সন্তানের জন্য দুধ কিনতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন মা

দুই বছরের সন্তান ইব্রাহীমের জন্য দুধ কিনতে গিয়েছিলেন মা তানিয়া সুলতানা। কিন্তু দাম বেশি হওয়া কিনতে পারেননি তিনি। সেদিন বাড়ি ফিরে সন্তানকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কেঁদেছেন তানিয়া। পুত্রবধূর এমন কান্না দেখে কেঁদেছেন অসহায় বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়িও। কিন্তু তাদেরও যে কোনো উপায় নেই। কারণ, তারাও সন্তানের আয়ের ওপর নির্ভরশীল।
অন্যদিকে, ৪ মাস হলো শিশু ইব্রাহীমের বাবা জুয়েল মির্জা তনু বেতন পান না। ৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছেন তিনি। জুয়েল মির্জা তনুর বাড়ি বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের রাধাবল্লব গ্রামে।
এদিকে, জন্মের পর থেকেই ইব্রাহীম অসুস্থ। ভালোভাবে হাঁটতে পারে না সে। তবে ডাক্তার বলেছেন, উপযুক্ত চিকিৎসা পেলে ভালো হয়ে উঠবে সে। কিন্তু সামাজিক বন বিভাগের বনায়নের গাছের পরিচর্যা ও নিরাপত্তার কাজ করা বাবার পক্ষে সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় খাবারের ব্যবস্থা যেখানে দুঃসাধ্য, উন্নত চিকিৎসা সেখানে অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
তবুও হতদরিদ্র বাবা ধার-দেনা করে বিভিন্ন সময় বাগেরহাট, খুলনা, ঢাকায় ডাক্তার দেখিয়েছেন ইব্রাহীমকে। অবস্থার পরিবর্তনও হচ্ছে তার। কিন্তু অর্থাভাবে তিন মাস ধরে ইব্রাহীমকে ডাক্তার দেখানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের প্রতি সাহায্যের অনুরোধ জানিয়েছেন শিশুটির বাবা-মা।
ইব্রাহীমের মা তানিয়া সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ছেলেটা জন্মের পর থেকেই অসুস্থ। হাঁটতে পারে না। কথা বলতে পারে না। চিকিৎসা করানোর সামর্থ্যও আমাদের নেই। ওর বাবা এহেন-ওহেনে কাজ করে যা পায় তা দিয়ে ঠিকমতো খাবারই জোটে না। চিকিৎসা করাব কি দিয়ে? একটু দুধ-ডিম বাচ্চাটারে খাওয়াইতে পারি না। বাচ্চাটা প্রায় খাবারের জন্য কাঁদে।
আগের দিন (শুক্রবার) দুধ আনতে যাই। কিন্তু টাকা না থাকায় দুধ আনতে পারিনি। খালি হাতে আসার পর ছেলেটা আমার মুখের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে ছিল, আমি কান্না আটকাতে পারিনি। এই বলে আবারও কাঁদতে থাকেন তানিয়া।
প্রতিবেশী রঞ্জিতা পাল বলেন, পরিবারটি সত্যিই খুব অসহায়। তনুর (জুয়েল মির্জা) ছেলে জন্মের থেকে অসুস্থ। ওর বাবাও অসুস্থ দীর্ঘদিন। যে আয় করে তা দিয়ে সংসারই ঠিকমতো চলে না। চিকিৎসা করাবে কীভাবে। আমরা এলাকাবাসী মাঝে মাঝে একটু খাবার, সামান্য টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্যে করি। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা নিত্যান্তই অপ্রতুল। এ অবস্থায় সমাজের বিত্তবানদের পরিবারটির প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর অনুরোধ জানান তিনি।
ইব্রাহীমের দাদি শ্যামলী বেগম বলেন, রমজানের আগে হোটেলে একটু কাজ করতাম। এখন সেই কাজও নেই। ৫ সদস্যের ভরণ-পোষণ ছেলের করতে হয়। তারপরে আবার দুইজনের চিকিৎসার ব্যয়। আমি নিজেও অসুস্থ। আমরা খুব অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছি।
শিশু ইব্রাহীমের বাবা জুয়েল মির্জা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, চার মাস ধরে বেতন পাই না। ঘরে চাল নেই। বাড়ি গেলেই বাচ্চাটা কান্নাকাটি করে। ওর জন্য একটু খাবার কেনার টাকাও আমার কাছে নেই। চিকিৎসা করাব কীভাবে? এই যে ঈদ চলে আসল বাচ্চা ছেলেটার জন্য একটা ড্রেস কিনতে পারলাম না। বৃদ্ধ বাবা-মাকেও কিছু কিনে দিতে পারিনি। আমি এক হতভাগা সন্তান, হতভাগা বাবা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
কাড়াপাড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় সামর্থ্য অনুযায়ী অসুস্থ ইব্রাহীমকে সাহায্যের চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি তার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলেছি। তবে শিশুটির সুস্থ হতে যে অর্থের প্রয়োজন তা যোগাড়ের সামর্থ্য পরিবারটির নেই। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে হয়তো শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠবে।
বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, আপনার মাধ্যমে শিশুটির অসুস্থতার কথা শুনলাম। আমরা দ্রুতই তার খোঁজখবর নেব। এছাড়া চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে ইব্রাহীমকে যথা সম্ভব সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি।
তানজীম আহমেদ/এমএএস