা বহন করার সম্মানও দেওয়া হয় তাকে। নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে সিদ্দিকুর শূন্য থেকে উঠেছেন সাফল্যের শিখরে। হয়েছেন দেশের প্রথম পেশাদার গলফার। এই পথে পা বাড়ানো বাকিদের জন্য আদর্শ ও বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাস।

এটি/এনইউ