চীনা এআই স্টার্টআপ ‘মানুস’ কিনছে মেটা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিনিয়োগ আরও বাড়াচ্ছে মেটা। চীনা এআই স্টার্টআপ ‘মানুস’ অধিগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সোমবার এই তথ্য নিশ্চিত করেছে মেটা কর্তৃপক্ষ।
বিশ্বজুড়ে এআই প্রতিযোগিতা যখন তুঙ্গে, তখন এই অধিগ্রহণকে বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। চুক্তির আর্থিক শর্ত প্রকাশ করা হয়নি।
বিজ্ঞাপন
মানুস একটি জেনারেল পারপাস এআই এজেন্ট তৈরি করে। এই এআইকে বলা হচ্ছে ‘ডিজিটাল কর্মী’। মানুষের খুব কম নির্দেশনায় কাজ করতে পারে এটি। গবেষণা, তথ্য বিশ্লেষণ ও স্বয়ংক্রিয় কাজ সম্পাদনে এটি দক্ষ।
মেটা জানিয়েছে, মানুসের এআই সেবা তারা নিজেরাই পরিচালনা করবে। এটি বিক্রিও করবে মেটা। পাশাপাশি মেটার বিভিন্ন পণ্যে যুক্ত করা হবে এই প্রযুক্তি। এর মধ্যে থাকবে মেটা এআই। থাকবে ব্যবসায়িক ও ভোক্তা সেবার প্ল্যাটফর্মও।
বিজ্ঞাপন
মেটার এই উদ্যোগ নতুন নয়। চলতি বছরই প্রতিষ্ঠানটি স্কেল এআই–এ বড় বিনিয়োগ করে। সে চুক্তিতে স্কেল এআইয়ের মূল্য ধরা হয় ২৯ বিলিয়ন ডলার। সে সময় প্রতিষ্ঠানটির তরুণ প্রধান নির্বাহী আলেকজান্ডার ওয়াংকেও দলে নেয় মেটা।
প্রযুক্তি খাতে এখন এআই নিয়েই সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা। মেটা, গুগল, মাইক্রোসফট, ওপেনএআই— সবাই এগোতে চায় দ্রুত। এই দৌড়ে পিছিয়ে থাকতে চায় না মেটা।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক মানুস মূলত একটি চীনা প্রতিষ্ঠানের অংশ। এর মূল কোম্পানি বেইজিং বাটারফ্লাই ইফেক্ট টেকনোলজি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুরে সদর দপ্তর সরিয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এর পেছনে বড় কারণ। সিঙ্গাপুরে থাকলে আন্তর্জাতিক ব্যবসা তুলনামূলক সহজ হয়। নিয়ন্ত্রক ঝুঁকিও কিছুটা কমে।
চলতি বছরই মানুস তাদের এআই এজেন্ট বাজারে আনে। তাদের দাবি, এই এআই ওপেনএআইয়ের ‘ডিপরিসার্চ’ এজেন্টের চেয়েও দক্ষ। এই দাবিকে ঘিরে প্রযুক্তি অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা হয়।
মানুস নিজেদের পণ্য প্রচারে ভিন্ন কৌশল নেয়। এক্স প্ল্যাটফর্মে বিনামূল্যে ব্যবহারকারীদের জন্য কাজ করে দেখায় তারা। দশকের পর দশক ধরে চলা কাজ কয়েক মিনিটে শেষ করে দেখায় এআইটি।
এতে দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় মানুস। মেটার নজরও পড়ে তখনই। মেটা জানিয়েছে, এই অধিগ্রহণ তাদের দীর্ঘমেয়াদি এআই কৌশলের অংশ। ব্যক্তিগত সহকারী, কনটেন্ট তৈরি, ব্যবসায়িক স্বয়ংক্রিয়তা— সব ক্ষেত্রেই এআই ব্যবহার বাড়াতে চায় তারা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুসের এআই মেটার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে মেটাভার্স ও এন্টারপ্রাইজ সেবায়।
তবে কিছু প্রশ্নও উঠেছে। চীনা প্রযুক্তি অধিগ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের অবস্থান কী হবে— সেই প্রশ্ন রয়েছে। ডেটা নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। মেটা এখনো এসব বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
তবে এটুকু স্পষ্ট। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌড়ে মেটা আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। এআই নিয়েই ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি বিশ্ব গড়ে উঠবে— সে বিশ্বাসেই এগোচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।