মোবাইল অপারেটদের সেবার মান পরিমাপের জন্য অত্যাধুনিক কোয়ালিটি অব সার্ভিস বেঞ্চমার্কিং সিস্টেম চালু করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

রোববার (৬ নভেম্বর) ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার এ সিস্টেমের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. খলিলুর রহমান। 

অনুষ্ঠানে মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশে প্রথম দিকে হাতে গোনা কিছু মানুষের জন্য মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও বর্তমানে ঘরে ঘরে মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবহারকারী রয়েছে। পরিবর্তিত প্রযুক্তির এই যুগে সেবার মানের দিকে নজর না দিলে গ্রাহক ধরে রাখা কঠিন হবে। এমএনপি চালু হওয়ায় নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলানোর সুযোগ রয়েছে, তবে কোনো অপারেটরের গ্রাহকসেবার মান সন্তোষজনক নয়।

মন্ত্রী বলেন,২০১৮ সালে তরঙ্গ নিলাম হলেও ২০২২ সালেও সেই তরঙ্গ পুরোপুরি রোলআউট করতে পারেনি মোবাইল অপারেটরগুলো। ২০২২ সালের মধ্যে সে তরঙ্গ রোল আউট করার জন্য অপারেটরদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

এছাড়াও সেবার মান বাড়ানোর লক্ষ্যে বিটিআরসি যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা উন্নয়নশীল দেশের জন্য মাইলফলক বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মোবাইল ডাটার দাম নির্ধারণ করে দিতে পারলে গ্রাহক উপকৃত হবে উল্লেখ করে তিনি এ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের জন্য আহ্বান জানান। 

বিটিআরসি কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সারা দেশে অব্যাহতভাবে আউটডোর এবং ইনডোরে সেবার মান পরিবীক্ষণের লক্ষ্যে জার্মানিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কেনা উচ্চপ্রযুক্তির এই বেঞ্চমার্কিং যন্ত্রপাতির টেস্ট ও ট্রায়াল এবং বিটিআরসি’র জনবলের কারিগরী প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। নতুন এ সিস্টেমের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে সেবার মান পরিমাপে চারটি ইউনিট ব্যবহার করা হবে। যার মধ্যে দুটি ভেহিকেল মাউন্টেড চেসিস বেইজড সিস্টেম এবং দুটি ব্যাকপ্যাক বেইজড সিস্টেম। প্রতিটি চেসিস বেইজড সিস্টেমের মোট ২৪টি টার্মিনালের মাধ্যমে একসঙ্গে সব অপারেটরের টুজি ভয়েস, থ্রিজি ভয়েস, ফোরজি ভয়েস, থ্রিজি ডাটা, ফোরজি ডাটা ও ওভার দ্যা টপ অ্যাপস তথা ফেসবুক, গুগল ও হোয়াটসঅ্যাপের সেবার মান পরিমাপ করা যাবে।

তিনি আরও বলেন, চেসিস বেইজড সিস্টেমগুলো গাড়িতে স্থাপিত হয়েছে। এ সকল গাড়ি দেশের বিভিন্ন জায়গার রাস্তা দিয়ে ভ্রমণ করবে। আর ব্যাকপ্যাক বেইজড সিস্টেমের মাধ্যমে আউটডোর স্থানের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ইনডোর স্থানে (যেমন. মার্কেটের ভেতরে, বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের বেইজমেন্ট, বাড়ি ও অফিসের অভ্যন্তরে ইত্যাদি) সহজে মোবাইল সেবার মান যাচাই করা যাবে। চারটি ইউনিটের প্রতিটির সঙ্গে সংযুক্ত স্ক্যানানের মাধ্যমে যেকোনো স্থানে নেটওয়ার্ক কাভারেজের (অর্থাৎ মোবাইল নেটওয়ার্কের সিগন্যাল সবল অথবা দুর্বল) অবস্থা যাচাই করা যাবে। 

এ সময় টেলিকম খাতে বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ড্রপ হ্রাস এবং ডাটা স্পিড বৃদ্ধিসহ সেবার মান বাড়াতে অপারেটরদের প্রতি আহবান জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. খলিলুর রহমান।

অনুষ্ঠানে বিটিআরসি সচিব নুরুল হামিদ ও লীগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেনসহ বিটিআরসির ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন ।

কিউওস বেঞ্চমার্কিং সিস্টেমে বিটিআরসিতে স্থাপিত একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থার সঙ্গে সেবার মান পরিমাপের চারটি ইউনিট সবসময় সংযুক্ত থাকবে। স্মার্ট-মনিটর নামের এ কেন্দ্রীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে ড্রাইভ-টেস্ট কার্যক্রমে ব্যবহৃত সকল ইউনিটের রিমোট মনিটরিং, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া চারটি ইউনিটের পরিবীক্ষণের লগ ফাইলগুলো সহজেই কেন্দ্রীয় ব্যবস্থায় গ্রহণপূর্বক পোস্ট-প্রসেসিং অর্থাৎ ড্রাইভ টেস্টের ফলাফল দ্রুত পাওয়া সম্ভব হবে। 

নতুন যন্ত্রপাতি ও সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে মোবাইল অপারেটরদের সেবার মান পরিবীক্ষণে বিটিআরসির’র যেসব সক্ষমতা অর্জিত হবে সেগুলো হলো—

* একসঙ্গে ০৪ স্থানে  সেবার মান পরিবীক্ষণ করা যাবে। 
 
* একসঙ্গে সকল মোবাইল অপারেটরের বিভিন্ন প্রযুক্তির ভয়েস, থ্রি জি ডাটা, ফোর জি ডাটা, ওটিটি সেবাসমূহ ও নেটওয়ার্ক কাভারেজ পরিবীক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। 

* সিস্টেমটি ফাইভ জি প্রযুক্তির সেবার মান যাচাই করতে সক্ষম হবে। 

* কেন্দ্রীয়ভাবে সব যন্ত্রপাতি এবং পরিবীক্ষণ কার্যক্রম লাইভ টাইম পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।  

ওএফএ/কেএ