কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার পিবিআই পরিদর্শকের

খুলনায় আলোচিত কলেজছাত্রী ধর্ষণ মামলার আসামি পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক মঞ্জুরুল হাসান মাসুদ নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। খুলনা থানার সাবেক এএসআই মিরান শেখ এ মামলায় পরিকল্পিতভাবে তাকে ফাঁসিয়েছে বলে অভিযোগ করছেন তিনি।
সোমবার (৩০ মে) খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক মঞ্জুরুল হাসান মাসুদ এ অভিযোগ করেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এএসআই মিরান শেখ।
পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক মঞ্জুরুল হাসান মাসুদ জানান, গত ১০ মে দুপুর পৌনে ১টার দিকে অজ্ঞাত মোবাইল থেকে তার কাছে একটি ফোন আসে। অপরপ্রান্ত থেকে একটি মেয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি পিবিআই ইন্সপেক্টর মাসুদ বলছেন?’ উত্তরে তিনি বলেন হ্যাঁ। মেয়েটি জানান, তার আইডি হ্যাক করে কিছু অপ্রীতিকর ছবি ইন্টারনেটে আপলোড করা হয়েছে। এরপর তাকে অফিসে আসতে বলেন মাসুদ। দুপুর দেড়টার দিকে অফিসে আসেন আভিযোগকারী মেয়ে। ছবিগুলো দেখানোর কথা বললে অপারগতা জানান তিনি।
মাসুদ জানান, তিনি ওই মেয়েকে আদালতে গিয়ে মামলা করার পরামর্শ দেন। এরপর দুদিনের ছুটি নিয়ে তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যান। ১৫ মে দুপুরে তিনি পিবিআই ইন্সপেক্টর অ্যাডমিন লুৎফর রহমানের সঙ্গে একটি মামলার বিষয়ে আলাপ করার সময় মেয়েটি আবারও ফোন দিয়ে ধর্মসভা মন্দিরের কাছে আসতে অনুরোধ করেন। সেখানে গিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করেন মাসুদ। এরপর মেয়েটি এসে তাকে জানান, ছবি আপলোড দেওয়া ছেলেগুলো ছোট মির্জাপুরে আড্ডা দিচ্ছে।
মাসুদ তাকে নিয়ে সেখানে যান। রয়েল স্টুডিওর সামনে গিয়ে মেয়েটি একটি গলিতে নিয়ে মাসুদকে বলেন, ছেলেগুলো এখানে আড্ডা দেয়। গতকালও তাদের এখানে দেখা গেছে। তার কথার সাথে কাজের মিল না থাকায় কয়েকটি প্রশ্ন করার পর মেয়েটি রেগে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
পরে মোটরসাইকেলযোগে পিবিআই অফিসে ফিরে আসলে খুলনা থানা থেকে জানানো হয় তার বিরুদ্ধে ৯৯৯ থেকে একটি মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ এসেছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, মামলা দায়েরের পর জানতে পারলাম এই মেয়েটি খুলনা থানার সাবেক এএসআই মো. মিরান শেখের পূর্ব পরিচিত। কখনো তাকে স্ত্রী আবার কখনো বোনের পরিচয় দেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। যা খোঁজ নিলে জানা যাবে।
তিনি আরও বলেন, এএসআই মিরান শেখ তার কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা ধার নিয়েছেন। একাধিকবার ওয়াদাবদ্ধ হয়ে টাকা দিতে ব্যর্থ হন তিনি। সর্বশেষ ১০ মে টাকা দেওয়ার দিন ধার্য ছিল। সেদিন ব্যর্থ হওয়ার পর আইনি আশ্রয় নেওয়ার কথা বললে ২৩ মে টাকা পরিশোধ করবে বলে তাকে জানান। কিন্তু টাকা না দেওয়ার উপায় হিসেবে মিরান ওই নারী দিয়ে তাকে ধর্ষণের মিথ্যা কাহিনী সাজিয়েছেন।
আমি গত ২৬ মে দুই সপ্তাহের জামিন পেয়েছি। বর্তমানে আমি জামিনে রয়েছি বলেও জানান পিবিআই পরিদর্শক মাসুদ।
এদিকে খুলনা থানার সাবেক এএসআই মিরান শেখ বলেন, আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে মাসুদ স্যারের কাছ থেকে সুদের ওপর ৫ লাখ টাকা ধার করি। এ বাবদ তাকে খুলনা পুলিশ কমিউনিটি ব্যাংক শিববাড়ি মোড় শাখার একটি খালি চেক প্রদান করি। তিনি সেখানে ১৬ লাখ টাকা লিখেছেন। ইতোপূর্বে তাকে কয়েক লাখ টাকা সুদও দিয়েছি। যা খুলনা থানার কয়েকজন অফিসারও অবগত আছেন।
তিনি আরও বলেন, আমাকে সদর থানা থেকে খালিশপুর থানায় বদলি করা হয়েছে। আমি এখন খালিশপুর থানায় কর্মরত আছি।
মেয়েটির ব্যাপারে জানতে চাইলে এএসআই মিরান শেখ বলেন, ওই মেয়ে কে তা আমি জানি না। এমনকি চিনিও না। মাসুদ স্যার আমার নামে এটি রটিয়েছেন। তিনি টাকা পাবেন ৫ লাখ, আমি অবশ্যই দেব। টাকা দিলেই তো ঝামেলা মিটে যাবে। কিন্তু এ ধরনের কাজ কেন আমি করব? এমন কিছু করলে তো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাকে বরখাস্ত করতেন।
মোহাম্মদ মিলন/আরআই