অনার্সে ফেল করেও মাস্টার্স পাশ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী অনার্সে অকৃতকার্য হয়েও মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়ে পাশ করার ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তীতে অনার্সের অকৃতকার্য কোর্সে পরীক্ষার জন্য আবেদন করলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটিও গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা শেষে ওই শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীকে বিশেষ পদ্ধতিতে অনার্সের মানোন্নয়ন পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল। পরে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় বলে জানা গেছে। ফলে ওই শিক্ষার্থীকে পুনরায় অনার্সের পরীক্ষা দিতে হবে।

রেজিস্ট্রার দপ্তর ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের একাধিক সদস্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই শিক্ষার্থীর নাম শামীরুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৭ সালে ওই শিক্ষার্থীর স্নাতক শেষ বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তার রোল নম্বর ছিল ১৩২১০৩৭। পরে স্নাতক শেষ বর্ষের ৪১৫ নম্বর কোর্সে ফেল করেন তিনি। তবুও ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে তিনি স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন। ২০১৮ সালে তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তরে কৃতকার্য হন। পরবর্তীতে দীর্ঘ চার বছর পর স্নাতক শেষ বর্ষের অকৃতকার্য বিষয়ে পরীক্ষার জন্য তিনি আবেদন করলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে ও আলোচনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমানকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপাচার্য। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হলে এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। এসময় সভার কয়েকজন সদস্য বিভাগ ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের গাফিলতির বিষয় তুলে ধরেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শামীরুল ইসলাম বলেন, মূল কাগজপত্র উত্তোলন করতে গিয়ে এ বছরের ১৭ জানুয়ারি আমি জানতে পারি অনার্সে একটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিলাম। তখন এ বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। এমনকি বিভাগ থেকেও অকৃতকার্যের বিষয়টি আমাকে অবহিত করা হয়নি। আমি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের সাময়িক সনদপত্র উত্তোলন করেছিলাম। সেখানে আমাকে কৃতকার্যই দেখানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে ডেকেছিল। আমি সব ডকুমেন্ট সেখানে উপস্থাপন করেছি।

অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলী বলেন, এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর যেমন গাফিলতি আছে। তেমনই বিভাগ, পরীক্ষা কমিটি ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরও দায় এড়াতে পারে না। এ ধরনের গাফিলতি মানা যায় না। সংশ্লিষ্টদের অধিকতর সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবুল কালাম আজাদ বলেন, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে ওই শিক্ষার্থীর সনদ বাতিল করে পুনরায় বিশেষ মানোন্নয়ন পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সিন্ডিকেটের পর সিদ্ধান্তের চিঠি আমরা এখনো পাইনি।

তদন্তে বিভাগ বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণকক্ষের গাফিলতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, এখনও ভিসির অনুমোদন হয়নি। আর এ বিষয়ে আমি সঠিক জানি না। অনুমোদন হয়ে আসলে বলতে পারব।

এ বিষয়ে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতি ড. বখতিয়ার হাসান বলেন, আমি এখনো সিদ্ধান্তের চিঠি পাইনি, এজন্য মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। যতটুকু জেনেছি তদন্তে হয়ত বিভাগের নেগলিজেন্স পাওয়া যায়নি। এটা ওই শিক্ষার্থীর নেগলিজেন্স ছিল। তবে মাস্টার্সে ভর্তির সময় ভালোভাবে চেক করলে হয়ত এমন ঘটনা ঘটতো না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত দেবে বিভাগ সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলাম। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় তার দুই সনদ বাতিল করা হয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনায় তাকে পুনরায় পরীক্ষার ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

রাকিব হোসেন/এমজে