চাহিদা থাকলে আলোর মুখ দেখবে দেশের পরিত্যক্ত বিমানবন্দরগুলো
দেশের পরিত্যক্ত বিমানবন্দরগুলো ব্যবহার উপযোগী করার হবে বলে মন্তব্য করেছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বন্ধ অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরসমূহ চালুকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি একথা বলেন।
আরও পড়ুন>> নতুন দুই এয়ারলাইন্সকে প্লেনের জায়গা দিতে পারছে না বেবিচক
চেয়ারম্যান বলেন, দেশে যেসব স্টল (শর্ট টেক অফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং বন্দর) ও বিমানবন্দর সিভিল এভিয়েশনের অধীনে আছে, কিন্তু দখলে নেই, সেগুলো আমরা পরিদর্শন করছি। সেগুলো সিভিল এভিয়েশনের দখলে আনা হবে, চাহিদা থাকলে পর্যায়ক্রমে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, হেলিপোর্টের নীতিমালা তৈরিতে আমাদের অনেক সময় চলে গেছে এটা ঠিক। ব্যুরোক্র্যাসির কারণে সময় লেগেছে। আমরা আইন ও নীতিমালা দুটো নিয়েই কাজ করছি। আমাদের অর্থনৈতিক সংকট দূর হলে হেলিপোর্ট নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
আরও পড়ুন>>অক্টোবরে শাহজালালের থার্ড টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, অবকাঠামো তৈরির বিষয়ে আমাদের কিছু দুর্বলতা আছে, সমন্বয়হীনতা আছে। আমরা আগামীতে এসব বিষয়ে আরও সুষ্ঠুভাবে কাজ করব। ব্যবহারকারীদের পরামর্শ গ্রহণ করে পরিকল্পনা গ্রহণ করব, যাতে শতভাগ সুফল পাওয়া যায়।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, দেশের ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাভজনক অবস্থায় আছে। অন্যান্য বিমানবন্দরগুলো ভর্তুকি দিয়ে পরিচালনা করতে হচ্ছে জনস্বার্থে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৩য় টার্মিনাল করা হচ্ছে, সেখানে ২য় আরেকটি রানওয়ে প্রয়োজন। কিন্তু সেখানে জায়গা নেই, তাই আমরা আরেকটি ডিপেন্ডেবল রানওয়ে করার পরিকল্পনা নিয়েছি।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মনিটর সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এটিএম নজরুল ইসলাম।
আরও পড়ুন>>বেবিচকের বকেয়া ৫৮২ কোটি টাকা, বিপাকে ভ্যাট অফিস
এ সময় তিনি বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করা হচ্ছে। ব্রিটিশ আমল থেকেই কক্সবাজার কৌশলগত অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত। তাই স্থান সংকুলান হলে এখানে আরও একটি রানওয়ে তৈরি করতে হবে। আমাদের দেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলকে আরও কর্মচঞ্চল করার জন্য ও চার দেশের সংযোগস্থলে (চিকেন নেক) বাণিজ্যিক সুবিধা নেওয়ার জন্য সৈয়দপুর বিমানবন্দরকেও অনতিবিলম্বে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করতে হবে। সব চালু অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোকে সংস্কার করে পূর্ণোদ্দমে পরিচালনার ব্যবস্থা করতে হবে। রাত্রিকালীন ও খারাপ আবহাওয়ায় অবতরণ ব্যবস্থায় উন্নয়ন আনতে হবে। যে ৪টি বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে আছে সেগুলো পুনরায় চালু করে অভ্যন্তরীণ এভিয়েশন বাজার সম্প্রসারিত করতে হবে। অধিক সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে উড়োজাহাজ ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে হবে। ঢাকায় হেলিকপ্টার অপারেশন জন্য প্রস্তাবিত হেলিপোর্ট নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে চাপমুক্ত করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে। পরিত্যক্ত এয়ারস্ট্রিপগুলো উদ্ধার করে বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসার পর এগুলিকে স্টল পোর্ট, হেলিপোর্ট, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও রক্ষণাবেক্ষণ অর্গানাইজেশন হিসেবে চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে।
অনুষ্ঠানে নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইটের চাপ বেড়েছে। একটি ফ্লাইট টেক অফ করার সময় ৩০-৪০ মিনিট ট্যাক্সিতে অপেক্ষা করতে হয়। অবতরণের পর ট্যাক্সিতে ২০-৩০ মিনিট সময় ট্যাক্সিতে নষ্ট হয়। এ কারণে অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ হচ্ছে এয়ারলাইনগুলোর। ২য় রানওয়ে হলে এ সংকট দূর করা সম্ভব হবে। দেশের এভিয়েশন খাতের অবকাঠামোগুলো নির্মাণ করার সময় ব্যবহারকারী হিসেবে এয়ারলাইনগুলোর পরামর্শ নেওয়া হয় না, যার করণে সুফল মিলছে না।
এ সময় সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক (কর্পোরেট ট্রেনিং অ্যান্ড প্লানিং) এয়ার কমোডর মো. মাহবুব জাহান খান, বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম।
এআর/এমএ