৪২ সেতু পেয়ে উচ্ছ্বসিত খাগড়াছড়িবাসী

খাগড়াছড়িতে নবনির্মিত ৪২টি পাকা সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুগুলো উদ্বোধন হওয়ায় অনেক খুশি জেলার সাধারণ মানুষ। সোমবার (৭ নভেম্বর) সকাল ১০টায় জেলা শহরের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সারাদেশের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাঝে এসব সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে এতো সেতু আগে হয়নি। এসব সেতু নির্মাণ হওয়ার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে সড়ক যোগাযোগ নিরাপদ হয়েছে। পাহাড়ের অর্থনীতি এবং পর্যটন খাত আরও বিকশিত হবে।
তিনি আরও বলেন, একসয়ম পার্বত্য এলাকায় মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ছিল না। এটা আমরা ব্যবস্থা করে দিয়েছি। পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য সরকার শান্তিচুক্তি করেছে। এই সেতু নির্মাণের কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহজে যেকোনো ঘটনাস্থলে পৌঁছে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপকারভোগী জুমচাষি অঞ্জলি ত্রিপুরা বলেন, আমদের পাহাড়ের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী শহরে নিতে পারতাম না। শিশুদের স্কুলে যেতে অনেক অসুবিধা হতো। এখন পাকা সেতু হওয়ায় আমরা শহরে সবসময় যাতায়াত করতে পারছি। আমাদের পাহাড়ে ফসল পরিবহনে সহজ হয়েছে। এখন ফসলের ভালো দাম পাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
দুর্গম পাহাড়ি উপজেলা লক্ষছড়ির বাসিন্দা মোবারক হোসেন জানান, খাগড়াছড়ি জেলার সবচেয়ে দুর্গম উপজেলা লক্ষীছড়ি। এখান থেকে জেলা শহরের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। এখানে যে বেইলি ব্রিজগুলো ছিল সেগুলোতে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটতো। পাটাতন খুলে যেত। এতে দীর্ঘ সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকতো। কেউ অসুস্থ হলেও জেলা সদর হাসপাতালে সঠিক সময়ে নেওয়া সম্ভব হতো না। লক্ষীছড়ি থেকে মানিকছড়ি পর্যন্ত ৬টি বেইলি ব্রিজ ছিল। এগুলো পাকা সেতু হওয়ার কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যে জেলা শহর বা বিভাগীয় শহরে যাতায়াত আমাদের অনেক সহজ হয়ে গেছে। এই উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে লক্ষীছড়িবাসী কৃতজ্ঞ।
গাড়িচালক মো. হানিফ বলেন, আমরা কাঁচামালের গাড়ি নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাই। আগের যে পুরোনো বেইলি ব্রিজ ছিল সেগুলোর কারণে অনেক দুর্ঘটনা ঘটতো। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো রাস্তায়। কাঁচামাল অনেক সময় পচে যেত। এই পাকা সেতু হওয়ার কারণে এখন আর আগের মতো সমস্যা হয় না। আমরা সঠিক সময়ে কাঁচামাল নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্য পৌঁছাতে পারি।
খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. খলিলুর রহমান বলেন, পাহাড়ি জেলায় যে বেইলি ব্রিজগুলো ছিল তা ৪ দশক আগের। এগুলো পুরোনো হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সময় সড়কে দুর্ঘটনা ঘটতো। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে যান চলাচল বন্ধ থাকতো। বর্তমান সরকার নতুন পাকা সেতু করে দেওয়ার কারণে এসব দুর্ঘটনা কমে গেছে। সঠিক সময়ে যাত্রীরা তার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে। পাহাড়ি জেলায় মূল সড়কে যে বাঁকগুলো রয়েছে সেগুলো কেটে সোজা করা গেলে সড়ক দুর্ঘটনা আরও অনেক কমে যাবে।
উল্লেখ্য, পাহাড়ের মানুষের ভোগান্তি দূর করতে ২০১৫ সালে বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে আরসিসি গার্ডার বা পাকা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগ। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জরাজীর্ণ পুরোনো সব সেতুর পরিবর্তে তৈরি হয়েছে ৪২টি পাকা সেতু।
আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাসের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উসৈসিং, টাস্কপোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হক প্রমুখ।
মো. জাফর সবুজ/এমজেইউ