পাকুন্দিয়ায় বর্তমান ও সাবেক এমপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় শনিবার (২৬ মার্চ) সকালে স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচিতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের এমপি নূর মোহাম্মদ ও সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দিনের কর্মী-সমর্থকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এ সময় পুলিশ সদস্যসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারো নাম পরিচয় জানা যায়নি।
মহান স্বাধীনতা দিবসে আনন্দ মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ফুল দেয়ার প্রস্তুতিকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরেই উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি এবং বর্তমান এমপি পুলিশের সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদের সমর্থকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
এসব ঘটনাকে কেন্দ্র গতকাল শুক্রবার (২৫ মার্চ) বিকেলে পাকুন্দিয়ায় এমপি নূর মোহাম্মদের সমর্থকরা সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দিনের নামে বিভিন্ন স্লোগানসহ স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার হুমকি দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে।
এ ঘটনার জের ধরেই সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দিনের ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য এস এম তৌফিকুল হাসান (সাগর) রাত ৭টা ৪৩ মিনিটে তার ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন।
সেখানে তিনি লিখেন, মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঘোষিত পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক আয়োজিত আনন্দ র্যালিতে যদি কোনো লাশ পড়ে, তাহলে সেই লাশের জানাজা হবে গণভবনে। তার এমন ফেসবুক পোস্ট দেখে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
এদিকে, শনিবার মহান স্বাধীনতা দিবসের সকাল থেকে এমপি নূর মোহাম্মদের সমর্থকরা বল্লম, রাম দা, রড, হকিস্টিক, হলঙ্গা, সুরকিসহ বিভিন্ন প্রকার দেশীয় অস্ত্র নিয়ে উপজেলা সদরে জড়ো হতে থাকে। এ সময় সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দিনকে যুদ্ধাপরাধী-রাজাকার হিসেবে স্লোগান দিয়ে তাদের আগমন পথে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে তারা। এমন পরিস্থিতিতে দুপুর ১২টার দিকে ব্যাপক লাঠিচার্জ এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বর্তমান এমপির সমর্থকদের অবরোধ কর্মসূচি পণ্ড করে দেয় পুলিশ।
এর ফাঁকে সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দিন তার সমর্থকদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দ্রুততম সময়ে কর্মসূচি সমাপ্ত করে চলে যান।
এ ব্যাপারে বর্তমান এমপির সমর্থক হিসেবে পরিচিত বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এবং পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রফিকুল ইসলাম রেনু বলেন, সাবেক এমপি রাজাকার সোহরাব তার সমর্থকদের সঙ্গে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে উপজেলা সদরে প্রবেশ করে আমাদের ওপর হামলা চালাতে এসেছিল। আমরা শুধু প্রতিরোধের চেষ্টা করেছি।
সাবেক এমপি এবং বর্তমান পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন দাবি করে বলেন, তিনি তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচিতে শান্তিপূর্ণভাবে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে আসেন। কিন্তু বর্তমান এমপির সশস্ত্র সমর্থকরা তাতে বাধা দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছে।
ফেসবুকে পোস্ট দেয়া বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এস এম তৌফিকুল হাসান (সাগর) ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল আমরা শুনেছি যে বিরোধী গ্রুপের লোকজন আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার জন্য বাইরে থেকে লোকজন ও অস্ত্র এনেছে। তাই আমি প্রতিপক্ষকে হুঁশিয়ারি দিয়ে এমন পোস্ট দিয়েছিলাম। আজকে তারা আমাদেরকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু পুলিশ প্রশাসন তাদের সেই চেষ্টা বানচাল করে দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কিশোরগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আল আমিন হোসাইন বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং উপজেলা সদরের মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এসকে রাসেল/এমএএস