যে দাবিতে আন্দোলনে ঢাবি শিক্ষার্থীরা

ঢাবি শিক্ষার্থীদের সমাবেশ
করোনা মহামারির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে একযোগে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার। এ ঘোষণার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে নিজ নিজ বাড়ি চলে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রম চালু রাখে সরকার। অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীকেই আবার ঢাকামুখী হতে হয়। হল বন্ধ থাকায় ঢাকায় এসে বিভিন্ন এলাকায় মেসে উঠতে হয় তাদের।
ঢাবি শিক্ষার্থীরা জানান, প্রায় এক বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মেসে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। এতে যেমন তাদের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি মানসিকভাবেও তারা ভেঙে পড়ছেন। আর যেসব শিক্ষার্থীর অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ, তারা ঢাকায় টিকে থাকতে পারছেন না। গ্রামে ইন্টারনেটের ধীর গতি ও পর্যাপ্ত ডিভাইস না থাকার কারণে তাদের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অন্যদিকে, ঢাকায় না থাকলেও, একাডেমিক ফি দিতে ও পড়ালেখার নানা উপকরণ সংগ্রহ করতে ঠিকই শিক্ষার্থীদের ঢাকায় আসতে হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বারবার ঢাকায় আসা-যাওয়ার কারণে তাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, মূলত এসব কারণে ক্যাম্পাস ও হল বন্ধ হওয়ার প্রায় এক বছর পর আন্দোলনে নামতে হয়েছে তাদের। দ্রুত হল খুলে এ ভোগান্তি থেকে উদ্ধারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।
ঢাবির সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রুবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার গ্রামের বাড়ির ভোলা। হল বন্ধের ঘোষণার পর বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু যখন অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রম শুরু হয় তখন আবার বাধ্য হয়ে গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে মেসে উঠি। গত পাঁচ মাস ধরে মেসে মানবেতর জীবনযাপন করছি। অনেক কষ্টে বকশিবাজারে একটি মেসে থাকতে হচ্ছে। হলে থাকলে খরচ হত ২-৩ হাজার টাকা। কিন্তু এখন মেসে থাকতে প্রতিমাসে ৫-৭ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি। এত টাকা দিয়ে ঢাকায় থাকা আমার জন্য কষ্টকর।
ক্যাম্পাস ও হল বন্ধ থাকলেও শিক্ষা-কার্যক্রম চালু থাকায় শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ঢাবিতে আসতে হচ্ছে বলে জানিয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের শিক্ষার্থী নূর আমিন (মনোবিজ্ঞান বিভাগ, চতুর্থ বর্ষ) ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্রামের বাড়িতে অনলাইনে ক্লাস করতে ও পরীক্ষা দিতে পারলেও নানা ফি দিতে ও কাগজপত্র নিতে ঠিকই ক্যাম্পাসে আসতে হয়। আমার বাড়ি নীলফামারী। এত দূর থেকে বারবার কিভাবে ঢাকায় আসি। এছাড়া বই থেকে শুরু করে পর্যাপ্ত উপকরণ গ্রামে পাওয়া যায় না। পরীক্ষা ও ক্লাসের আগে নীলক্ষেত তো অবশ্যই আসতে হয়। এভাবে আসা-যাওয়া করা আমাদের জন্য কষ্টকর। তাই আমরা চাই তাড়াতাড়ি হল খুলে দেওয়া হোক।
সরকারের পক্ষ থেকে ফ্রি ডাটা ও মোবাইল ফোন দেওয়ার কথা থাকলেও ঢাবি শিক্ষার্থীরা পাননি উল্লেখ করে বিজয় ৭১ হলে শিক্ষার্থী মো. তৌহিদ তালুকদার বলেন, ফ্রি ডাটা ও মোবাইল ফোন দিলে গ্রামের বাড়ি বসে অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা দেওয়া যেতো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুধু তালিকা-ই করেছে। আমাদের এখনো সেগুলো দেয়নি। বাধ্য হয়েই ঢাকা চলে এসেছি। মেসে ভালোভাবে থাকতে পারছি না। সেখানে অনেক সমস্যা। হল না খুলে না দিলে আমাদের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এছাড়া আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, হল, বাস ও পরীক্ষা ফি বাবদ তাদের ৪ হাজার ৩ টাকা দিতে হচ্ছে। তাহলে কোন যুক্তিতে প্রশাসন হল খুলছে না। হল বন্ধ থাকার কারণে তারা লাইব্রেরি সুবিধা পাচ্ছেন না। গ্রুপ স্টাডিও হচ্ছে না তাদের। ফলে পরীক্ষা ও ক্লাস চালু থাকলেও তারা ঠিকভাবে পড়ালেখা করতে পারছে না। এতে করে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন তারা। তাই তারা দ্রুত হল খোলার দাবি জানাচ্ছেন।
সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য পাদদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করে সমস্যা ও ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন। এসময় তারা ১ মার্চ হল খুলে দেওয়ার দাবি জানান। এসময় তারা হল খোলার বিষয়ে নির্দেশনার জন্য ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। পরে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের কাছে শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি জমা দেন। তিনি শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন যে, মঙ্গলবারের পর সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এর আগে দুপুরের দিকে স্লোগান দিতে দিতে শহীদুল্লাহ হল ও অমর একুশে হলে জোরপূর্বক ঢুকতে দেখা যায় ঢাবি শিক্ষার্থীদের।
এমএসি/আরএইচ