স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধীরে ধীরে ভ্রমণ করা শুরু করছেন অনেকে। রেস্তোরাঁ ও কিছু দর্শনীয় স্থান খুলে দেওয়া হচ্ছে। গ্রিস, ইতালিসহ কয়েকটি দেশ পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। 

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি যখন অবনতির দিকে, তখন দর্শনীয় স্থানগুলোতে কীভাবে নিরাপদ থাকা যায়?

এ বিষয় যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলেছে, করোনার এমন পরিস্থিতিতে যদি কোনো ব্যক্তি এক দেশ থেকে অন্য দেশে যান তাহলে তাকে ১৪ দিন সেলফ আইসোলেশনে থাকতে হবে। গত বছরের ১৪ মে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভ্রমণের পরিকল্পনা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে কোথাও ভ্রমণ করা কতটুকু নিরাপদ সেটিও ভেবে দেখতে হবে। এসব নিয়েই আজকের আয়োজন-

বিমান ভ্রমণ

বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ করোনার ঝুঁকি কমিয়ে আনতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু তারপরেও এমন পরিস্থিতিতে বিমানে ভ্রমণের ব্যাপারে অনেকের সংশয় রয়েছে। কেমব্রিজের মাউন্ট অবর্নের ট্র্যাভেল মেডিসিন সেন্টারের পরিচালক ও হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক ডা. লিন এইচ. চেন বলেন, বিমানে ভ্রমণের আগে জানতে হবে সেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভ্রমণ করলে করোনা সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। 

হার্ভার্ড টি. এইচ. চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের হেলদি বিল্ডিং প্রোগ্রামের সহকারী অধ্যাপক জো অ্যালেন বলেন, অনেকেই মনে করেন বিমানে ভ্রমণ করলে তারা অসুস্থ হয়ে যাবেন। প্রকৃতপক্ষে বিমানে পর্যাপ্ত বাতাসের ব্যবস্থা রয়েছে। 

পার্কে ভ্রমণ

একটানা ঘরে অবস্থান করার কারণে অনেক মানুষ অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। কোথাও ঘুরতে গেলে অবসাদগ্রস্ততা দূর করা যায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ভ্রমণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। অবসাদ দূর করার জন্য পার্কে ভ্রমণ করারও পরামর্শ দিয়েছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। 

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ জয়সি স্যাঞ্চেজ বলেন, গরমের সময় করোনা সংক্রমণ বেশি হচ্ছে। তাই ভ্রমণের সময় স্যানিটাইজার নিতে হবে এবং মাস্ক পরে থাকতে হবে। 

সমুদ্র ভ্রমণ

সমুদ্রে ভ্রমণের সময় অনেকেই নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলেন না। মনে রাখতে হবে, করোনা থেকে বাঁচার জন্য নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়। ভ্রমণের সময় স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে এবং মাস্ক পরে থাকতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনা মহামারি দূর করা সম্ভব হবে। ডা. লিন চেন বলেন, হাত পরিষ্কারের মাধ্যমে করোনা থেকে নিরাপদ থাকা যায়। 

আবাসিক হোটেলের নিরাপত্তা

কোথাও ভ্রমণে গেলে দর্শনার্থীরা রাতে থাকা ও খাওয়ার জন্য আবাসিক হোটেলে ওঠেন। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী দর্শনার্থীদের সেবা দেওয়া হয়। কোন হোটেলে কেমন নিরাপত্তা সেটি বিভিন্ন হেটেলের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়। 

স্যাঞ্চেজ বলেন, হোটেলের লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ির মাধ্যমে যাতায়াত করতে হবে। হোটেলের রেস্তোরাঁর চেয়ে রুমগুলো অনেক বেশি নিরাপদ। কারণ রেস্তোরাঁয় বাইরে থেকে অনেক মানুষ আসেন। 

নিরাপত্তা বিষয়ক কিছু তথ্য

সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বলেছে, করোনা থেকে সুস্থ থাকার জন্য কোনো কিছু স্পর্শ করা যাবে না। এর অর্থ হলো ঘরে অথবা বাইরে কোনো বস্তুতে স্পর্শ করা যাবে না। সবসময় মাস্ক পরে থাকতে হবে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কথা বলার সময় একে অন্যের কাছ থেকে ৬ ফুট দূরে অবস্থান করতে হবে। এভাবে করোনা সংক্রমণ কমানো যাবে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করতে হবে, মুখ, নাক ও চোখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া নিয়মিত স্মার্টফোন পরিষ্কার করতে হবে। ডা. লিন চেন বলেন, ‘করোনা আমাদের সচেতন হতে শিখিয়েছে।’ 

এইচএকে/আরআর/এএ