এআই নিয়ে অঙ্গরাজ্যের ক্ষমতায় লাগাম টানলেন ট্রাম্প
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর নিজস্ব বিধিনিষেধ ঠেকাতে নির্বাহী আদেশে সই করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে এই আদেশে সই হয়।
এই আদেশের মাধ্যমে এআই পরিচালনায় একটি ‘একক জাতীয় কাঠামো’ গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। অঙ্গরাজ্যভিত্তিক আলাদা আলাদা আইনকে শিল্পের জন্য ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
বিজ্ঞাপন
হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা উইল শার্ফ বলেন, অঙ্গরাজ্যের ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম এআই শিল্পকে পঙ্গু করে দিতে পারে। তাই জাতীয় পর্যায়ে একটি নীতিমালার প্রয়োজন।
নির্বাহী আদেশে কংগ্রেসের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি ফেডারেল কাঠামো তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের এআই ও ক্রিপ্টো বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডেভিড স্যাকস বলেন, আপাতত এই আদেশ প্রশাসনকে কঠোর অঙ্গরাজ্য আইন মোকাবিলার সুযোগ দেবে।
বিজ্ঞাপন
তবে শিশু সুরক্ষা সংক্রান্ত অঙ্গরাজ্য আইন নিয়ে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করবে না বলে জানান তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্যাকস লেখেন, সব অঙ্গরাজ্য আইন চ্যালেঞ্জ করার অর্থ এই আদেশ নয়।
এর আগে রিপাবলিকানরা অঙ্গরাজ্যগুলোকে এআই নিয়ন্ত্রণ থেকে বিরত রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু জুলাইয়ে মার্কিন সিনেটে সেই প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। জাতীয় প্রতিরক্ষা অনুমোদন আইনে এ ধরনের বিধিনিষেধ যুক্ত করার উদ্যোগও সফল হয়নি।
এআই প্রযুক্তি ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারে বড় প্রভাব ফেলেছে। তবে প্রযুক্তিটি এখনো অনেক ক্ষেত্রে পরীক্ষাধীন। ফলে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিতর্ক তীব্র।
সিলিকন ভ্যালির শীর্ষ নেতারা অঙ্গরাজ্যভিত্তিক আইনকে উদ্ভাবনের পথে বাধা মনে করেন। ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যানসহ অনেকেই বলেছেন, এতে চীনের সঙ্গে এআই প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে পড়তে পারে।
অন্যদিকে সমালোচকেরা বলছেন, অতিরিক্ত শিথিলতা এআই কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহির বাইরে রাখবে। এতে ভোক্তারা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে এআইয়ের ওপর সামগ্রিক তদারকি খুবই সীমিত। অথচ স্বাস্থ্যসেবা, পুলিশিং, চাকরিতে নিয়োগসহ নানা ক্ষেত্রে এর ব্যবহার বাড়ছে।
ফেডারেল আইন না থাকায় কিছু অঙ্গরাজ্য নিজ উদ্যোগে আইন করেছে। ডিপফেক, বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট ও বৈষম্যমূলক অ্যালগরিদম ঠেকাতে এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এআই নিয়ন্ত্রণ ইস্যুতে রিপাবলিকান দলেও মতভেদ স্পষ্ট। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও ডেভিড স্যাকস হালকা নিয়ন্ত্রণ চান। বিপরীতে ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডি স্যান্টিস ও স্টিভ ব্যাননের মতো নেতারা অঙ্গরাজ্যের ভূমিকার পক্ষে।
এআই নিয়ন্ত্রণপন্থী সংগঠন আমেরিকানস ফর রেসপনসিবল ইনোভেশনের সভাপতি ব্র্যাড কারসন বলেন, এই নির্বাহী আদেশ আদালতে টিকবে না। তার মতে, জনপ্রিয় অঙ্গরাজ্য আইনগুলোকে আক্রমণ করা হয়েছে, বিকল্প কোনো ফেডারেল আইন ছাড়াই।
তবে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান অ্যান্ড্রিসেন হোরোভিটজের সরকারি বিষয়ক প্রধান কলিন ম্যাককিউন এই আদেশকে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ বলেছেন। তার মতে, দীর্ঘমেয়াদি দিকনির্দেশনা দিতে কংগ্রেসের ভূমিকা অপরিহার্য।