হলে তিন শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ঢাবি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের তিন শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার (৬ ডিসেম্বর) রাত ১টার দিকে হলের গেস্ট রুমের পাশে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
ভুক্তভোগী তিন শিক্ষার্থী হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ পাভেল, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী খালেদ সাইফুল্লাহ এবং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী অনমি রহমান। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ সেশনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন, নূর উদ্দিন আহমেদ এবং আব্দুল্লাহ আল মুনতাসীর শুভ। নূর উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সম্পাদক।
আব্দুল্লাহ আল মুনতাসীর শুভ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি। রাজনীতিতে তারা উভয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী হিসেবে পরিচিত এবং হলের বর্তমান পদ প্রত্যাশী নেতা।
হল সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন কর্মসূচিতে বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণ করা নিয়ে ভুক্তভোগীদের প্রায়ই গালিগালাজ করতেন নূর উদ্দিন ও মুনতাসীর শুভ। প্রায়ই তাদের রুম থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিতেন অভিযুক্তরা। সর্বশেষ গত সোমবার রাত ১১ টার পরে রুমে এসে গালাগালি করেন নূর উদ্দিন। পরবর্তীতে গতকাল রাত ১টার দিকে নুর উদ্দিন পাভেল ও খালেদ সাইফুল্লাহ, অনমি রহমানকে হল রিসিপশন থেকে বাইক স্ট্যান্ডের দিকে ডেকে নিয়ে আবারও গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে উপর্যুপরি চড়-থাপ্পড় দেওয়া শুরু করেন তারা। এ সময় খালেদ সাইফুল্লাহ ও অনমী তাদের আটকাতে গেলে তারাও আক্রোশের শিকার হন।
আরও পড়ুন
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ পাভেল বলেন, গতকাল রাত আনুমানিক ১টার দিকে আমি, আমাদের ব্যাচমেট সাইফুল্লাহ, জুনায়েদ, অনমি নাভিদসহ সবাইকে হলের বাইক স্ট্যান্ডে নিয়ে আসে। এরপর আমাদের অহেতুক হয়রানি এবং গালিগালাজ শুরু করেন তারা। এসময় হঠাৎ করে নূর উদ্দিন আমাকে মারধর শুরু করেন। আমাকে এলোপাতাড়ি চড় থাপ্পড় মারতে থাকে। এসময় আমাকে বাঁচাতে আসলে খালেদ সাইফুল্লাহ ও অনমিও বেধড়ক মারের শিকার হয়।

খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, সোমবার রাতে নুরুদ্দীন আমাদের বৈধ সিট থেকে নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে আমরা রুমের সবাই মিলে সেটার প্রতিবাদ করি। তার জের ধরে গতকাল রাত আনুমানিক ১টার দিকে আমাদের রুম থেকে তিনজনকে ডেকে এনে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। একপর্যায়ে আমাদের নীরব ভূমিকা দেখে নুরুদ্দীন এবং মুনতাসীর শুভ বেধড়ক মার শুরু করে।
অনমি রহমান বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের অমানবিকভাবে মারধর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত নুর উদ্দিন বলেন, এটা মিথ্যা ও বানোয়াট কথা। আমরা তাদের কাউকে মারিনি বা গায়ে হাত তুলিনি। তারা ইমিডিয়েট সিনিয়রদের সঙ্গে বেয়াদবি করেছিল, এজন্য তাদেরকে একটু ধমক দেওয়া হয়েছে, এর বেশি কিছু নয়।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে অপর অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল মুনতাসীর শুভর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে আমরা সে অনুযায়ী তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
সার্বিক বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো আব্দুর রহিম বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। গতকালের ঘটনা তারা আমাকে একটু আগেই জানিয়েছে। আমি বিষয়টি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১০ মে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিনতাইয়ের অভিযোগে নূর উদ্দিন ও মুনতাসীর শুভকে গ্রেপ্তার করেছিল শাহবাগ থানা পুলিশ। পরবর্তীতে ১১ মে তাদের কোর্টে পাঠানো হয়। দীর্ঘ ৩ মাস জেলে থাকার পরে তারা জামিনে মুক্ত হয়ে ফের হল ছাত্রলীগের নেতৃত্বের হাল ধরার চেষ্টা করছেন তারা।
কেএইচ/এসকেডি