যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে শিগগিরই সরে যাবেন জেফ বেজোস। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এমন ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

জেফ বেজোস বলেছিলেন, চলতি বছরের শেষের দিকে প্রধান নির্বাহীর পদে তিনি আর থাকবেন না। পদত্যাগের আগে সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে তিনি কী ভাবছেন?

জেফ বেজোসের উপদেষ্টা ও ‘ওয়ার্কিং ব্যাকওয়ার্ডস : ইনসাইটস, স্টোরিজ অ্যান্ড সিক্রেটস ফ্রম অ্যামাজন’ বইয়ের লেখক কলিন ব্রায়ার বলেন, ‘নের্তৃত্বের মধ্য দিয়ে জেফ বেজোস অ্যামাজনের আলাদা একটি ধারা তৈরি করেছেন। তার সফলতার পেছনে এটি অন্যতম কারণ।’

সহকর্মীদের চোখে জেফ বেজোস

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান নির্বাহী হিসেবে জেফ বেজোস কেমন সে সম্পর্কে তার সহকর্মীরা বলেছেন। তার একজন ঘনিষ্ঠ সহকর্মী নাদিয়া শোরাবোরা ২০০৪ সাল থেকে অ্যামাজনে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি গ্রাহকদের সেবা দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে বেজোসের সঙ্গে শেয়ার করি। তিনি আমাকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা ও ভুল সংশোধন করে দেন।’

নাদিয়া শোরাবোরা আরও বলেন, ‘জেফ বেজোস আমাদের উদ্দেশ্যে প্রায়ই বলেন গ্রাহক সেবা নিয়ে কোনো সমস্যা হলে নির্দ্বিধায় আমার কাছে আসতে পারো। আমি তোমাদের সব সমস্যার সমাধান করে দেবো।’

বেজোসের নামে যত সমালোচনা

মার্কিন সংবাদমাধ্যম প্রোপাবলিকার বরাত দিয়ে বিবিসি বলেছে, কিছুদিন আগে জেফ বেজোসসহ আরও একাধিক ব্যক্তি সম্পর্কে ২০০৭ সালে ও ২০১১ সালে তারা বিশাল অঙ্কের করফাঁকির খবর প্রকাশ করা হয়েছে। অ্যামাজন কর্মকর্তারা একে ‘সুস্পষ্ট মিথ্যাচার’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তারা বলছেন, এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।

বিবিসি আরও বলেছে, বাজারে একচেটিয়া অবস্থানের ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে অনেকেই অভিযোগ করেন। কিন্তু সমালোচকরা কখনোই বেজোসের ক্ষতি করতে পারবেন না বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। কারণ তারা বেজোসকে দাম্ভিক, স্বার্থপর অথবা আত্মকেন্দ্রীক হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবেন না। উত্তরোত্তর সাফল্য অর্জন করেই চলেছেন তিনি।

জেফ বেজোসের ঘনিষ্ঠরা জানেন, তিনি একজন কাজপাগল মানুষ। তারা বলেন, অ্যামাজনের আজকের অবস্থানে আসার পেছনে তার অবদান অনস্বীকার্য। কারণ তার দর্শন অনুসরণ করেই আজ অনেক কর্মী সফল হয়েছেন।

চলতি বছরের শেষ নাগাদ পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন জেফ বেজোস। ছবি : রয়টার্স।

‘দুটি পিৎজা খাওয়াতে হবে’

বিবিসি জানায়, জেফ বেজোস বিশ্বাস করতেন সব ধরনের গ্রাহকের সঙ্গেই একজন উদ্যোক্তার চলাফেরা করা উচিত। এতে গ্রাহকের চাহিদা সম্পর্কে ভালোভাবে জানা সম্ভব। প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন বৈঠকে তিনি একটি কথা প্রায়ই বলেন, ‘আমাদের সবসময় এমনভাবে চিন্তা করা উচিত যেন এখনই একটি বা দুটি দলকে দুটি পিৎজা খাওয়াতে হবে।’

জেফ বেজোস বোঝাতে চেয়েছেন, একজন আদর্শ উদ্যোক্তার সবসময় গ্রাহকের চাহিদাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন পছন্দ করেন না তিনি। এর বদলে তিনি প্রেজেন্টেশনের সময়ে হাতে লেখা নোট সঙ্গে রাখেন।

জেফ বেজোস কর্মীদের ব্যাপারে স্বৈরাচারী নন। তিনি প্রায়ই কর্মীদের কাছে যান ও খোলামেলা আলাপ করেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অনেকেই বলেন, তিনি না কি উচ্ছৃঙ্খল আচরণের মধ্য দিয়ে কর্পোরেটের পরিবেশ নষ্ট করেন। ২০১৫ সালে একবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এমন কথা বলা হয়েছিল।

প্রকৌশল, উদ্ভাবন ও যন্ত্রবিদ্যায় জেফ বেজোসের আগ্রহ প্রবল। একই সঙ্গে অলংকারশাস্ত্রে বিশেষভাবে পারদর্শী তিনি। কিন্তু সমালোচকরা বলেন, তিনি একজন কৃপণ। বিশেষ করে অ্যামাজনের ওয়্যারহাউজের ব্যাপারে একেবারেই ব্যয় করতে চান না তিনি।

শোরাবোরা বলেন, ‘ব্যবসা এগোনোর জন্য উদ্যোক্তাকে ঝুঁকি নিতে হয়। জেফ বেজোসের মধ্যে ঝুঁকি মোকাবেলার অপরিসীম সাহস রয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় সাহসিকতার সঙ্গে এগোলে দ্রুত সফল হওয়া সম্ভব।’

জেফ বেজোসের অন্যতম শখ মহাশূন্যে ভ্রমণ করা। চলতি মাসের শেষের দিকে নিজের রকেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিনের মাধ্যমে ভাইকে নিয়ে মহাশূন্যে ভ্রমণে যাওয়ার কথা রয়েছে তার।

সূত্র : জেমস ক্লেটন, উত্তর আমেরিকা প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিবেদক, বিবিসি।

এইচএকে/টিএম/এএ