‘কয়দিন অফিস করছোস তুই, দাঁত ভাইঙ্গা দিমু’

মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদ্য নির্বাচিত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মহীউদ্দীনের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালামের বাগবিতণ্ডা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর দেড়টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে শেখ রাসেল দিবসের আলোচনা সভায় এ ঘটনা ঘটে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মদিন উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগ আনন্দ র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় সদ্য নির্বাচিত মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মহীউদ্দীন গতকালের (১৭ অক্টোবর) জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের বিষয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি তুলনামূলক কম ভোট পাওয়ার জন্য দলের অনৈক্য এবং মতবিরোধকে দায়ী করেন।
সভায় জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা ছাড়াও যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছিলেন। তাদের সবার উপস্থিতিতে ভোটের ব্যবধান বা দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যার বিষয়টি প্রকাশ্যে না বলার জন্য চেয়ারম্যানকে বলেন সাধারণ সম্পাদক। এরপরই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
এদিকে জেলা পরিষদের সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের মধ্যকার বাগবিতণ্ডার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা নানা ধরনের মন্তব্য করছেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, সদ্য নির্বাচিত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মহীউদ্দীন বলছেন- ‘সালাম ভাই আমারে জ্ঞান দিয়েন না তো তাড়াতাড়ি, জ্ঞান দিয়েন না, রাখেন, আরে রাখেন। চুপ, আমি ধমকামু না মানে, তুই কয়দিন অফিস করছোস, কয়দিন অফিস করছোস তুই, দাঁত ভাইঙ্গা দিমু।’
এসব শব্দচয়ন করে তিনি সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় সাধারণ সম্পাদকও তাকে বলেন, ‘আপনি ধমকাইয়েন না, আপনি ধমকান কেন? আস্তে মহীউদ্দীন সাব, কী বলেন আপনি, নিজেকে জানেন।’
ভিডিওতে দেখা যায়, গোলাম মহীউদ্দীন বলছেন- ‘একটা নাম না জানা অখ্যাত লোকের কাছে কনটেস্ট করে আমাকে জিততে হইছে। আমি মনে করি সবটুকু আপনাদের। ওর (চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কে এম বজলুল হক খান) তো অফিস ছিল না, ও তো ক্যানভাস করে নাই, ও কাউরে খাইবার দেয় নাই। ওর জন্য কেউ মিটিং করে নাই, বিএনপি-জামায়াত, জাসদ, জাতীয় পার্টি মাঠে নামে নাই। কোন সে শক্তি, কোন শক্তির বলে ও আমাকে খায়া ফেলছিল প্রায়। আমাকে খাওয়া মানে এইখানে যারা বসা- সালাম ভাই, ফোটো ভাই, হেলাল, বাবলু ভাই, আপেলকে খায়া ফেলাইছে। শুধু তাই নয় আওয়ামী লীগের সভাপতি নেত্রীকে খায়া ফালানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে।
ছোট্ট হলেও আমাদের মধ্যে মতবিরোধ আছে, ক্ষীণ হইলেও অনৈক্য আছে। এই মতবিরোধ আর অনৈক্য নিয়া কি করে আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাহিদ মালেক (স্বাস্থমন্ত্রী), নাঈমুর রহমান দুর্জয় (এমপি) ও মমতাজ বেগমকে (এমপি) আমরা জিতাবো। এ কথা বলা ঠিক না, ১১৭ সিংগাইর আমার বিরোধী শক্তি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদ্য নির্বাচিত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মহীউদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,‘আমি জাইন্যে, আমি জাইন্যে’। এই বলে তিনি কলটি কেটে দেন।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতা বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কয়েকজন নেতা কাজ করেছেন। সভাপতির অভিযোগ সঠিক। তবে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিরোধেরে বিষয়টি আলোচনা সভায় প্রকাশ্য বলা উচিৎ হয়নি।
প্রসঙ্গত, এ বারের মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহীউদ্দিন ৪৫২ ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বারের মত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী কে এম বজলুল হক খান পেয়েছেন ৪২৫ ভোট।
সোহেল হোসেন/আরএআর