ঢাবির সাংবাদিকতা বিভাগের ৩ শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় বিক্ষোভ

গতকাল এনসিটিবির সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তিনজন শিক্ষার্থী, সংক্ষুদ্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা ও সাংবাদিকদের ওপর হওয়া হামলার ঘটনার নিন্দা ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিভাগটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা।
পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত একটি গ্রাফিতি রাখাকে কেন্দ্র করে বুধবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবনের সামনে সংক্ষুদ্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতার ওপর স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি নামক একটি প্লাটফর্মের সদস্যদের হামলার ঘটনায় অন্যদের সঙ্গে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রুপাইয়্যা শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা, ১৫ তম ব্যাচের রাহী নায়েব ও ববি বিশ্বাস আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন
সমাবেশে হামলার শিকার হওয়া গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ববি বিশ্বাস বলেন, একটা জাতিগোষ্ঠী যখন নিজের সংস্কৃতি, ভাষা নিয়ে বেড়ে ওঠে তাকে কীভাবে আমরা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলতে পারি! তাদের যে অস্তিত্বের স্বীকৃতি আদিবাসী শব্দ তা মুছে ফেলার অধিকার আমাদের কে দেয়? গতকাল যখন আমরা মতিঝিলে যাই তখন আমরা সবাই নিরস্ত্র ছিলাম। আমরা সবাই শিক্ষার্থী এবং অ্যাক্টিভিস্ট ছিলাম। আমরা কেবল কিছু প্ল্যাকার্ড নিয়ে সেখানে গিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, গতকাল এ দেশের পতাকাকে মারাত্মকভাবে অপমানিত হতে দেখেছি। দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটার মধ্যে পতাকা বেঁধে নিয়ে এসেছিল তারা। সেই পতাকা বাঁধা অস্ত্র দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করা হয়। আমার , শ্রেষ্ঠা দিদি, আমার বন্ধু রাহী ও অন্যান্যদের ওপর আঘাত করা হয়। আমাদের রক্ত লেগেছে সেই অস্ত্রে বাঁধা পতাকাগুলোয়। এ দেশে যারা অধিকারের কথা বলে তাদের ওপর হামলা করা হয়। অধিকারের কথা বলতে গেলে মানুষের হাতে মানুষকে রক্তাক্ত করার সংস্কৃতির অবসান হোক।
আরেক আহত শিক্ষার্থী রাহী নায়েব বলেন, তারা আগে থেকেই স্টাম্প নিয়ে সেখানে অবস্থান করেছিল। আমরা ধারণা করছিলাম, তারা আমাদের ওপর হামলা করবে। কিন্তু পুলিশ মাঝখান থেকে সরে গিয়ে হামলার সুযোগ করে দিবে, তা আমরা আশা করি নাই। সরকারের যদি সদিচ্ছা থাকে, তাহলে ফুটেজ থেকে সবাইকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব। সরকার যদি তাদের গ্রেপ্তার না করে, তাহলে আমরা বুঝে নেব, এই সরকার কারা পরিচালনা করছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ৩ জন শিক্ষার্থীসহ যাদের ওপর হামলা করা হয়েছে, যারা এখন হাসপাতালে কাতরাচ্ছে , এই হামলার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ঘৃণা ও ধিক্কার জানানোর ভাষা আমাদের নাই। আমরা তাদের গ্রেপ্তার ও যৌক্তিক শাস্তির দাবি জানাই।
তিনি বলেন, আজকে পাঠ্যবই থেকে আদিবাসীদের যে স্বীকৃতি তা ছিড়ে ফেলা হয়েছে। এমনকি তাদের সহ্য করাও হচ্ছে না। বাংলাদেশের ৬১টি জেলায় সিভিল শাসন কিন্তু তিন পার্বত্য জেলায় নির্জলা সেনা শাসন। এটা কোনোদিন আমরা বরদাস্ত করতে পারি না। একটা নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী যাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি আছে তাদের আদিবাসী বলে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না এই বলে যে তারা বিচ্ছিন্নতাবাদী। এমনকি পাঠ্যবইয়ে তাদের স্বীকৃতি ছিড়ে ফেলা হয়েছে, তাদের সহ্য করাও হচ্ছে না। পাহাড়ে তাদের জমি উৎখাত করা হচ্ছে আবার এখন সমতলেও তাদের উপর হামলে পড়া হচ্ছে। দ্রুত এই হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে না হলে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচিতে যাব।
জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সেলের সদস্য মীর আরশাদুল হক বলেন, তারা রূপাইয়্যা শ্রেষ্ঠার ওপর এমনভাবে হামলা করেছে যে তার মাথায় ১২টি সেলাই লেগেছে। এই রূপাইয়্যা অভ্যুত্থানের সময় মোহাম্মদপুর থেকে নিয়মিত আন্দোলন করেছে। তাঁর ভাইকে স্থানীয় কাউন্সিলর তুলে নিয়ে নির্যাতন করেছে।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি, স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি যখন রাজুতে কর্মসূচি করে, তখনি পাহাড়ে আগুন লাগে, সংঘর্ষ হয়। তারা এখান থেকে এসবে উসকানি দিয়েছে। যারা পেছন থেকে উসকানি দিয়েছে, তাদেরকে সামনে এনে গ্রেপ্তার করতে হবে।
বিক্ষোভ সমাবেশে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক খান, সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম, সাইফুল আলম চৌধুরী, কাজলী শেহরীন ইসলাম, সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী, সহকারী অধ্যাপক মার্জিয়া রহমানসহ বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/এআইএস