ফাইল ছবি

সুপ্রিয় ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী বন্ধুরা, শুভেচ্ছা নিয়ো। কেমন আছো তোমরা? মনে হয় সামান্য একটু চিন্তার মধ্যেই আছো। তোমরা হয়ত কখনোই ভাবতে পারোনি যে, তোমাদের এসএসসি পরীক্ষা এভাবে পিছিয়ে যাবে। সাধারণত প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে পরীক্ষা হয়ে থাকে। কোভিড-১৯ গ্রাস করেছে সমস্ত বিশ্বকে। তবে আশার কথা হলো, টীকা এসে গেছে। আমরা এখন জয়ের পথে। আশাকরি খুব শীঘ্রই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

এখন অফুরন্ত সময় তোমাদের হাতে। তোমাদের পরীক্ষা কবে শুরু হবে এটা এই মুহূর্তে বলা অসম্ভব। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্ভাব্য তারিখ জুন/জুলাই মাসে। তাই এ মুহূর্তে তোমাদের বসে থাকলে চলবে না। তোমরা তোমাদের প্রস্তুতি চালিয়ে যাও। এসএসসি পরীক্ষায় বাংলা প্রথম দ্বিতীয় পত্রে এ প্লাস পেতে তোমাদের যা মনে রাখতে হবে তাহলো-

বাংলা প্রথম পত্র নিয়ে পরীক্ষার্থীরা তোমরা অনেকেই হয়তো কিছুটা দ্বিধা ও সংশয়ের মধ্যে আছো। কিন্তু কোনো ভয়-ভীতি বা সংশয়ে থাকার কোনো কারণ নেই। কেননা কিছু নিয়ম-কানুন অনুসরণ করলে দেখবে, এ পরীক্ষাটাই তোমার সবচেয়ে ভালো হয়েছে। তোমরা এর আগেও সৃজনশীল পদ্ধতিতে একটা পাবলিক অর্থাৎ জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছ, তাই বলা যায় এ বিষয়ে তোমরা অনেকটাই অবগত। স্কুল বন্ধের এ সময়ে বোর্ড প্রদত্ত এসএসসি পরীক্ষার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে বাংলা প্রথম পত্রের সৃজনশীল পদ্ধতিতে তোমরা কীভাবে প্রস্তুতি নেবে তা নিচে আলোচনা করা হলো-

বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্র চারটি বিভাগে বিভক্ত থাকবে। ‘ক’ বিভাগে (গদ্য) ৪টি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে, ‘খ’ বিভাগে (কবিতা) ৩টি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে, ‘গ’ বিভাগে (সহপাঠ-উপন্যাস) ২টি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে এবং ‘ঘ’ বিভাগে (সহপাঠ-নাটক) ২টি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে । তোমাদের  ‘ক’ বিভাগ থেকে কমপক্ষে ২টি, ‘খ’ বিভাগ থেকে কমপক্ষে ২টি, ‘গ’ বিভাগ থেকে কমপক্ষে ১টি এবং ‘ঘ’ বিভাগ থেকে কমপক্ষে ১টিসহ মোট ৭টি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে। নম্বর থাকবে ৭০। সময় ২ঘন্টা ৩০মিনিট। বহুনির্বাচনি প্রশ্নে থাকবে ৩০ নম্বর। আর এক্ষেত্রে  তোমরা একটি প্রশ্নের পূর্ণাঙ্গ উত্তর করতে ২২-২৩ মিনিটের বেশি সময় নেবে না। এর চেয়ে বেশি সময় নিলে তুমি বাকি প্রশ্নের উত্তর শেষ করতে পারবে না।

বাংলা প্রথম পত্রে সৃজনশীল পদ্ধতিতে যেহেতু চারটি অংশ (জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা) মিলে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশ্ন, তাই প্রত্যেক অংশের উত্তর লেখার সময় প্রতিবার নম্বরটা নিচের মতো করে লিখবে। যেমন : তুমি ৩ নম্বর প্রশ্নটা উত্তর করবে। সেক্ষেত্রে, ৩ নং প্রশ্নের উত্তর (ক), ৩ নং প্রশ্নের উত্তর (খ), ৩ নং প্রশ্নের উত্তর (গ), ৩ নং প্রশ্নের উত্তর (ঘ) এভাবে লিখবে। আর এ লেখাগুলো ভিন্ন রঙের অর্থাৎ সবুজ/নীল/মেরুন/বাদামী ইত্যাদি কালি দিয়ে লিখলে তা হাইলাইটস হবে এবং পরীক্ষকও সহজে প্রশ্ন নম্বরটি বুঝতে পারবেন।

একই প্রশ্নের উত্তর ধারাবাহিকভাবে করবে : যেকোনো একটি প্রশ্নের উত্তর লেখা শুরু করলে তার চারটি অংশের উত্তরই ধারাবাহিকভাবে করবে। একটি প্রশ্নের জ্ঞানের উত্তর আরেক প্রশ্নের প্রয়োগের উত্তর এভাবে করবে না। কোনো উত্তর যদি কেউ না পারো সেক্ষেত্রে সেটা বাদ দিয়ে তার পরের অংশের উত্তর করবে। জায়গা ফাঁকা রাখার দরকার নেই।

সঠিক বানানে জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তর লিখবে : জ্ঞানমূলক প্রশ্নে ১ নম্বর থাকে। এর উত্তর একটি শব্দে, একাধিক বা একটি বাক্যে দেবে। তবে এ স্তরের উত্তর একটি পূর্ণাঙ্গ বাক্যে দিলে ভালো। আর এক্ষেত্রে মনে রাখবে জ্ঞানমূলক প্রশ্নে যে তথ্যটি জানতে চাওয়া হয়েছে সেটির বানান ভুল করলে উত্তর কাটা যাবে এবং শূন্য পাবে। যেমন- ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার রচয়িতা কে? এখানে ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত’-এর নামের বানান ভুল করলে উত্তর কাটা যাবে।

অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরে  কবি/সাহিত্যিককে নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করবে না : অনুধাবনমূলক প্রশ্নে নম্বর থাকে ২। কারণ এর মধ্যে একটি নম্বর জ্ঞানের জন্য আরেকটি নম্বর অনুধাবনের জন্য। তুমি ইচ্ছে করলে জ্ঞান অংশের উত্তর আগে অনুধাবনমূলক উত্তর পরে অথবা অনুধাবনমূলকের উত্তর আগে জ্ঞানমূলকের উত্তর পরে লিখতে পারো। তবে জ্ঞানমূলকের উত্তর আগে লিখে অনুধাবনের উত্তর পরে লেখাই ভালো। অনুধাবনের প্রশ্নের উত্তর এক প্যারাতেও লেখা যায়। তবে দুই প্যারাতে লেখার চেষ্টা করবে। আর অনুধাবনমূলক প্রশ্নের শুরুতে অযথা কবি/সাহিত্যিককে নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করার দরকার নেই।

প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তর দুই/তিন প্যারায় লিখবে : প্রয়োগমূলক প্রশ্নে ৩ নম্বর থাকবে। ১ নম্বর জ্ঞানে, ১ নম্বর অনুধাবনে এবং ১ নম্বর প্রয়োগে। যদিও এক প্যারাতে সবগুলো তথ্য দিয়ে উত্তর লিখলেও হবে। তবে দুই/তিন প্যারাতে  লেখাই ভালো। প্রয়োগ মানে শিক্ষার্থীরা তার পাঠ্যবই থেকে যা জেনেছে এবং যা বুঝেছে তা নতুন ক্ষেত্রে অর্থাৎ উদ্দীপকে প্রয়োগ করবে। কাজেই উদ্দীপকটি যে ভাব/ Theme -এর আলোকে তৈরি করা হয়েছে এবং উদ্দীপকের সাথে সংশ্লিষ্ট গল্প/কবিতার যে দিকটির সাদৃশ্য/বৈসাদৃশ্য থাকে সেটিই জ্ঞান। তারপর ঐ দিকটি/প্রসঙ্গটি পাঠ্যবইয়ের আলোকে বর্ণনা করাই হলো অনুধাবন। দ্বিতীয় প্যারায় অনুধাবন অংশের উত্তর লিখতে পারো এবং সবশেষে ঐ দিকটি উদ্দীপকে কীভাবে ফুটে উঠেছে তা বর্ণনা করাই প্রয়োগ। 

উচ্চতর দক্ষতামূলকে বিচার-বিশ্লেষণ-সংশ্লেষণ, মূল্যায়ন করে উত্তর লিখবে :  উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের মোট নম্বর ৪। ১ নম্বর জ্ঞানে, ১ নম্বর অনুধাবনে, ১ নম্বর প্রয়োগে এবং ১ নম্বর উচ্চতর দক্ষতায়। উচ্চতর দক্ষতা মানেই একটা সিদ্ধান্তের ব্যাপার। প্রশ্নেই সাধারণত একটা অনুসিদ্ধান্ত দেয়া থাকবে। যদি সিদ্ধান্তটি সঠিক হয় তাহলে সেটাকেই ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে, উদ্দীপকে প্রয়োগ করে প্রমাণ করবে যে সিদ্ধান্তটি সঠিক। আর যদি সিদ্ধান্তটি ভুল হয় তাহলে কেন ভুল সেটাও প্রমাণ করতে হবে। অনেক সময় সিদ্ধান্তটি আংশিক সত্য হতে পারে। সেক্ষেত্রে উদ্দীপকের সাথে পাঠ্যবইয়ের যে অংশটুকুর মিল আছে তা বর্ণনা করে যে যে ক্ষেত্রে মিল নেই সেগুলোও বর্ণনা করবে এবং সর্বশেষ সিদ্ধান্ত দিতে হবে যে বক্তব্যটি/সিদ্ধান্তটি আংশিক সত্য, পুরোপুরি নয়। বিচার-বিশ্লেষণ-সংশ্লেষণ, মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত দেয়ার নামই উচ্চতর দক্ষতা।

বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তরে পূর্ণ নম্বর পেতে  মূল পাঠ্যবই বেশি বেশি রিড়িং পড়বে : পরীক্ষায় সৃজনশীল পদ্ধতির বহুনির্বাচনি প্রশ্নগুলো হয় একটু ভিন্ন ধরনের। এ জন্য তোমাদের মূল পাঠ্যবই বেশি বেশি রিড়িং পড়বে। কবিতাগুলো মুখস্থ রাখতে পারলে ভালো। বিগত সালের প্রশ্ন থেকে দেখা গেছে, কবিতা থেকে এমন কিছু প্রশ্ন এসেছে যেগুলোর উত্তর কবিতা মুখস্থ থাকলে শিক্ষার্থীদের পক্ষে দেয়া সম্ভব হতো।

বাংলা দ্বিতীয় পত্রের রচনামূলকে ৭০ আর বহুনির্বাচনি প্রশ্নে ৩০ সহ মোট নম্বর থাকবে ১০০। প্রথমেই দু’টি অনুচ্ছেদ থাকবে, ১টির উত্তর করতে হবে। এর মান ১০। যেহেতু এখানে নম্বর ১০, তাই তুমি এক পৃষ্ঠায় যদি ১৩/১৪ লাইন করে লেখ তাহলে অন্তত ৩ পৃষ্ঠা লিখবে। ৪ পৃষ্ঠা লিখতে পারলে  বেশি নম্বর পাবে।

চিঠিপত্র লেখার ক্ষেত্রে, মানপত্র বা সংবাদপত্রে প্রকাশের উপযোগী পত্র লিখে বেশি সময় নষ্ট না করে দরখাস্ত বা নিমন্ত্রণপত্র বা ব্যক্তিগতপত্র লেখা ভালো। এটা কম সময়ে লিখে কিছু সময় বাঁচানো যেতে পারে, যে সময়টুকু তুমি অন্য কোনো প্রশ্নের উত্তরে ব্যবহার করতে পারো। তবে যেটাই লিখ না কেন উত্তর সঠিক হলে বেশি নম্বর পাবে। পত্র বা দরখাস্ত লিখনের সময় অবশ্যই নির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরণ করবে। সংবাদপত্রে লিখিত পত্রের ক্ষেত্রে  সংবাদপত্রের নাম ও ঠিকানা নির্ভুলভাবে লিখবে।দরখাস্ত বা আবেদনপত্র এক পৃষ্ঠায় লিখবে।

সারাংশ/সারমর্মের যেকোনো একটি লিখতে পারো। যেটার উত্তর তুমি ভালো লিখতে পারবে সেটাই লিখবে। সারাংশ লিখলে নম্বর কম পাওয়া যাবে আর সারমর্ম লিখলে নম্বর বেশি পাওয়া যাবে এমন কথার ভিত্তি নেই। এখানে উত্তর লিখবে ৩ বাক্যে। বেশি লিখলে সর্বোচ্চ ৪ বাক্যে লিখবে। তার বেশি নয়।  

ভাব-সম্প্রসারণ লেখায় কোনো উদ্ধৃতি বা কবিতার লাইন ব্যবহার করবে না। ভাব-সম্প্রসারণ পয়েণ্ট করে না লিখে তিনটা প্যারায় লিখবে। প্যারায় কোনো শিরোনাম ব্যবহার করবে না। ভাব-সম্প্রসারণ মানে ভাবের সম্প্রসারণ, তাই উত্তর একটু বিস্তারিত অর্থাৎ সাইজে বড় হলে ভালো হয়। তোমরা যদি এক পৃষ্ঠায় ১৩/১৪ লাইন লেখো, তাহলে ভাব-সম্প্রসারণ কমপক্ষে ৪ পৃষ্ঠায় লিখবে।

প্রতিবেদন লেখার সময় বেশ সতর্ক থাকবে। প্রতিবেদন লেখার বিভিন্ন নিয়ম প্রচলিত থাকায় ছাত্র/ছাত্রীরা বিভ্রান্তিতে থাকে কীভাবে লিখবে সেটা নিয়ে। তোমরা শিক্ষকের সাহায্য নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদনের জন্য একটি এবং দাপ্তরিক প্রতিবেদনের জন্য একটি নিয়ম ভালোভাবে শিখে নেবে। কারণ যেটাই পরীক্ষায় আসুক তা ঐ দুই নিয়মের মধ্যেই তা পড়বে। প্রতিবেদন লেখার সময়ও নির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরণ করবে। প্রতিবেদনের শেষে প্রতিবেদক কথাটি অবশ্যই লিখতে হবে এবং সেই সঙ্গে তারিখ উল্লেখ করতে হবে।

প্রবন্ধ রচনা সবার শেষে লিখবে। এ জন্য তোমরা কমপক্ষে ৫০/৫৫ মিনিট বা এক ঘন্টা সময় হাতে রাখবে। যেহেতু এখানে নম্বর ২০, তাই তুমি এক পৃষ্ঠায় যদি ১৩/১৪ লাইন করে লিখ তাহলে ২০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত লিখতে পারো। রচনা লেখার ক্ষেত্রে কোনো বাধাধরা নেই। প্রবন্ধ রচনায় কবিতার লাইন, বাংলা বা ইংরেজি উদ্ধৃতি দিতে পারো। তবে সময়ের দিকে খেয়াল রেখে উত্তর লিখবে। প্রবন্ধ রচনা অধিক পয়েণ্ট দিয়ে লিখলে বেশি নম্বর পাবে।

বাংলা বিষয়ে বেশি নম্বর পেতে সুন্দর হাতের লেখা যত বেশি সহায়ক, অন্য আর কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে তা হবে না। তাই সুন্দর হাতের লেখার প্রতি মনোযোগী হবে। অবশ্য ভয়ের কিছু নেই। লেখা খুব সুন্দর না হলেও বর্ণ/অক্ষরগুলো স্পষ্ট করে লিখলেও ভালো নম্বর পাবে।

প্রিয় পরীক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমরা যদি উপর্যুক্ত পরামর্শগুলো  মেনে পরীক্ষায় উত্তর করো তাহলে আমরা বিশ্বাস বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্রত্যেকটিতে এ প্লাস বা ৯০ এর বেশি নম্বর পাবে। তোমাদের জন্য অনেক আদর, ভালোবাসা এবং দোয়া রইল।

এমকে