গরম ইঞ্জিন ঠান্ডা করতে পানি ব্যবহার করছেন, হতে পারে যে বিপদ

গাড়ি চালাতে গিয়ে অনেক সময় দেখা যায় ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হয়ে গেছে। যার অন্যতম কারণ, দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত বোঝা টানা, বা পাহাড়ি রাস্তায় ওঠানামার সময়ও ইঞ্জিনে অতিরিক্ত চাপ পড়া।
ইঞ্জিন গরম হয়ে গেলে অনেকেই দ্রুত ঠান্ডা করার জন্য সরাসরি পানি ঢেলে দেন ইঞ্জিনের ওপরে। কিন্তু এই কাজটি মারাত্মক ক্ষতিকর। যা পরবর্তীতে ইঞ্জিনের বিপদ ডেকে আনতে পারে।
এছাড়া ইঞ্জিন অয়েল কমে গেলে ঘর্ষণ বেড়ে যায়, যার ফলে ইঞ্জিন দ্রুত তাপ ধরে ফেলে। কুলিং সিস্টেমে ত্রুটি, যেমন—রেডিয়েটরে পানি বা কুল্যান্টের ঘাটতি, ফ্যান কাজ না করা, থার্মোস্ট্যাট ভালোভাবে না খুলা বা পাম্প নষ্ট হওয়া ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরমের মূল কারণ। এমতাবস্থায় গরম ইঞ্জিনে পানি দিলে মারাত্মক ক্ষতি ও ঝুঁকি রয়েছে।
চলুন জেনে নেয়া যাক, গরম ইঞ্জিনে পানি দেওয়ার মারাত্মক ঝুঁকি সম্পর্কে-
গরম ইঞ্জিনে ঠান্ডা পানি ঢাললে সময়ের সাথে সাথে ইঞ্জিনের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হতে পারে। যার ফলে ধাতব অংশগুলোতে হঠাৎ তাপমাত্রা দ্রুত পরিবর্তনের কারণে থার্মাল শক তৈরি হয়।
তাপমাত্রার বৃহৎ পার্থক্য মোটরসাইকেলের কুলিং সিস্টেমে লিকেজও ঘটাতে পারে, যা ইঞ্জিনের দক্ষতা এবং স্থায়িত্বকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। এতে ইঞ্জিনের ব্লক বা সিলিন্ডার হেডে ফাটল ধরতে পারে, গ্যাসকেট নষ্ট হতে পারে এবং ইঞ্জিন বিকল হয়ে যেতে পারে।
পাশাপাশি, রেডিয়েটরের মধ্যে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হলে সেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পরবর্তীতে স্পার্ক প্লাগের কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, যার ফলে এটি দ্রুত জীর্ণ হয়ে যায় এবং স্পার্ক প্লাগের সিরামিক জ্যাকেটের সম্ভাব্য ক্ষতি করে এবং ভঙ্গুর করে তোলে।
তাছাড়া অনেক সময় পানি সরাসরি ইঞ্জিনের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে, যা ইঞ্জিন অয়েলের সঙ্গে মিশে গিয়ে ইঞ্জিনের ঘর্ষণ কমিয়ে দেয় এবং স্থায়ী ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয়। এমনকি দ্রুত ঠান্ডা করতে গিয়ে রেডিয়েটরের ক্যাপ খুলে বসলে গরম ভাপ বা পানি ছিটকে গায়ে লাগার আশঙ্কাও থাকে, যার ফলে হতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা।
গরম ইঞ্জিনে ঠান্ডা পানির প্রভাবে ইঞ্জিনের রঙের আবরণ এবং ফিনিশকেও প্রভাবিত করে, যার ফলে এগুলো আরও দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। তীব্র তাপমাত্রার পার্থক্য ইঞ্জিনের খাঁজ, বোল্ট এবং অন্যান্য অংশে মরিচা, ক্ষয় এবং ময়লা জমা হতে পারে।
ঠিক তেমনই, গাড়ির ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হওয়া রোধ করতে চাইলে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও সচেতনতা প্রয়োজন।
প্রথমত, রেডিয়েটরে পর্যাপ্ত কুল্যান্ট বা পানি আছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করা। ইঞ্জিন অয়েল ঠিকমতো আছে কিনা এবং তা নির্ধারিত সময় পরপর পরিবর্তন করতে হবে। ফ্যান ও ওয়াটার পাম্প সঠিকভাবে কাজ করছে কি না তা সময়মতো চেক করা জরুরি।
এছাড়া, গাড়ি চালানোর সময় অপ্রয়োজনীয়ভাবে এক টানা লম্বা দূরত্বে না চালানো, ট্রাফিকে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় গাড়ি চালু না রাখা এবং অতিরিক্ত বোঝা বহন এড়িয়ে চলাও সহায়ক হতে পারে। নিয়মিত সার্ভিসিংই হতে পারে এই সমস্যার সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ।
এমবি/এনএইচ