মোহামেডান ক্লাব গুঁড়িয়ে দেওয়ার ৪৩ দিন পর প্রথম প্রতিবাদ

কোনো উচ্ছেদ নোটিশ না দিয়ে রাতের আঁধারে বরিশালে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে ক্লাব ও মাঠ রক্ষা কমিটি। বরিশাল সিটি করপোরেশন কর্তৃক মোহামেডান ক্লাব গুঁড়িয়ে দেওয়ার ৪৩ দিন পর প্রথম প্রতিবাদ জানাল কেউ।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বরিশাল নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ক্লাব ও মাঠ রক্ষা কমিটির আহ্ববায়ক আমিন উদ্দিন মোহনের সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলার জাতীয় জাগরণের প্রতীক হিসেবে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ১৯৩৭ সালে জমিদার সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরীর ছেলে সৈয়দ ফজলে রাব্বী নগরের বর্তমান সদর রোডে বরিশাল মৌজায় ৩৩ শতাংশ জমি দান করেন।
এসএ, আরএস ও বিএস পর্চা অনুযায়ী ক্লাবের সেক্রেটারির অনুকূলে ৩৩ শতাংশ জমির মালিক। প্রথম দিকে মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবটি মুসলিম ছেলে-মেয়েদের স্বার্থে পরিচালিত হলেও জাতি, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে সার্বজনীন খেলাধুলার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ব্রিটিশ থেকে পাকিস্তান ও স্বাধীনতা পরবর্তী বরিশালের ক্রীড়াঙ্গনে এ ক্লাবটির অবদান অপরিসীম। ১৯৩৮ সালে অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শের-ই বাংলা একে ফজলুল হকের অনুপ্রেরণায় খান বাহাদুর হাসেম আলী খান ও মেছের আলী তালুকদারের চেষ্টায় শহরের বেলস পার্কে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু উদ্যান) বরিশাল মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব ও কলকাতার মোহামেডান ক্লাবের প্রীতি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব মাঠে নিয়মিতভাবে ছেলে-মেয়ে শিশুদের নানা প্রকার খেলা হতো।
ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবটি ১১ জানুয়ারি গভীর রাতে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সব দলিল ও আসবাবপত্র লুট করা হয়েছে। ক্লাবটি গুঁড়িয়ে দেওয়া ও লুট করার দায় কেউ স্বীকার করেনি। বর্তমানে ক্লাবটি নিয়ে নানা অপপ্রচার করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ক্লাব পরিচালনায় যদি কোনো সমস্যা থাকে সেটা সমাধান করা যেত। রাতের আঁধারে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া মহৎ কাজ নয়। এটা বর্বরোচিত ও লোমহর্ষক। ক্লাবটি রক্ষায় ইতোমধ্যে নগরবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আমরা ১০১ সদস্যের কমিটি করেছি। এরপর আগামী ১ মার্চ সকাল ১০টায় মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করব।
আমরা চাই ঐতহ্যিবাহী এই ক্লাবটি সংরক্ষিত থাকুক এবং নগরীবাসী ক্রীড়ার সুযোগ পাক।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন, আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মীর আমিনউদ্দিন মোহন, সাবেক খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠক গাজী সফিউর রহমান দুলাল, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নৃপেন্দ্র নাথ বাড়ৈ, এবায়দুল হক চাঁন, এনায়েত হোসেন শিপলু, বাসদ বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে জমির মালিকানার পর্চা সরবরাহ করা হয়। বরিশাল সদর উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার বিকাশ চন্দ্র হালদার, কপিস্ট কাম বেঞ্চ সহকারী মো. সাইফুল্লাহ ইবনে মঈন ও রেকর্ড কিপার মো. হেমায়েত হোসেন স্বাক্ষরিত পর্চায় দেখা গেছে, জমির মালিক মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব পক্ষে সাধারণ সম্পাদক বরিশাল।
প্রসঙ্গত, ১১ জানুয়ারি রাতে বরিশাল সিটি করপোরেশন ক্লাবটিকে গুঁড়িয়ে দেয়। উচ্ছেদ অভিযানের সময় কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন না। একজন সমালোচিত কাউন্সিলরের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এরপর ১৩ জানুয়ারি এ নিয়ে মুখ খোলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। তিনি এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমএএস