ভোট কারচুপির অভিযোগকারীর আচরণ সন্দেহজনক : ঢাবি কর্তৃপক্ষ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ ঘিরে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। টিএসসি কেন্দ্রের এক ভোটার দাবি করেছিলেন, তিনি ব্যালট পাওয়ার পরই দেখেন যে সেখানে আগে থেকেই শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম এবং জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের নামে ভোট চিহ্নিত করা আছে। তবে এ অভিযোগ পর্যালোচনা করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন সিসিটিভি ফুটেজে ভিন্ন ধরনের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেছে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের দিন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক প্রার্থী রূপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি জানান, তার এক বন্ধু ভোট দিতে গিয়ে টিএসসির ১ নম্বর টেবিল থেকে ব্যালট নেওয়ার পরই দেখতে পান যে নির্দিষ্ট দুই প্রার্থীর পাশে আগেই ক্রস চিহ্ন রয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলায় উল্টো ওই শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পরবর্তী সময়ে টিএসসি কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা প্রাথমিকভাবে অভিযোগ নাকচ করলেও ঘটনাটি তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই ঘটনা প্রসঙ্গে নিজের বক্তব্য জানান।
তিনি বলেন, গত ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের দিন আনুমানিক বেলা ১১টা নাগাদ টিএসসি কেন্দ্র থেকে কেন্দ্র প্রধান আমাকে ফোনে জানান যে, একজন ছাত্রী (ভোটার) এক নম্বর টেবিল থেকে ব্যালট গ্রহণ করে বুথে প্রবেশ করেন। প্রায় এক মিনিটের বেশি সময় পর তিনি বুথ থেকে বের হয়ে দাবি করেন যে, তার একটি ব্যালটে দুটি প্রার্থীর পক্ষে পূর্ব থেকেই ক্রস চিহ্ন দেওয়া ছিল।
তিনি আরও বলেন, ওই ছাত্রী উক্ত ব্যালটে ভোট প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানান। পরবর্তী সময়ে সেখানে উপস্থিত পোলিং অফিসার এবং ভোট ব্যবস্থাপকদের সহায়তায় তার কাছ থেকে চিহ্নিত ব্যালটটি সংগ্রহ করে আলাদা একটি প্যাকেটে সংরক্ষণ করা হয় এবং তাকে নতুন করে ব্যালটের ১ নং পাতাটি প্রদান করা হয়। পরে তিনি পুনরায় বুথে প্রবেশ করে ভোট দেন এবং চলে যান।
অধ্যাপক জসীম জানান, ঘটনার বিষয়ে অবহিত হওয়ার পরপরই আমি চিহ্নিত ব্যালটটি সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেই এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠনের অনুরোধ জানাই। পরে সেখানে উপস্থিত তিনজন শিক্ষককে আমরা ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি এবং তাদের বর্ণনার সঙ্গে কেন্দ্র প্রধানের বক্তব্যের মিল পাওয়া যায়। ফলে ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবে মীমাংসিত হয় এবং প্রচলিত নিয়ম ও প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।
চিফ রিটার্নিং অফিসার বলেন, পরবর্তী সময়ে আমাদের হাতে ঘটনাটির ভিডিও ফুটেজ আসে। ফুটেজ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট ছাত্রী চারবার বুথে প্রবেশ করেন। প্রথমবার আনুমানিক ৪০ সেকেন্ড, দ্বিতীয়বার আনুমানিক ৬৬ সেকেন্ড, তৃতীয়বার আনুমানিক ২ সেকেন্ড এবং চতুর্থবার আনুমানিক ১০ মিনিটেরও বেশি সময় বুথে অবস্থান করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ভোট দিয়ে কেন্দ্র ত্যাগ করেন।
চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ভোটকেন্দ্রে তার বারবার বুথে প্রবেশ ও বের হওয়া এবং সেখানে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতা আমাদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ও সন্দেহজনক বলে মনে হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এসএআর/এমজে