টাইপিংয়ে অভ্যস্ত হয়ে না উঠলে কম্পিউটারের কি-বোর্ড ব্যবহার করে লেখালেখির কাজ করা একদম কঠিন। ইংরেজিই হোক আর বাংলাই হোক- অনেকেই কম্পিউটারে লেখালেখি করতে গিয়ে গলদঘর্ম হয়ে পড়েন। স্মার্টফোনেও একই অবস্থা। অথচ কম্পিউটার এবং স্মার্টফোনের কি-বোর্ডের বিন্যাস একই ধরনের। কিন্তু কীভাবে এল এ বিন্যাস? জেনে আসা যাক- 

কি-বোর্ডের অক্ষরবিন্যাস কেন বর্ণানুক্রমিক নয়?

আধুনিক সময়ে আমরা কি-বোর্ডে যে লে-আউট ব্যবহার করছি সেটিকে বলা হয় কোয়ার্টি। কি-বোর্ডের বাম দিকে Q, W, E, R, T, Y- এ ৬ অক্ষর পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছে। এগুলোকেই একত্রিত করে কোয়ার্টি হিসেবে অভিহিত করা হয়। তবে এ জমানার কী-বোর্ডের বিন্যাস বহু দিন আগেই বেছে নেওয়া হয়। অর্থাৎ বিন্যাসটি নতুন নয়। 

১৮৭৩ সালে বাজারে আসে রেমিংটন নামে একটি টাইপরাইটার। সেখানে যেভাবে অক্ষর বিন্যস্ত হয়েছিল, আজ কম্পিউটারের যুগে এসেও আমরা একই অক্ষরবিন্যাস ব্যবহার করছি। কি-বোর্ড অথবা টাইপরাইটার- উভয়ই দেখা যায় অক্ষরগুলো এলোমেলো রয়েছে। এ বিষয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের দুটি ব্যাখ্যা রয়েছে। 

প্রথমটি হলো টাইপরাইটারের অক্ষরগুলো আগে বর্ণানুক্রমিক ছিল। কাজেই দ্রুত টাইপ করার ফলে বোতামগুলোর নিচে যুক্ত থাকা রড একটি আরেকটিকে আঘাত করতো। মাঝেমধ্যে সেগুলো আটকে যেতো এবং টাইপিং করতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতো। সে সমস্যা সমাধানকল্পেই কোয়ার্টি কি-বোর্ডের প্রচলন করা হয়। রেমিংটন কি-বোর্ডে অক্ষরগুলো দ্রুত সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকায় কি-বোর্ডের নিচে থাকায় রডগুলো একটির সঙ্গে আরেকটির ধাক্কা খায় না। বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে একে কোয়ার্টি কি-বোর্ড হিসেবেও অভিহিত করা হয়। 

ক্রিস্টোফার শোলস, কার্লোস গ্লিডেন ও স্যামুয়েল ডব্লিউ সোউল উদ্ভাবিত টাইপরাইটার। ছবি- কম্পিউটারহোপ ডট কম

অন্যদিকে এ ব্যাখ্যা জাপানি গবেষকদের বরাত দিয়ে স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে উড়িয়ে দেন জিমি স্ট্যাম্প। নিবন্ধে তিনি বলেন, কোয়ার্টি বিন্যাসসহ কি-বোর্ডের প্রথম পেটেন্ট করেন ক্রিস্টোফার শোলস। টেলিগ্রাফ অপারেটররা যে মোর্স সংকেতের ইংরেজি প্রতিলিপি ব্যবহারের জন্য যে টাইপরাইটার ব্যবহার করতেন তার অক্ষরবিন্যাস পরিবর্তন করেন। তিনি এ অক্ষরবিন্যাস ১৮৬৮ সালে করেছিলেন।

টাইপরাইটারের ইতিহাস

১৮৭৮ সালে কি-বোর্ডের বাম পাশে সর্বপ্রথম ‘শিফট-কি’ সংযুক্ত হয়। যেটি রেমিংটন নাম্বার-টু নামে পরিচিত ছিল। বিশ্বের প্রথম আধুনিক টাইপরাইটারটি ‘আন্ডারউড টাইপরাইটার’ হিসেবে পরিচিত। যেটি ১৮৯৩ সালের ২৭ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে ফ্রাঞ্জ জাভের ওয়াগনার পেটেন্ট করেছিলেন। ১৮৯৫ সালে টাইপরাইটারটি বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করলে জন আন্ডারউড রিবন সরবরাহ করেন। 

বিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে ম্যানুফ্যাকচারিং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে টাইপরাইটার ব্যবহার শুরু করে। এ ধারা অব্যাহত ছিল ১৯৬১ সালের ২৭ জুলাইয়ে আইবিএম টাইপরাইটার উদ্ভাবন হওয়া পর্যন্ত। এ সময় থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বৈপ্লবিক ধারা শুরু হতে থাকে এবং টাইপরাইটার ধীরে ধীরে আধুনিক সময়ে কম্পিউটারের কি-বোর্ডে স্থানান্তরিত হয়। 

সূত্র: গিজমোডো।

এইচএকে/আরআর/এএ