জাদিপাই ঝর্ণাকে বলা হয় ঝর্ণার রানি। বাংলাদেশের আকর্ষণীয় ঝর্ণাগুলোর একটি জাদিপাই ঝর্ণা। আকৃতিতে দেশের সবচেয়ে বড় না হলেও গঠন আর অবস্থানের ভিত্তিতে এ ঝর্ণা অনন্য, অপরূপা। উঁচু পাহাড় আর চার দিকে সবুজের সমারোহ। 

কেওক্রাডং, জংছিয়া ও জাদিপাই তিন পাহাড়ি ঝিরি একসঙ্গে মিলিত হয়ে জাদিপাই ঝর্ণার সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ২০০ ফুট উপর থেকে কালো পাথর বেয়ে স্বচ্ছ পানির ধারা নিচে নেমে আসে। ঝর্ণাটি পরে মিলিত হয়েছে সাঙ্গু নদীর সঙ্গে।

জাদিপাই ঝর্ণা ভ্রমণে কখন যাবেন

জাদিপাই ঝর্ণা সারা বছরই কম-বেশি পানি থাকে, তবে বর্ষাকালে গেলে ভালো পানি পাওয়া যাবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। তাই এখন গেলেও ঝর্ণার যৌবন দেখতে পাবেন।

জাদিপাই ঝর্ণা ভ্রমণে কীভাবে যাবেন

প্রথমে আপনাকে বান্দরবান শহরে যেতে হবে। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন বান্দরবানের উদ্দেশ্যে কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির গাড়ি ছেড়ে যায়। যেমন, শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক, সৌদিয়া, এস আলম, ডলফিনের যেকোনো একটি বাসে চড়ে আপনি বান্দরবানের যেতে পারেন। রাত ৯-১০ টায় অথবা সাড়ে ১১টার দিকে আব্দুল্লাহপুর, গাবতলী, কল্যাণপুর, কলাবাগান, সায়দাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে বাসগুলো বান্দরবানের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। নন এসি বাসে জন প্রতি ভাড়া ৯০০ টাকা। এসি ১৪০০ টাকা।

চট্টগ্রাম থেকেও বান্দরবান যেতে পারেন। বদ্দারহাট থেকে বান্দারবানের উদ্দেশে পূবালী ও পূর্বানী পরিবহনের বাস যায়। এসব বাসে জনপ্রতি ৪২০ টাকা ভাড়া রাখা হয়।

এবার আপনাকে বান্দরবান থেকে চান্দের গাড়িতে বা লোকাল বাসে করে যেতে হবে রুমা। রুমা বাজারে অবশ্যই বিকাল ৪ টার মধ্যে পৌঁছতে হবে। ৪টার পরে সেনাবাহিনী কোনো চান্দের গাড়ি বগা লেকের উদ্দেশে যাওয়ার অনুমতি দেয় না।

বান্দরাবন থেকে রুমা উপজেলার সদরে যেতে লোকাল বাসে খরচ হবে জন প্রতি ১৮০ টাকা। পুরো চাঁন্দের গাড়ি বা জিপ ভাড়া করলে ৪০০০ টাকা। রুমা থেকে বগালেক পুরো জিপ ভাড়া করলে ২৭০০ টাকা। 

রুমা বাজার থেকে গাইড নেওয়া বাধ্যতামূলক। গাইড না নিলে সেনাবাহিনীর অনুমতি দেবে না। প্রতিদিনের গাইড খরচ ৭০০ টাকা। গাইডের খাওয়া থাকা নিজেদের বহন করতে হবে।

বগা লেক থেকে হেঁটে কেওক্রাডং, তারপরে পাসিং পাড়া, পাসিং পাড়া থেকে পায়ে হেঁটে জাদিপাই ঝর্ণা যেতে হবে। একটা কথা মাথায় রাখবেন, কেওক্রাডংয়ের পর থেকে সাধারণ পর্যটকদের যাওয়ার নিষেধ। অবশ্য বিশেষ অনুমতি থাকলে যেতে পারবেন।

বান্দরবান থেকে থানচি হয়েও জাদিপাই যাওয়া যাবে। এ জন্য বান্দরবান শহর থেকে চাঁন্দের গাড়ি বা লোকাল বাসে যেতে হবে থানচি। থানচি থেকে চাঁন্দের গাড়ি বা জিপ নিয়ে বাক্লাই ক্যাম্পের ঠিক আগে নেমে যেতে হবে। কারণ, জাদিপাই একটা অফট্রেইল।

সাধারণ পর্যটকদের তমাতুঙ্গীর পর যাওয়ার অনুমতি নেই। তবে কেউ কেউ লুকিয়ে বাক্লাই ক্যাম্প পর্যন্ত যায়। তারপর বাক্লাই পাড়া থেকে ৪-৫ ঘন্টা ট্রেকিং করলেই উদ্যমী জাদিপাই পাড়া (নতুন জাদিপাই পাড়া) পৌঁছে যাবেন। উদ্যমী জাদিপাই পাড়া থেকে ১ ঘন্টা ট্রেক করলেই জাদিপাই ঝর্ণায় পৌঁছে যাবেন।

বান্দরবান থেকে থানচি লোকাল বাসে জন প্রতি ২২০ টাকা। চান্দের গাড়ি বা জিপ ভাড়া ৬০০০ টাকা। থানচি থেকে বাক্লাই ক্যাম্প পর্যন্ত চাঁন্দের গাড়ির ভাড়া ২৫০০ টাকা। উদ্যমী জাদিপাই পাড়া থেকে লোকাল গাইড নেওয়া বাধ্যতামূলক। গাইড খরচ ৫০০ টাকা।

জাদিপাই ঝর্ণা ভ্রমণে খাওয়া-থাকার ব্যবস্থা

বগালেক ও কেওক্রাডংয়ের খাওয়া-থাকার সুব্যবস্থা আছে। জন প্রতি ১৮০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন প্যাকেজের খাবার পাওয়া যায়। আছে থাকার ব্যবস্থাও। জনপ্রতি ৩০০ টাকা করে থাকতে পারবেন। এক রুমে ৬-৭ জন করে থাকা যায়। এছাড়াও উদ্যমী জাদিপাই পাড়া বা পুরানো জাদিপাই পাড়ায় ১৮০-২০০ টাকার মধ্যে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

ঝর্ণা ভ্রমণে সঙ্গে যা নিতেই হবে

অবশ্যই ভালো মানের ট্রেকিং ব্যাগ নিতে হবে। যা দীর্ঘক্ষণ ট্রেকিংয়েও পিঠ ঘামাবে না।  কোমড়ের উপরে চাপ সৃষ্টি করবে না। সঙ্গে রেইন কভার ও বড় পলিথিন নেবেন। 

এড়াও ট্রেকিং প্যান্ট, ট্রেকিং স্যান্ডেল, শুকনা খাবার,  হ্যান্ড গ্লাভস, হেড ল্যাম্প,  টি শার্ট ২/৩ টি, হাফ প্যান্ট, ট্রাউজার, ট্রেকিং পোল, মোজা ১/২ জোড়া, টুথ ব্রাশ, পেস্ট, সাবান, গামছা, পানির বোতল, প্রাথমিক ওষুধ, স্যালাইন, গ্লুকোজ, মশার জন্য ওডোমস ক্রিম, এনআইডি/স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের ফটোকপি ২ টা ও পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে নেবেন।