দেশগঠনে একসঙ্গে কাজের তাগিদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের

দেশ গঠনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, রাজনৈতিক নেতা, সিভিল সোসাইটি এবং গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের একসঙ্গে কাজ করার তাগিদ জানিয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা।
সোমবার (২৩ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী ‘দ্য স্টেট রিফর্মস অ্যান্ড ইলেকশন ডিসকোর্স ইন ট্রানজিশনাল ডেমোক্রেসিস: ফ্রম মাস আপরাইজিং টু ইলেকশন অ্যান্ড স্টেট বিল্ডিং’ শীর্ষক ‘ফার্স্ট পলিটিক্যাল কনফারেন্স’ এর দ্বিতীয় দিনে এ তাগিদ জানান আলোচকরা।
শ্যাডো রিফর্ম কমিশন, শ্যাডো ন্যাশনাল কনসেনসাস কমিশন এবং পলিটিক্যাল অ্যান্ড পলিসি সায়েন্স রিসার্চ ফাউন্ডেশনের যৌথভাবে কনফারেন্সটি আয়োজন করে। সমাপনী দিনে ছিল গণমাধ্যম, রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ‘গণতান্ত্রিক উত্তরণে গণমাধ্যম, রাজনৈতিক এবং সিভিল সোসাইটির ভূমিকা’ শীর্ষক সেশন।
সেশনের শুরুতে কনফারেন্সের আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ১১টি ছায়া সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের সারাংশ উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, কনফারেন্সটিকে আমরা যেন একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করি এবং জ্ঞান আহরণ, ভাবনার বিনিময়, ন্যায়ভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের লক্ষ্যে একসাথে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করি। আমরা দ্রুত ছায়া সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্ট প্রকাশ করব। আশা করি দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে এই কনফারেন্স এবং ছায়া সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এরপর সেশনে অংশগ্রহণ করেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আমার বাংলাদেশ পার্টির সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন, জবান ম্যাগাজিনের সম্পাদক রেজাউল করিম রনি, জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব আকরাম হোসাইন এবং সিটিজেন কোয়ালিশনের সদস্য জিয়া হাসান।
সেশনটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে আলোচনা চলছে। আগামী মাসের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা পর্যায়ে পৌঁছাতে পারব। এর মাধ্যমে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হবে।
তিনি বলেন, সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ১১টা কমিশন গঠন করছে। আপনারা একইভাবে সংস্কার কমিশন গঠন করছেন। আপনাদের কমিশনগুলোর রিপোর্ট আগে পেলে আমরা উপকৃত হতাম।
অধ্যাপক মামুন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে প্রত্যেক রেজিমের সময় আমরা এক্সপেরিয়েন্স করি, সরকারের কাছে জনগণের কিছু প্রত্যাশা থাকে। এই প্রত্যাশাগুলো সরকার যখন পূরণ করতে পারে না, তখন মানুষ ভাবে, আমরা যা চাই তা হওয়া উচিত এবং তা হওয়ার জন্য কিছু সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কারের জন্য বিভিন্ন কমিশন হয়, কমিশনগুলো রিপোর্ট তৈরি করে। কিন্তু আক্ষরিক অর্থে সেই সংস্কার মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করে না।
আব্দুস সালাম বলেন, বিএনপি দেশে সংস্কার করেছে প্রথম। শেখ মুজিবুরের বাকশাল থেকে বিএনপিই বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছে। শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট বানিয়েছে আমলারা। আমলারা আজকেও সব পরিচালনা করছে। আমাদের সংস্কার চলমান, চলবে।
ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, সংকটের গোড়ায় হাত দিতে হবে। আমাদেরকে অবশ্যই নাগরিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাষ্ট্রের ইন্টিগ্রেশন হয়নি। আপনি এখানে মানুষ দেখবেন, নাগরিক দেখবেন না। আপনি জনগণ দেখেন, প্রজা আকারে দেখেন। নাগরিক আকারে দেখেন না। এই জনগণের সাথে ক্ষমতার সম্পর্কটাই আমরা দেখি না।
কনফারেন্সে সমাপনী বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইয়াহইয়া আখতারের।
এর আগে, গতকাল রোববার কনফারেন্সের প্রথম দিন কী-নোট স্পিচ দেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এবং উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান। দু'দিনব্যাপী সম্মেলনের ১৬টি সেশনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকরা প্রায় ৬০টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এসএআর/এমজে