নেত্রকোণায় বন্য হাতির তাণ্ডবে অতিষ্ট কৃষকেরা

সন্ধ্যা নামলেই খাবারের সন্ধানে নেত্রকোণার সীমান্তবর্তী এলাকায় ঢুকে পড়ে ক্ষুধার্ত বন্য হাতির দল। এসব হাতির কবল থেকে ফসল রক্ষায় মরিয়া হয়ে ছুটতে হয় সেখানকার বাসিন্দাদের। গত দুই মাস যাবৎ এভাবেই চলছে বন্য হাতির সঙ্গে ওই এলাকার মানুষের জীবন যুদ্ধ। মাঠে খাবার না পেয়ে ক্ষুধার্ত এসব হাতি এখন আক্রমণ করছে বাড়িঘরেও। ইতোমধ্যে দুর্গাপুরের কয়েকটি গ্রামের ৩০টি ঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বন্য হাতির দল।
এছাড়া গত দুই মাসে আমন ফসল রক্ষা করতে গিয়ে বন্য হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন দুই কৃষক। তারা হলেন, কলমাকান্দা বেতগড়া গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম ও দুর্গাপুর উপজেলার পশ্চিম বিজয়পুর গ্রামের আদিবাসী কৃষক বুনেশ রিছিল। গত ৭ ডিসেম্বর রাতে হাতি তাড়াতে গিয়ে আক্রমণের শিকার হন বুনেশ রিছিল। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি মারা যান এবং গত ১৪ নভেম্বর রাতে হাতির কবল থেকে জমির ধান রক্ষা করতে গিয়ে মারা যান কৃষক নুরুল ইসলাম।
এদিকে গত রোববার (১১ ডিসেম্বর) দিনগত রাতেও বন্য হাতির পাল দুর্গাপুর উপজেলার ফারংপাড়া, ফান্দা, ভবানীপুর ও পশ্চিম বিজয়পুরসহ বেশ কিছু গ্রামে হানা দেয়। এতে চরম আতঙ্কের মধ্যে নির্ঘুম দিন রাত পার করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় কৃষক আবুল হাসেম জানান, অর্ধশত বন্য হাতির অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। তাদের ভয়ে রাতে বাড়িঘরে ঘুমাতেও পারছি না। হাতিরা আমাদের জমির ধান, গাছপালা ও বিভিন্ন শাকসবজি খেয়ে শেষ করছে। এখন তারা বাড়িঘরেও হামলা করে।
ক্ষতিগ্রস্ত মনোয়ারা বেগম বলেন, পরশুদিন রাতে হঠাৎ বন্য হাতির আক্রমণে আমাদের ঘরটি ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। ঘরে থাকা সব আসবাবপত্র ভেঙে ধান, চাল খেয়ে গেছে। আমরা গরীব মানুষ। নতুন ঘর করার টাকা নেই। তাই তিন সন্তান নিয়ে এখন অন্যের বাড়িতে বসবাস করছি।
দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীব উল আহসান এ বিষয়ে বলেন, সম্প্রতি বন্য হাতির অত্যাচার বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা স্থানীয় লোকজনকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছি। সাধারণত আমন ধান ঘরে তোলার এই সময়ে বন্য হাতিরা নেমে আসে। আবার কয়েকদিন থেকে চলেও যায়। তবে এ বছর এসব হাতি লোকালয়ে হানা দিয়ে ৩০টি বাড়িঘর ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের সামান্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। পড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের আরও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম বলেন, আমার উপজেলার সীমান্ত এলাকায় বর্তমানে হাতির তেমন কোনো উৎপাত নেই। তবে এখনও কিছু বন্য হাতি ঘোরাফেরা করে বলে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এ জন্য এলাকাবাসীকে সব সময় সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া হাতির আক্রমণে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে সরকারি সহায়তা প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ময়মনসিংহ বন বিভাগের দুর্গাপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, এ সময়ে প্রতি বছরই বন্য হাতি দল খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে প্রবেশ করে জানমালের ক্ষতি করে। তবে এ বছর এসব হাতির উৎপাত একটু বেশি।
জিয়াউর রহমান/আরকে