২০ দেশের অবকাঠামো ব্যবহার করে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা নিবন্ধনের অ্যাপ ‘সুরক্ষা’য় সাইবার হামলা চালানো হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টায় প্রায় ৪ কোটি বার এ সাইবার হামলা চালায় হামলাকারীরা। এতে ওই সময়ে অ্যাপটিতে সেবা কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়।

প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, সুরক্ষা অ্যাপের সেবাকে বাধাগ্রস্ত করা, অ্যাপটি অচল করে দেওয়া, তথ্য চুরি করা, বাংলাদেশকে বেকায়দায় ফেলা, মুক্তিপণ দাবিসহ একাধিক কারণে এ হামলা চালানো হতে পারে।

তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ বিভাগের ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি সূত্র জানায়, গত ৬ আগস্ট থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় ২০ দেশের অবকাঠামো ব্যবহার করে সুরক্ষা অ্যাপে প্রায় চার কোটি বার সাইবার হামলা চালিয়েছে হ্যাকাররা। ওই সময়ে ছয় কোটি ১৬ লাখ ৭৪ হাজার জন অ্যাপটিতে হিট করে।

এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে নিবন্ধনের জন্যে প্রবেশ করেন প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। এর বাইরে যারা অ্যাপটিতে প্রবেশ করেছে বা হিট করেছে তাদের সবাই সাইবার হামলাকারী ছিল।

ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির পরিচালক (অপারেশন) তারেক এম বরকতউল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে কাজে নেমে পড়ি। দক্ষ কর্মী বাহিনী খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে হ্যাকারের হাত থেকে রক্ষা করে সুরক্ষা অ্যাপকে। আমাদের পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়া, আমেরিকা, ভিয়েতনামসহ ২০ দেশের অবকাঠামো ব্যবহার করে এ হামলা চালায় হ্যাকাররা।

এ ধরনের হামলা যেন না হয় সেই প্রস্তুতি শুরুতে কেমন ছিল? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শুরুতে আমরা ভেবেছিলাম বিমানবন্দরে প্রবেশের সময় বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের কাজে লাগবে অ্যাপটি। এ জন্যে কোনো রেস্ট্রিকশন রাখা ছিল না। এ ঘটনার পর সম্পূর্ণটা ঠিক করা হয়েছে। বিদেশ থেকে নিবন্ধনের ব্যবস্থাসহ সব বিষয় আমাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

কী কারণে এত বড় হামলা চালানো হতে পারে সে বিষয়ে এ প্রযুক্তিবিদ বলেন, একাধিক কারণে অ্যাপটিতে সাইবার হামলা হতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো অ্যাপের সেবাকে বাধাগ্রস্ত করা, দেশকে বিপদে ফেলে মুক্তিপণ দাবি, তথ্য চুরি। এছাড়া নতুন নতুন যারা হ্যাকিং শিখতে আসে তারা এ ধরনের অ্যাপ বেছে নেয়। শুধু যে বাংলাদেশে এমন হয়েছে তা কিন্তু নয়, সম্প্রতি ইতালির করোনাভাইরাসের অ্যাপ হ্যাক করে মুক্তিপণ দাবি করে হ্যাকাররা।

এ ধরনের জাতীয় অ্যাপ তৈরির প্রস্তুতিতেই সাইবার হামলার বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক ড. হোসেন আসিফুল মুস্তাফা।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুরক্ষা অ্যাপের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ আরও নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংযুক্ত রয়েছে। এ সময়ে অ্যাপটির কার্যক্রমও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামান্য সময় সেবা বন্ধ বা বিঘ্নিত থাকাও ঠিক হবে না। সুতরাং অ্যাপটির সাইবার নিরাপত্তা খুবই গুরুত্ব বহন করে। ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি হয়তো দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে।

তিনি বলেন, যেহেতু এটি সেবামূলক অ্যাপ, তাই হয়তো সেবাকে বিঘ্নিত করাই তাদের (হ্যাকারের) মূল উদ্দেশ্য ছিল। এছাড়া তথ্য চুরির মতো ঘটনা ঘটাতে পারত হ্যাকার। এমনও হতে পারে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য কাজটি করেছে। নেতিবাচক অনেক কিছুই হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, এ পর্যন্ত অ্যাপটির মাধ্যমে প্রায় তিন কোটির মতো মানুষ করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) টিকা গ্রহণে নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ চালু করা হয়। এর মাধ্যমে টিকা গ্রহণে আগ্রহীরা নিবন্ধন করার পাশাপাশি টিকা নেওয়ার সনদও তুলতে পারছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত থেকে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে সুরক্ষা অ্যাপের উদ্বোধন করেন।

একে/এসএম/জেএস