মালদ্বীপ দেশটাই ভারত মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত। রাজধানী মালে থেকেই দেখা মিলবে সুবিশাল ভারত মহাসাগরের কিছু অংশ। দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের জনগণের ভারত মহাসাগরের সঙ্গে গভীর মিতালী। ব্যক্তিগত-পেশাগত কাজে ভারত মহাসাগরের বুকের উপর দিয়েই তাদের নিত্য যাতায়াত এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে। 

মালদ্বীপের রাজধানী মালে। মালের নিকটবর্তী আরেক দ্বীপ হনুমালেতে তারা নতুন আধুনিক শহর গড়ে তুলছে। মালে থেকে হনুমালেতে যাওয়ার জন্য এখন সড়ক পথ থাকলেও অনেকেই ভারত মহাসাগরের উপর দিয়েই যাতায়াত করেন। সেক্ষেত্রে সময় একটু বেশি লাগলেও অর্থের কিছুটা সাশ্রয় হয়। 

মালে থেকে হনুমালেতে ছোট ট্রলার বোট চলে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। আধ ঘণ্টা পর পর মালে ও হনুমালে থেকে এগুলো ছাড়ে। এ রকমই একটিতে মালে থেকে হনুমালে যাওয়া হলো। স্থানীয় ১০ রুপি (বাংলাদেশি প্রায় ৫৫ টাকা) করে ভাড়া প্রতি জনের। মালে থেকে হনুমালের যাত্রীদের জি-২তে সারিতে বসানো হয়। জি-১-এ থাকেন যারা মালে থেকে বিমানবন্দরে যাবেন। 

ট্রলার ছাড়ার মিনিট পাঁচেক আগে যাত্রীদের ওঠানো হয়। একটি বোর্ডে একশর বেশি আসন রয়েছে। আসন পূর্ণ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে না বোর্ডগুলো। সময় হওয়ামাত্রই ছেড়ে দেয় যাত্রী যে কয়জনই থাকুক। চলতে শুরু করলে দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। ট্রলারের  সামনের দিকে কেউ যেতে পারে না। উপরে যাওয়ার সিঁড়ি থাকলেও সেখানেও সাধারণ যাত্রীদের প্রবেশাধিকার নেই। দুই পাশের সিটের পাশে জানালা রয়েছে। সেই জানালা দিয়ে ভারত মহাসাগর দর্শন হয় যাত্রীদের।  

বিশ্বের চার ভাগের তিন ভাগই জল। বৈজ্ঞানিক হিসেবে ১০০ ভাগের মধ্যে ৭১ ভাগ পানি আর ২৯ ভাগ স্থল। সেই ৭১ ভাগের ২০ শতাংশের দখল ভারত মহাসাগরের। ভারত মহাসাগরের আয়তন প্রায় ৭৪ লাখ বর্গ কিলোমিটার। ভারত মহাসাগর বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গেই যুক্ত। দক্ষিণ এশিয়ার দুই দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ অবশ্য ভারত মহাসাগরের মধ্যেই অবস্থিত। ভারত মহাসাগরের বুকে এক হাজারের বেশি দ্বীপ রয়েছে মালদ্বীপে। এর মধ্যে বাসযোগ্য দ্বীপ অল্প কয়েকটি। বাকি দ্বীপগুলো তারা পর্যটনের রিসোর্ট হিসেবে ব্যবহার করে। 

মালে থেকে হনুমালে ১৮-২০ মিনিটের পথ হলেও সফরকারী/পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত রোমাঞ্চকর। ট্রলার বোর্ডের জানালা দিয়ে ভারত মহাসাগরের রূপ একদম কাছ থেকে দেখা যায়। ভারত মহাসাগরের ঢেউ এসে জানালার কাঁচ ঘোলা করে দেবে খানিকের জন্য। আবার কিছুক্ষণ পর সেই ঘোলা ভাব মুছবে আরেক ঢেউয়ে। কাঁচ ভেদে মহাসাগরের গর্জনের শব্দ সেভাবে শোনা যায় না। দেখা যায় বিশ্বের তৃতীয় বড় মহাসাগরের বিশালতা। দুই পাশে চোখ যত দূর যায় শুধু ঢেউ আর ঢেউ। মাঝে মধ্যে চোখের সীমা ঢেউয়ের উচ্চতার কাছে হার মানে। সাগরের ঢেউয়ের তালে ট্রলারও কিছুটা দোলে। এতে অনেকের মাথা কিছুটা ঘোরায়। তবে কিছু সময়ের পর অবশ্য ঠিক হয়ে যায়। ভারত মহাসাগরের বিশালতা, গভীরতা বিষয় ভাবতে ভাবতে হনুমালের কাছাকাছি এসে পড়া। 

হনুমালে পা রাখার পরেই মালের চেয়ে ভিন্নতা চোখে পড়বে। হনুমালের রাস্তা-ঘাট অনেক সুপ্রশস্ত। বিল্ডিংগুলোও সুবিশাল। কয়েক বছর আগেও এখানে ছিল সমুদ্র। চর পড়ায় এবং ভরাট করে নতুন জনপদ গড়ে তুলছে মালদ্বীপ সরকার। বাংলাদেশের দূতাবাসও চলে এসেছে হনুমালেতে। এখন হনুমালেতে একটি অস্থায়ী ভবন ভাড়া নিয়ে চলছে। কিছু দিনের মধ্যে বাংলাদেশকে বরাদ্দ করা জায়গায় নিজেরাই গড়ে তুলবে দূতাবাস কার্যালয়। 

বাংলাদেশি প্রবাসীদের সংখ্যাও হনুমালেতে বেশি। দোকানপাট, শিক্ষা  প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও অনেক। ঢাকার উত্তরা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মতো ফ্ল্যাট ব্যবস্থা এই হনুমালেতে। অন্য দ্বীপ থেকে অনেকেই এখানে ফ্ল্যাট কিনছেন। আবার মালে থেকেও অনেকে হনুমালেতে আবাস গড়েছেন। নতুন দিনের মালদ্বীপের পথচলার প্রতীক হয়ে উঠছে হনুমালে।

এজেড/এইচকে