বাবার সাহসে ছাত্রলীগ নেত্রীর নির্যাতনের প্রতিবাদ জানান ফুলপরি

Dhaka Post Desk

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, ইবি

২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৫২ এএম


বাবার সাহসে ছাত্রলীগ নেত্রীর নির্যাতনের প্রতিবাদ জানান ফুলপরি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ফুলপরী খাতুন/ ঢাকা পোস্ট

‘ক্যাম্পাসে গিয়েছি এক সপ্তাহও হয়নি, এর মধ্যেই আমার সঙ্গে এরকম ঘটনা ঘটল। প্রথমে চুপচাপ ছিলাম। ভয় পেয়ে কাউকে না জানিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। পরে পরিবারের সদস্যদের বিশেষ করে বাবার অভয় পেয়ে অভিযোগ করেছি।’

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফুলপরি খাতুন। সম্প্রতি তার ওপর বর্বর নির্যাতন চালান বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল শাখা ছাত্রলীগের এক নেত্রী। গতকাল (১৯ ফ্রেব্রুয়ারি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের এই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা।

ফুলপরী খাতুন তাদের বলেন, প্রতিবাদ না করলে আমার সঙ্গে আরও মারাত্মক কিছু ঘটত। আমার সঙ্গে যা হয়েছে, অভিযুক্তদের যত বড় শাস্তিই হোক, তার ক্ষত বহুদিন রয়ে যাবে। আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি যাতে কোনো অন্যায়ই প্রশ্রয় না পায়। ক্ষমতার অপব্যবহার কেউ যেন না করতে পারে। আমি মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমি বাবা-মায়ের বড় সম্পদ- এটি ভেবেই কেবল আত্মহত্যা করিনি।

ফুলপরি বলেন, আমি চুপ থেকে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫-৬টা বছর কষ্ট করে থাকব? আবার নতুন যারা আসবে তাদের সঙ্গেও এমন করবে। ভবিষ্যতে এমন অন্যায় যেন কোনো মেয়ের সঙ্গে না হয়। আমার পরিবার অনেক সাপোর্ট দিচ্ছে। বিশেষ করে আমার ভাইয়া, আব্বু, আম্মু, মামারা খুব সাপোর্ট দিচ্ছেন। আমি নির্যাতনকারীদের সর্বোচ্চ বিচার চাই। যাতে আর কখনো কোনোদিন কেউ এরকম কারও সঙ্গে করার সাহস না পায়।

এসময় ফুলপরির সঙ্গে ছিলেন বাবা আতাউর রহমান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মানুষের জীবনে অনেক কিছু ঘটে, সেগুলো নিয়েই চলতে হবে। আমার মেয়ে বাড়ি এসে আমার কাছে ঘটনা বলল। তখন ভেবেছি আজ আমার মেয়ের ওপর হয়েছে, সামনে আরও হাজার হাজার মেয়ের ওপর  হবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করছি আমরা, যাতে অন্যায় প্রশ্রয় না পায়। আমি এর সুষ্ঠু বিচার ও কঠিন শাস্তি চাই। আমার মেয়ের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে তা যেন অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে না ঘটে।

গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ফুলপরি। কর্তৃপক্ষ দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ইতোমধ্যে তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কমিটির আহ্বায়ক। এদিকে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আজ সোমবার বেলা ১১টার মধ্যে তথ্য প্রমাণাদি চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
 
গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা তদন্ত কমিটির ডাকে বাবা ও মামাকে নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন ভুক্তভোগী। ১২টায় আসার পর তদন্ত কমিটির কাছে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে ঘটনার বর্ণনা দেন ফুলপরী। বক্তব্য শেষে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বাড়ি ফিরে যান তিনি।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. রেবা মন্ডল বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। আমরা মেয়েটিকে ডেকে ঘটনা শুনেছি এবং সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। খুব শিগগিরই প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

এদিকে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে থাকা অন্য শিক্ষার্থীরা। আতঙ্কিত গণরুমের অন্য ছাত্রীরা নিজ নিজ বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। অনেকে পারিবারিক চাপে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। প্রতিটি গণরুমে ১৫-১৬ জন করে থাকলেও এখন ৫-৬ জন করে আছেন। হলের একাধিক ছাত্রী বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনায় পরিবার জানতে পেরে বাসায় যেতে বলছেন। এছাড়া হলে একটা আতঙ্ক ও ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। পড়াশোনার পরিবেশ স্বাভাবিক করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

আজ সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় তদন্ত কমিটির ডাকে বক্তব্য দিতে ক্যাম্পাসে আসবেন ভুক্তভোগী ছাত্রী ফুলপরী এবং নির্যাতনে অভিযুক্ত ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তাবাসসুম।

ক্যাম্পাসে যতক্ষণ থাকবেন ততক্ষণ ফুলপরীদের নিরাপত্তা দেবে প্রক্টরিয়াল বডি। প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ বলেন, আমরা তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেব। 

কী ঘটেছিল ফুলপরীর সঙ্গে

ছাত্রলীগ নেত্রীর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী ফুলপরী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। সেখানে তিনি বলেন, গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় আমি নির্যাতনের শিকার হই। ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রথম দফায় র‍্যাগ দেয় এবং হল থেকে বের করার চেষ্টা করে। পরে হলের প্রভোস্ট, প্রক্টরসহ অন্যদের সহযোগিতায় বিষয়টির সমাধান হয়। পরদিন ১২ ফেব্রুয়ারি অন্তরা আপুসহ ৭-৮ জন গণরুমে (দোয়েল-১) ডেকে নিয়ে আমাকে মারধর করেন। তারা আমাকে এলোপাতাড়ি চড় মারতে থাকেন। মারার কারণ জানতে চাইলে মুখ চেপে ধরেন ও গালিগালাজ করেন। এরপর ময়লা গ্লাস মুখ দিয়ে পরিষ্কার করিয়ে নেন। পরে আমাকে জামা খুলতে বলেন তারা। জামা না খুললে পুনরায় মারতে থাকেন। এরপর জোর করে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন এবং ওই ভিডিও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দেন। এ ঘটনা কাউকে বললে মেরে ফেলার হুমকিও দেন।

রাকিব হোসেন/আরকে/জেএস 

Link copied