অনলাইনে পরীক্ষায় ইন্টারনেটের গতি নিয়ে ভয়

করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতোই গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। ২০২০-এ জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে অনলাইনে ক্লাস ও দুটি সেমিস্টারের মিডটার্ম পরীক্ষা হলেও আটকে আছে বিভিন্ন বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা। এমন অবস্থায় করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে জুলাই থেকে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তবে সেশনজট এবং চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে পিছিয়ে যাওয়ার কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী অনলাইন পরীক্ষার পক্ষে মত দিলেও তারা চিন্তিত ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে। অনলাইনে পরীক্ষার পরিবর্তে অ্যাসাইনমেন্ট আকারে পরীক্ষারও দাবি জানান তারা।
ইসলামের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু হুরায়রা আতিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ইন্টারনেটের উচ্চমূল্য ও দুর্বল সংযোগের কারণে আমরা অনলাইনে ক্লাস করতে পারছি না। সেখানে অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার কথা চিন্তা করা বিলাসিতা। সেশনজট নিরসনে পরীক্ষার বিকল্প নেই। সব শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করলে অনলাইনে পরীক্ষার পরিবর্তে অ্যাসাইনমেন্ট আকারে পরীক্ষা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। নতুবা আমাদের ওপরে দীর্ঘদিনের মানসিক, শারীরিক চাপের ওপরে আরেকটি চাপ এসে পড়বে; যা হলো শিক্ষা চাপ। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য মোটেই কল্যাণকর নয়।’
‘শিক্ষার্থীদের সমস্যা দূর না করে অনলাইন পরীক্ষার সিদ্ধান্ত প্রহসন’ উল্লেখ করে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীন সুইটি বলেন, ‘যেখানে স্মার্ট ডিভাইস সংকট, দ্রুতগতির ও সহজলভ্য ইন্টারনেট কানেকশনের অপ্রতুলতা, আর্থিক অসচ্ছলতা, বিদ্যুৎ সরবরাহ সংকটসহ নানাবিধ সমস্যার কারণে দেশের ৩০-৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস করার সুযোগ পায়নি সেখানে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত এক ধরনের প্রহসনমূলক সিদ্ধান্ত। তবে করোনা মহামারি কতদিন থাকবে তা যেহেতু অনিশ্চিত, তাই শিক্ষাব্যবস্থাকে আর ধ্বংসের দিকে না ঠেলে দিয়ে অনলাইন পরীক্ষা বা বিকল্প পদ্ধতির কথা চিন্তা করাটা যৌক্তিক বটে।’
সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফরহাদ আহমেদ বলেন, ‘অনলাইনে আমি মাত্র ৪ দিন ক্লাস করতে পেরেছি। ক্লাস করতে হলে বাড়ি থেকে অনেকদূর হেঁটে যেতে হয় নেটওয়ার্কের জন্য। এখন অনলাইনে পরীক্ষা হলে আমার মতো অনেকেরই অনেক বড় বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হবে। তাই অনলাইনে পরীক্ষার পরিবর্তে অ্যাসাইনমেন্ট আকারে পরীক্ষা নেওয়া হলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো।’
একই বর্ষের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ স্বাধীন বলেন, ‘গ্রামে তো ওয়াইফাই বা হাই স্পিড কোনো নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া ইন্টারনেট সংযোগ করতে আর্থিক সংযোজন করা সবসময়ের মতো সম্ভব হয়ে ওঠে না বিধায় অনলাইনে পরীক্ষা গ্রাম্য পরিবেশ থেকে সম্পন্ন করাটা অনেকটা অযৌক্তিক।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এটা (ইন্টারনেট) খুব স্বাভাবিক বিষয়। তাছাড়া স্ব-স্ব বিভাগ-ইনস্টিটিউট বিষয়গুলো দেখে সিদ্ধান্ত নেবে। আশা করি, জাতীয়ভাবেও ইন্টারনেট সংযোগের সক্ষমতা বাড়ানো হবে।’
এর আগে, বৃহস্পতিবার (৬ মে) বিকেলে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিষদের (একাডেমিক কাউন্সিল) সভায় অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। একাডেমিক কাউন্সিলে উপস্থিত একাধিক সদস্য ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আগামী ১ জুলাই থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফাইনাল/বার্ষিকসহ সব পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়া হবে।
সভায় কৌশলগত কারণে প্রতিটি কোর্সকে একাধিক ভাগে ভাগ করে বিভিন্ন ধরন/পদ্ধতিতে পরীক্ষা (যেমন- বর্ণনামূলক সংক্ষিপ্ত আকারে, এমসিকিউ, কুইজ, অ্যাসাইনমেন্ট এবং ওপেনবুক পরীক্ষা) নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরীক্ষার সময় ও পূর্ণমান কমানো হবে, তবে মূল্যায়ন করা ফলাফলকে প্রচলিত পূর্ণমানে রূপান্তর করে চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি করা হবে। ক্রেডিট অপরিবর্তিত থাকবে। এছাড়া, কম্পিউটারভিত্তিক ব্যবহারিক পরীক্ষাসমূহ অনলাইনে নেওয়া হবে। অন্যান্য ল্যাবভিত্তিক ব্যবহারিক পরীক্ষা যথাযথ নিয়মে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সশরীরে নেওয়া হবে।
সভায় অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য নিজ নিজ একাডেমিক ঘরানার পরীক্ষা ও প্রশ্নের ধরন নির্ধারণ করে ডিন ও ইনস্টিটিউটের পরিচালকদের একটি গাইডলাইন তৈরি করতেও বলা হয়েছে।
এইচআর/এফআর/জেএস