হাসপাতালের ইসোলেশন ইউনিটে করোনায় আক্রান্ত রোগী। সংক্রমণের ভয়ে কেউ সামনে যেতে চাইছে না। ঘরের আইসোলেশনে থাকা অবস্থাতেও অনেকেই রোগীর সংস্পর্শে যেতে চায় না। সেসব রোগীদের খাবার ও ওষুধ পরিবেশনের জন্য রোবট তৈরি করেছে মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্র ফারহান নবী। রোবটটি রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে চলাচল করে। রোবটের নাম- ইউভি লাইট ডিজইনফেকশন রোবট ভার্সন-টু। 

ফারহান নবী রোবট তৈরির প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলে, “সংক্রমণের শঙ্কায় যখন অনেকেই করোনা রোগীর সামনে যেতে চাইতো না, তখন আমি এটি তৈরির সিদ্ধান্ত নেই। রোবটটি তৈরির পেছনে আমার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘মানবসেবা’।”

করোনা রোগীদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশে তৈরি এটাই প্রথম রোবট। 

রোবট এভাবে পৌঁছে দেবে ওষুধ

কীভাবে কাজ করে রোবটটি? 

ফারহানের তৈরি রোবটটি রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে পরিচালিত। এটিতে ব্যাটারি রয়েছে। ব্যাটারিতে একবারে ফুল চার্জ দিলে রোবটটি টানা ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত চলতে পারবে। রোবটে ৩টি সেলফের মতো চেম্বার রয়েছে। চেম্বারে খাবার, ওষুধপত্র কিংবা পানির বোতলসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখার ব্যবস্থা থাকছে। হাসপাতালের ওয়ার্ডে বা আইসোলেশন ইউনিটে নার্স বা পরিবারের সদস্যরা করোনা আক্রান্ত রোগীর জন্য সহজেই রোবটের মাধ্যমে ওষুধ ও প্রয়োজনীয় জিনিস পাঠাতে পারবেন।

এছাড়াও রোবটটিতে ইউভি (আল্ট্রাভায়োলেট) লাইট রয়েছে। ফলে রোবট যেসব স্থান দিয়ে চলাচল করবে সেসব স্থানে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াকে হত্যা করে স্থানটি জীবাণুমুক্ত করবে। 

এক কিলোমিটার দূর থেকে রিমোট দিয়ে রোবট নিয়ন্ত্রণ করা যাবে

সর্বোচ্চ ১ কিলোমিটার দূর থেকে রিমোট দিয়ে রোবটটি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এ রোবটে একটি ক্যামেরা সংযুক্ত রয়েছে। সহজেই রোবটের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। রোবটটি করোনা রোগীর সংস্পর্শে এলেও এর মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। এটি খুব সহজেই বাসায় এবং যেকোনো হাসপাতালে ব্যবহার করা যাবে।

রোবটটি সম্পর্কে ফারহান ঢাকা পোস্টকে বলে, ২০২০ সালের মার্চ মাসে রোবট তৈরির কাজ শুরু করি। রোবটটির দুটি ভার্সন। প্রথম ভার্সনটি তৈরি করতে ৩৫-৪০ দিন সময় লেগেছে। দ্বিতীয় ভার্সন তৈরিতে সময় লেগেছে ১৫ দিন। ৭ দিন আগে এটি তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। 

ফারহান বলে, রোবট তৈরিতে ইলেকট্রনিক ও মেকানিক্যাল পার্টের কাজগুলো আমি করেছি। আমার আরেক বন্ধু ডিজাইনের কাজ করেছে। প্রথম ভার্সনটি শুধুমাত্র ইউভি লাইটসহ ছিল। রোবটটি চললে পথ জীবাণুমুক্ত হয়ে যেত। দ্বিতীয়টিতে ওষুধ ও খাবার রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রোবট চার্জ দেয়ার জন্য প্লাগ রয়েছে। সেটিকে প্লাগ ইন করলেই চার্জ দেয়া যাবে। রোবটটি মাত্র ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে চাই আমরা। 

উদ্যমী কিশোর ফারহানের পরিচয়

কিশোর ফারহানের বাড়ি পুরান ঢাকার ওয়ারীতে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১০ম শ্রেণির ছাত্র। আরও ৫ বছর আগে থেকেই বিজ্ঞান ও নতুন নতুন জিনিস তৈরিতে ঝোঁক আর রোবট তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল তার। ২০২০ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে ‘আইআইটি টেকফেস্টে’ অংশ নিয়ে রানার আপ হয় সে। এছাড়াও টেকনোজিয়ান আয়োজিত ‘ওয়ার্ল্ড রোবটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে’ বাংলাদেশের কান্ট্রি অ্যাম্বাসেডর হিসেবে রয়েছে ফারহান। বর্তমানে ‘একটুখানি রোবটিক্স’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে। পাশাপাশি ওয়েবসাইট ডেভেলপের কাজও করছে সে। 

৫ বছর আগে থেকেই রোবট তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল ফারহান নবীর

ফারহান বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্টে অংশ নেয়া ৭০০০ স্টার্টআপের মধ্যে সেরা ৬৫ জনের তালিকায় নিজের নাম লিখিয়েছে। এছাড়াও ২০২০ সালে সে ইন্সপেকশন রোবট, অ্যান্টি রেপ টিজার গান, ড্রোন, গাড়িচালকদের জন্য অ্যান্টি স্লিপ গ্লাস, অটোমেটিক ইরিগেশন সিস্টেম (উইথ এসএমএস অ্যালার্ট) তৈরি করেছে। সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে এমন আরও কাজে হাত দেবে বলে জানিয়েছে সে।

এআর/এইচকে