৪৩ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণের নায়ক ঢাবির আরাফাত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে চান্স প্রাপ্ত আর্থিকভাবে অসচ্ছল ৪৩ শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়েছেন ঢাবির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও সেভ দ্য টুমরো ফাউন্ডেশনের ক্যাম্পাস শাখার সাধারণ সম্পাদক আরাফাত চৌধুরী।
জানা গেছে, যেসব শিক্ষার্থী এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছেন কিন্তু অর্থাভাবে ভর্তি হতে পারছে না, তাদেরকে সহযোগিতার লক্ষ্যে আরাফাত চৌধুরী একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানান যে, যাদের সত্যিকার অর্থেই ভর্তির জন্য অর্থের প্রয়োজন তারা ইনবক্স ও প্রদত্ত ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করে দেবেন। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি এ পর্যন্ত ৪৩ জন শিক্ষার্থীর ভর্তির ব্যবস্থা করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপকারভোগী ফিন্যান্স বিভাগের এক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ফিন্যান্স বিভাগে চান্স পেয়েছি। কিন্তু আমার রিকশাচালক বাবার পক্ষে ভর্তির জন্য এত টাকা একসঙ্গে যোগাড় করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তীতে এলাকার এক ভাইয়ের পরামর্শে আরাফাত ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে সবকিছু খুলে বলি। তিনি একদিনের মধ্যে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেন।
কম্পিউটার সাইন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে চান্সপ্রাপ্ত উপকারভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার বাবা নেই, কিন্তু মা অনেক কষ্ট করে গার্মেন্টসে কাজ করে লেখাপড়া করিয়েছেন। কিন্তু যখন শুনেছি ঢাবিতে ভর্তির জন্য এত টাকা একসঙ্গে লাগবে, তখন এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন হয়তো স্বপ্নই থেকে যাবে। আত্মীয়-স্বজনের কাছে বারবার অনুরোধ করেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। পরে আমি আরাফাত ভাইয়াকে মেসেজ পাঠাই। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেন ও পরের দিনই ভর্তির সব টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দেন। স্বপ্ন পূরণের জন্য আরাফাত ভাইয়ার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ।
আরাফাত চৌধুরীর এই অনন্য উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র কাজী শিহাব উদ্দিন তৈমুর বলেন, আমার পরিচিত বেশ কয়েকজন বন্ধু মেধাতালিকায় স্থান পাওয়ার পরেও অর্থাভাবে ঢাবিতে ভর্তি হতে পারছিল না। পরে আরাফাত ভাইয়ের ফেসবুক পোস্ট দেখে বন্ধুদের সহযোগিতার জন্য উনাকে মেসেজ করি। ভাই তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দিয়ে বন্ধুদের ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরাফাত ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনেকের কাছে একটি স্বপ্নের নাম। প্রতি বছর অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ যোগাড় করতে সক্ষম হয় না। তাদের এই স্বপ্ন যেন অর্থাভাবে ভেঙে না যায় সে লক্ষ্যে আমি চেষ্টা করেছি তাদের পাশে থেকে স্বপ্ন পূরণের সঙ্গী হতে।
কীভাবে সহযোগিতা করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভাই ও আপু যারা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ে রয়েছেন তাদেরকে সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করি। পরবর্তীতে তারা ভর্তিচ্ছুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় অর্থ মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেন।
এর আগে করোনার কারণে সংকটে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী। ওই সময় ‘ভালোবাসার ঈদ উপহার’ নামে আর্থিকভাবে অসচ্ছল ১০০ ঢাবি শিক্ষার্থীর মাঝে প্রায় দুই লাখ টাকার ঈদ উপহার দিয়েছিলেন তিনি।
এইচআর/ওএফ