ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ সাইবার নিপীড়নের মঞ্চে পরিণত হয়েছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নারী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সাইবার বুলিং ও অনলাইন হয়রানির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে বামপন্থি ছাত্র সংগঠন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বরাবর এ অভিযোগপত্র জমা দেন সংগঠনের নেতারা।
অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পর সংগঠনের সভাপতি নুজিয়া হাসিন রাশা সাংবাদিকদের বলেন, আজ আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) বিদিশা ম্যামের কাছে একটি অভিযোগপত্র জমা দিতে এসেছি। আমাদের এ অভিযোগের বিষয়টি হলো সাইবার বুলিং ও অনলাইন হয়রানির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি। বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমরা বারবার প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি– একটি কার্যকর যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল এবং অ্যান্টি-বুলিং ও অ্যান্টি র্যাগিং সেল গঠন করার জন্য।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসন জানিয়েছে যে তারা ইতোমধ্যে সব অনুষদের ডিনদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রত্যেকটি অনুষদে অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই সিদ্ধান্ত জুলাই মাসে নেওয়া হলেও আজ নভেম্বরের ৪ তারিখ পর্যন্ত আমরা কোনো অনুষদে অভিযোগ বাক্স স্থাপিত হতে দেখিনি।
নুজিয়া হাসিন রাশা বলেন, সম্প্রতি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে, যা কার্যত একটি সাইবার নিপীড়নের মঞ্চে পরিণত হয়েছে। সেখানে নিয়মিতভাবে নারী শিক্ষার্থী ও নারী শিক্ষকদের ট্যাগ করে অপমানজনক মন্তব্য, স্ল্যাট-শেমিং ও চরিত্র হননের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা সেই প্ল্যাটফর্ম থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন স্ক্রিনশট এবং সংশ্লিষ্ট আইডি মালিকদের নাম ও বিভাগসহ তথ্য আজ প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি। আমরা আশা করছি, প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।
তিনি আরও বলেন, এ অভিযোগের পরও যদি প্রশাসন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তাহলে আমরা স্পষ্টভাবে বলব– এই বিশ্ববিদ্যালয় নারীদের ওপর নিপীড়ন ও হয়রানিকে পরোক্ষভাবে সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা করছে।
এসময় বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি সম্প্রতি লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর শেহরীন আমিন ভূঁইয়াকে লক্ষ্য করে হওয়া সাইবার বুলিংয়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি হঠাৎ তৈরি হয়নি, এর পেছনে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের নীরবতা ও উদাসীনতাই দায়ী। প্রশাসনিক বিলম্ব ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করছে।
নুজিয়া হাসিন রাশা বলেন, ‘আমরা আগামী ১৪ নভেম্বর আবার প্রশাসনের কাছে উপস্থিত হয়ে এ অভিযোগগুলোর অগ্রগতি ও ফলোআপ জানতে চাইব। যারা নারী শিক্ষার্থী বা শিক্ষককে অপমানজনক মন্তব্য করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শোকজ নোটিশ পাঠাবে। যদি তা না করা হয়, তাহলে আমরা বাধ্য হব এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে যে– ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নারী নিপীড়নের এক আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে।’
এসএআর/এসএসএইচ